জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘ম্যাকানিজম’ বলে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। তার এই বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টারের। ইতোমধ্যে এ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
সাড়ে চার মিনিটের ওই ভিডিওতে রোশন আলী মাস্টারকে বলতে শোনা যায়, ‘ভোটে আমরা হারিনি। ম্যাকানিজম করে হারানো হইছে। যেকোনও কারণে আমরা রেজাল্ট নিতে পারিনি। ৮২ হাজার ভোট কি কম? এর অনেক ইতিহাস, এগুলো আপনারা বুঝবেন না। আপনাদের ভাইঙ্গা বুঝাইতে অইব। যাদের আমি নেতা বানাইছি তারা আমারে এখন … (আঞ্চলিক গালি) দিয়াও গুণে না। ’
এ সময় তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে করে বলেন, ‘আমাদের দলে অনেক মীরজাফর আছে। এগুলো যুগ যুগ ছিল, থাকবে। তারা যদি ভালো হয়ে যায়, আমরাও ভালো হয়ে যাবো। আর হজ করার পর যদি দেখি ভালো না হইছে তাহলে মাঠে নাইম্যা পড়বো।’
শনিবার (৩০ মার্চ) বিকালে রোশন আলী মাস্টার ওমরা হজ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কায় গমন উপলক্ষে দেবিদ্বার পৌর এলাকার নিজ বাসভবনে এক ইফতার মাহফিলে এই বিতর্কিত বক্তব্য দেন। সে সময় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। তার এ বিতর্কিত বক্তব্যে তাৎক্ষণিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
প্রতিক্রিয়ায় তারা বলেছেন, ‘যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট করে সারা বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, সেখানে তার ওই বক্তব্য সুষ্ঠু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তার ওই বক্তব্যে বর্তমান সংসদ সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ ভোট কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন- এটি তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছেন। আমরা অবিলম্বে এমন বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি, পাশাপাশি তাকে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকেও অব্যাহতির দাবি জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘এর আগেও তার মোবাইল ফোনের অডিও ভাইরাল হয়েছে। তার লাগামহীন এসব কর্মকাণ্ডে দল বিব্রত হচ্ছে। দেশের সাধারণ মানুষ বিব্রত হচ্ছে। মানুষকে ভুল মেসেজ দিচ্ছেন তিনি। সাধারণ মানুষের কাছে আওয়ামী লীগ হাস্যরসের বিষয়ে পরিণত হচ্ছে।’
এই আওয়ামী লীগ নেতা আরও বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের বিভিন্ন সভায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তার নেতাকর্মীদের গালিগালাজ করেও বক্তব্য রেখে বিতর্কিত হন, যা সবাই দেখেছেন ও শুনেছেন। এর আগে বিএনপির এক নেতার সঙ্গে তার ফোনালাপ ফাঁস হয়। ওই ফোনালাপে তাকে বলতে শোনা গেছে, “আওয়ামী লীগ ও নৌকা যারা করে তারা সব রাজাকারের বাচ্চা’’। তার কর্মকাণ্ডে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারাও বিব্রত। আসলে তিনি মাইক হাতে পেলে কী বক্তব্য দেবেন, হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন!’
এ বিষয়ে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টার তার বলে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এই বক্তব্য আমি পজিটিভলি দিয়েছি। নেতাকর্মীদের বুঝানোর জন্য কথার কথায় বলেছি। তারা নিজেদের কাজকর্ম করেনি। নির্বাচনে নানান ধরনের ম্যাকানিজম হয়। ম্যাকানিজম ছাড়া তো নির্বাচন হয় না।’
সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন করেছে বলে দাবি করছে, সেখানে তার এই বক্তব্য নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে কিনা- এমন প্রশ্নে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘এখানে আওয়ামী লীগ নিয়ে বা নির্বাচন নিয়ে কোনও কথা হয়নি। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়নি। আমি বলেছি নেতাকর্মীদের নিয়ে ম্যাকানিজম। অনেক ব্যাপার-স্যাপার যে থাকে, সেটা। তা ছাড়া আমি রেজাল্ট নিয়ে কোনও কথা বলিনি।’
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর রোশন আলীর সঙ্গে বিএনপি নেতা দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. রহুল আমিনের একটি অডিও ফোনালাপ ফাঁস হলে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ওই অডিও কলে তাকে বলতে শোনা গেছে, ‘যারা নৌকা করে, তারা সব রাজাকারের বাচ্চা’। তার শেল্টার নিয়ে বিএনপি যেন আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে নামে সে কথাও বলতে শোনা গেছে। এর প্রতিবাদে সাবেক সংসদ সদস্য রাজী ফখরুলের নেতাকর্মীরা রোশন আলীর মাস্টারের পদত্যাগের দাবিতে ঝাঁড়ু ও জুতা মিছিল এবং তার কুশপুত্তলিকা দাহ করে।