Sunday, June 29, 2025

অভিযোগে ‘ষড়যন্ত্র’ দেখছেন আছাদুজ্জামান মিয়া, কী করবে দুদক?


প্রায় এক মাস ধরে সংবাদ মাধ্যম ও সোশাল মিডিয়ায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিপুল পরিমাণ সম্পদ নিয়ে আলোচনা চলছে। এরইমধ্যে গত ২৭ জুন সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী তার বিপুল পরিমাণ সম্পদের উৎস খুঁজে দেখতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আবেদনও করেছেন। ২ জুলাই এ বিষয়ে নিজেদের বৈঠকে আলাপও করেছে দুদক। কিন্তু তার বিষয়ে অনুসন্ধান চালানো হবে কিনা, এ সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেই এখনও। সাংবাদিকদেরও আছাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান নিয়ে কিছু জানাচ্ছে না দুদক। 

মঙ্গলবার (২ জুলাই) কমিশনের সর্বশেষ বৈঠকে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তা মতিউর রহমানের সম্পদ বিবরণী চেয়ে নোটিশ জারির সিদ্ধান্ত নেন দুদক কর্তারা। বৈঠকে আছাদুজ্জামান মিয়াসহ সরকারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের ব্যাপক দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। তবে আছাদুজ্জামান মিয়ার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত ছিল কমিশন।

আছাদুজ্জামান মিয়া অবসরে যাওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত সেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি পুরোপুরি অবসরে আছেন।

২৭ জুন দুদকে যে আবেদন জমা পড়ে সেখানে উল্লেখ করা হয়, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বাবা তোফাজ্জল হোসেন মিয়া কৃষিজীবী ছিলেন। তার কিছু জমিজমা থাকলেও এর বাইরে কোনও ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল না। তার পাঁচ মেয়ের সবাই নিম্ন-মধ্যবিত্ত। তাদের বিয়েও হয়েছে পারিবারিকভাবে সচ্ছল নয় এমন পরিবারে। কিন্তু আছাদুজ্জামান মিয়া পুলিশের চাকরির সুবাদে যে পরিমাণ বেতন-ভাতা ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি পেয়েছেন (আনুমানিক ২ কোটি টাকা), তার থেকে অন্তত কয়েক হাজার গুণ বেশি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এবং যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে জমি, বাড়ি ও ফ্ল্যাট কিনেছেন। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা ও ডলার আমানত রেখেছেন নামে-বেনামে। এমনকি সুইস ব্যাংকেও তার অন্তত ১০ কোটি ডলার আমানত আছে।

আবেদনে আরও বলা হয়, আছাদুজ্জামান মিয়া শুধু নিজ নামেই নয়, স্ত্রী আফরোজা জামান, দুই ছেলে আসিফ শাহাদাত ও আসিফ মাহাদীন এবং মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকার নামে দেশে-বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। এছাড়া তার শ্যালক-শ্যালিকাসহ আত্মীয়-স্বজনদের নামেও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ গড়েছেন। 

আছাদুজ্জামান মিয়ার সম্পদ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর গত ২০ জুন সাংবাদিকরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যখন অবসরে যাচ্ছেন, তখন তাদের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আপনি দায় এড়াতে পারেন কিনা। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি যতটুকু জানি এখন পর্যন্ত অনুমানভিত্তিক কথাবার্তা চলছে। সুনির্দিষ্টভাবে এখনও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। যেগুলো শুনছি তার এত সম্পদ আছে। কিন্তু তাকে তো এখনও ডাকা হয়নি। তাকে ডাকা হলে তখন বুঝতে পারবো। নিশ্চয়ই তার কোনও জবাব আছে। নিশ্চয়ই তার কোনও আয়ের সোর্স আছে। তাকে তো সুযোগ দিতে হবে তার বক্তব্য জানার জন্য। সুযোগ পেলে অবশ্যই সে বলবে তার সম্পদ কতখানি বৈধ, কতখানি অবৈধ। বৈধভাবে সে কতখানি সম্পদ বৃদ্ধি করেছে। তিনি যদি জবাব দিতে পারেন তাহলে এসব প্রশ্ন মিটমাট হয়ে যায়। যদি জবাব দিতে না পারেন, তাহলে আমরা বলতে পারবো তিনি দুর্নীতিবাজ। তিনি অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এর আগে এসব বলার সুযোগ নেই।

