Friday, May 17, 2024

পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল


অবশেষে শুরু হচ্ছে খুলনা-মোংলা রেলপথে ট্রেন চলাচল। এর মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৭৩ বছর পর রেল যোগাযোগে যুক্ত হবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা।

বুধবার (০১ মে) বিকালে বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান ও পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের (পাকশী) বিভাগীয় প্রকৌশলী বীর বল মন্ডল। 

প্রকল্পের পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ‘খুলনা-মোংলা রেলপথের বিভিন্ন ধাপের ফিনিশিংয়ের কিছু কাজ বাকি ছিল। সেগুলো সম্পন্ন করা হয়েছে। চূড়ান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষাও শেষ। বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচলের জন্য পথটি উপযোগী করে তোলা হয়েছে। তবে স্থায়ী জনবল নিয়োগের বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে। এজন্য অস্থায়ী জনবল দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরুর জন্য পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের (পাকশী) বিভাগীয় কর্মকর্তাদের কাছে সবকিছু বুঝিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসের যেকোনো দিন খুলনা-মোংলা রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।’

এদিকে, ট্রেন চলাচল শুরুর জন্য মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বিকালে খুলনা থেকে মোংলা রেলপথের চূড়ান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। রেলওয়ের কর্মকর্তারা রেলপথের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) ও প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) এ এম সালাহ উদ্দীন, প্রধান যান্ত্রিক প্রজেক্ট মুহাম্মদ কুতরত-ই-খুদা, প্রধান বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, প্রধান সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী (টেলিকম) সৈয়দ মো. শহিদুজ্জামান, প্রকৌশলী বীর বল মন্ডল এবং নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম।

ট্রেন চলাচল শুরুর জন্য মঙ্গলবার বিকালে খুলনা থেকে মোংলা রেলপথের চূড়ান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়

আপাতত অস্থায়ী জনবল দিয়ে রেলপথটি চালু করছি জানিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘রেলপথের সব কাজ শেষে মঙ্গলবার চূড়ান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। রেলপথ চালু করতে এখন আমাদের দরকার প্রয়োজনীয় জনবল। এই পথে আটটি স্টেশন ও লাইন ক্লিয়ারিংয়ের জন্য ৫৭৬ জন জনবলের অর্গানোগ্রাম তৈরি করা হয়েছে। সেটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে।’

কবে থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হবে জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী বীর বল মন্ডল বলেন, ‘এখনও নির্দিষ্ট করে তারিখ বলা যাচ্ছে না। তবে চলতি মাসের যেকোনো দিন ট্রেন চলাচল শুরুর জন্য স্টেশনের আসবাবপত্র, রেলক্রসিংগুলোতে অস্থায়ী জনবল নিযুক্ত, ট্রেনের সময়সূচি, ভাড়া ও অন্যান্য বিষয় চূড়ান্ত করছি আমরা। এসব প্রক্রিয়া শেষ হলেই ট্রেন চলাচল শুরু হবে।’

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্প ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। প্রকল্পটি তিনটি ভাগে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে প্যাকেজ-১ রেললাইন নির্মাণ, প্যাকেজ-২ রূপসা নদীর ওপর রেলসেতু ও প্যাকেজ-৩ টেলিযোগাযোগ ও সিগন্যালিং সিস্টেম। এসব প্রকল্পের আওতায় মূল লাইনসহ রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ৮৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। তার মধ্যে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ। আর রূপসা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রেলসেতু।

জমি অধিগ্রহণ, রেললাইন, রেলসেতু নির্মাণসহ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৭২১ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় তিন হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। ২০২১ সালে আবারও সময় ও ব্যয় বাড়ে। তখন দাঁড়ায় চার হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। সেই মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ধরা হয়। রূপসা নদীর ওপর ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার সেতু, ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটার পথ হলেও স্টেশনগুলোর ডাবললাইন হিসাব করে ৯১ কিলোমিটার পথ, ৯টি প্ল্যাটফর্ম এবং ১০৭টি ছোট সেতু ও ৯টি আন্ডারপাস নির্মাণ শেষ হয়েছে। সেইসঙ্গে সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন কাজও শেষ হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকালে খুলনা থেকে মোংলা রেলপথের চূড়ান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়, রেলওয়ের কর্মকর্তারা রেলপথের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেন

২০২৩ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভার্চুয়ালি এই রেলপথ উদ্বোধন করেন। এর আগে গত ৩০ অক্টোবর ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালানো হয়। কিন্তু স্থায়ী জনবল নিয়োগসহ নানা জটিলতায় ট্রেন চালু করা যায়নি। অবশেষে চালুর কথা জানা গেলো।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর মোংলা বন্দর প্রতিষ্ঠিত হয়। মোংলা বন্দর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত। এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর। খুলনা শহর থেকে ৪৮ কিলোমিটার দক্ষিণে পশুর নদী ও মোংলা নদীর সংযোগস্থলে বন্দরের অবস্থান।

এদিকে, ট্রেন চলাচল শুরু হলে এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ এবং ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দর দিয়ে দ্রুত কম খরচে মালামাল নিতে পারবেন। মোংলার সঙ্গে যাতায়াত সুবিধার পাশাপাশি আরও গতিশীল হবে বন্দর। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটন বিকাশ সহায়ক হবে।

মোংলা বন্দরের ব্যবসায়ী এইচ এম দুলাল, মশিউর রহমান ও ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন, মোংলা দেশের অন্যতম সমুদ্রবন্দর হলেও এখানে এতদিন রেল সংযোগ ছিল না। ফলে বন্দরটিতে অন্যান্য দেশের বড় মালবাহী জাহাজ ভিড়তে আগ্রহ দেখাচ্ছিল না। বরং বড় বড় জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসছিল। এতে মোংলা বন্দরের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন। যদিও মোংলা বন্দরকে রেলসেবার আওতায় আনতে ইতোপূর্বে একাধিক পরিকল্পনা নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। বর্তমানে দেশের আর্থিক সমৃদ্ধির কথা বিবেচনা করে ভারত, নেপাল ও ভুটানসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগ সম্প্রসারণে বন্দরকে রেলসেবার আওতায় আনা হচ্ছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় গতি আসবে।

 




👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles