অভিজাত ও শিল্প এলাকার ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিক্রি ও হস্তান্তর ফি বাড়ানোর চিন্তা করছে সরকার। জমি বা ফ্ল্যাটের বর্তমান হস্তান্তর ফি জায়গার অবস্থানের ভিত্তিতে ৬০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। এরআগে গত নির্বাচনের আগের মাসে জমি বা ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনে উৎসে কর কমানো হয়। তবে কিছু কিছু জায়গায় এ ফি কমতেও পারে।
জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিক ফি নির্ধারণ করারও পরিকল্পনা রয়েছে। আগে দেশে এ সংক্রান্ত কোনো ফি ছিল না। সরকারের নন ট্যাক্স রেভিনিউ (এনটিআর) বাড়াতে জমি এবং প্লট, ফ্লোরস্পেসে প্রায় ৬০ শতাংশ থেকে ২০০ শতাংশ কর বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)। এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব মতামতের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সর্বশেষ ২০১৬ সালের জুলাই মাসে দেশে জমি আর ফ্ল্যাটের হস্তান্তর ফিসহ অন্যান্য ফি বাড়ানো হয়েছিল। দেশে মূল্যস্ফীতি অনেক গুণ বেড়েছে। এনটিআর অনুবিভাগ গত বছরের অক্টোবর মাসে এসব ফি’র হার যৌক্তিক হারে নির্ধারণের জন্য একটা কমিটি করে। সেই কমিটি গত বছরের ডিসেম্বরে সভা করে এসব ফি ৬০ শতাংশ থেকে ২০০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এনটিআরের প্রস্তাবটি এরই মধ্যে অনুমোদন দিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
প্রস্তাব অনুসারে, ধানমন্ডি এলাকার প্লট বা জমির বাণিজ্যিক ফি ধরা হয়েছে ৫ লাখ টাকা। আর ধানমন্ডির আবাসিক এলাকায় বর্তমান ফি থেকে এক লাখ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা, যা শতকরা হারে বেড়েছে প্রায় ৬৩ শতাংশ। ধানমন্ডি এলাকার ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট-ফ্লোর স্পেস-দোকান প্রতি বর্গফুট ১০০ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৬০ টাকা। ওই এলাকার বাণিজ্যিক হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০০ টাকা। যা আগে ছিল ৪০০ টাকা, অর্থাৎ ১৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
এছাড়া তেজগাঁও শিল্প এলাকার শিল্প প্লট বা জমির ফি ধরা হয়েছে ৩ লাখ টাকা। আর বাণিজ্যিক প্লটের ক্ষেত্রে বর্তমান ফি থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে। শতাংশ হারে যা বেড়েছে প্রায় ১০০ শতাংশ। অন্যদিকে বাণিজ্যিক প্লটের ফি ৫ লাখ টাকা করা হয়েছে।
তেজগাঁও এলাকার ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট-ফ্লোর স্পেস-দোকান প্রতি বর্গফুট ৪০০ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০০০ টাকা। শতকরা হারে বেড়েছে ১৫০ শতাংশ। শিল্প প্লটের ফি হবে ৮০০ টাকা।
প্রস্তাবে বলা আছে, খিলগাঁও পুনর্বাসন এলাকায় ( ১০০ ফুট রাস্তার পাশে) প্লট বা জমির আবাসিক ফি হবে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অর্থাৎ, ওই এলাকায় বর্তমান ফি থেকে ৮৭.৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সেখানকার বর্তমান ফি ৮০ হাজার টাকা। বাণিজ্যিক এলাকার ফি ধরা হয়েছে দুই লাখ টাকা। একই এলাকার ফ্ল্যাট-এ্যাপার্টমেন্ট-ফ্লোর স্পেস-দোকানে প্রতি বর্গফুটের ফি ধরা হয়েছে ২০০ টাকা। বাণিজ্যিক হার করা হয়েছে ৫০০ টাকা।
এদিকে মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় প্লট বা জমির বাণিজ্যিক ফি ধরা হয়েছে ২০ লাখ টাকা। আর এই এলাকায় বর্তমান ফি থেকে ১০০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে ফি ১০ লাখ টাকা। একই এলাকার ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট-ফ্লোর স্পেস-দোকানে প্রতি বর্গফুটের ফি হবে ১২০০ টাকা। আগে এই হার ছিল ৪০০ টাকা। শতকরা হারে মতিঝিল এলাকার ফি বেড়েছে ২০০ শতাংশ।
রাজধানী ঢাকার বাইরে চট্রগ্রামের আবাসিক এলাকার প্লট বা জমির আবাসিক ফি ধরা হয়েছে ২ লাখ টাকা। যা বর্তমানে রয়েছে ১ লাখ টাকা। অর্থাৎ ফি বেড়েছে ১০০ শতাংশ। এছাড়া বাণিজ্যিক এলাকার ফি ধরা হয়েছে ৬ লাখ টাকা। একই এলাকার ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট-ফ্লোর স্পেস-দোকানের প্রতি বর্গফুটে ফি হবে ২০০ টাকা।
কক্সবাজার আবাসিক এলাকায় এলাকার প্লট বা জমির আবাসিক ফি ১৫০ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বাণিজ্যিক এলাকার ফি ধরা হয়েছে দুই লাখ টাকা। একই এলাকার ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট-ফ্লোর স্পেস বা দোকানের প্রতি বর্গফুটের ফি হবে ৪০০ শত টাকা।
এদিকে, গত বছরের ডিসেম্বরে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্রগ্রাম জেলার যেসব এলাকায় সরকারি বা কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি, সেসব এলাকার জন্য জমির নিবন্ধনে উৎসে কর কাঠাপ্রতি ৩০,০০০ টাকা কমায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভার ও ধামরাই উপজেলার সকল মৌজায় কাঠাপ্রতি সর্বোচ্চ উৎসে কর এখন ৫০,০০০ টাকার পরিবর্তে হবে ২০,০০০ টাকা।
চট্রগ্রামের খুলশী, পাঁচলাইশ, পাহাড়তলী, হালিশহর ও কোতোয়ালি মৌজায় একই শ্রেণির জমির জন্য সর্বোচ্চ উৎসে কর প্রতি কাঠায় ৫০ হাজার টাকায় নেমে এসেছে।