বাংলা ট্রিবিউনকে যা বললেন আছাদুজ্জামান মিয়া

বিপুল পরিমাণ সম্পদের বিষয়ে সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অন্যদের সম্পদের খতিয়ান বের হয়েছে একরে একরে। আর আমার সম্পদের তথ্য দেওয়া হয়েছে শতকে। আমার বিষয়ে লেখা হয়েছে ২৬৭ শতক জমি আছে। অন্যদের শত শত একর জমির তথ্য বেরিয়েছে। ৩২ বছর সরকারি চাকরি করেছি। পৈতৃক সম্পত্তি আছে। উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পেয়েছি। দীর্ঘদিন জাতিসংঘ মিশনে কাজ করেছি। কখনও অনিয়মের সঙ্গে ছিলাম না। আয়ের সঙ্গে যদি সম্পদের সঙ্গতি থাকে তাহলে অপরাধটা কোথায়।’

বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার খবরে পুলিশের এই কর্মকর্তা আক্ষেপ করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তিনি মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার। পরশ্রীকাতরতার শিকার। নিজেকে নিরীহ দাবি করে তিনি বলেন, ‘নিরীহ মানুষকে দোষারোপ করাও একটা অপরাধ’। তার সব বিষয়ে সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে। আবারও যদি সরকারের কোনও সংস্থা তার সম্পদের হিসাব চায়, তাহলে সেখানেও তিনি দিতে প্রস্তুত আছেন। তবে সময় হলে আইনের আশ্রয় নেবেন বলেও জানান তিনি।

সম্পদের অনুসন্ধান চেয়ে দুদকে সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবীর আবেদন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, এটি তার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের একটি অংশ।

অভিযোগকারীর ভাষ্য

আছাদুজ্জামান মিয়ার বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি একজন আইনজীবী ও সচেতন নাগরিক হিসেবে দুদকে আবেদন করেছি। এর আগেও পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে অন্য অনেকের সম্পত্তি অনুসন্ধানের জন্য আবেদন করেছি। সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সম্পত্তি অনুসন্ধানের জন্যেও আবেদন করেছি। এখন আছাদুজ্জামান মিয়ার সম্পত্তি বৈধভাবে অর্জিত হলে তিনি দুদক থেকে দায়মুক্তি পেয়ে যাবেন।’

সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মঙ্গলবার (২ জুলাই) এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন সাংবাদিকদের বলেন, আছাদুজ্জামান মিয়ার বিষয়ে কমিশনের বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। যদিও এর আগে তিনি অন্য এক ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, আছাদুজ্জামান মিয়ার বিষয়ে কমিশনের পরবর্তী বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হয় সেটা জানানো হবে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অনেক কিছুই দালিলিক প্রমাণসহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। দুদকের মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য এগুলো সুবর্ণ সুযোগ। এত সুনির্দিষ্ট তথ্য নিয়ে যে বিষয়গুলো উদঘাটিত হয়েছে সেগুলো সামনে রেখে দুদক অবৈধ সম্পদের হিসাব চাইতে পারে। প্রসিকিউশনের দিকে যেতে পারে। তাহলে দুদকের ওপর মানুষের আস্থা বাড়বে। 

আরও পড়ুন- 

আছাদুজ্জামান মিয়ার তথ্য ফাঁস করায় পুলিশের এডিসি বরখাস্ত

বেনজীর ও আছাদুজ্জামান মিয়ার সম্পদ নিয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

 




👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles