Sunday, May 5, 2024

কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?


সারা দেশে তীব্র তাপপ্রবাহ বইছে। এর মধ্যে যশোরের নাম আলোচনায় আসছে বারবার। কারণ কয়েক দফায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে এই জেলায়। গত কয়েকদিনে লাগাতার তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। ‘প্রচণ্ড তাপমাত্রার কারণে’ গলে যাচ্ছে জেলার বিভিন্ন সড়কের বিটুমিন। তবে পুরো সড়কের বিটুমিন গলছে না। কিছু কিছু স্থানে গলছে। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে কেন গলে যাচ্ছে সড়কের বিটুমিন?

সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলীরা বলেছেন, মূলত প্রচণ্ড তাপমাত্রার কারণেই সড়কের কিছু কিছু অংশের বিটুমিন গলে যাচ্ছে। তবে এর সঙ্গে একমত নন সড়ক নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ঠিকাদাররা। ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন তারা।  

ঠিকাদাররা বলেছেন, উচ্চ তাপমাত্রা সহনীয় বিটুমিন ব্যবহারে ঘাটতির কারণে সড়কের কোনও কোনও অংশ গলে যাচ্ছে। আবার ওসব অংশে যথেষ্ট পরিমাণ উন্নত বিটুমিন ব্যবহার না করার কারণে এমনটি হচ্ছে।   

পরিবেশবিজ্ঞানীরা বলছেন, শুধু যশোর নয়, সারা দেশেই তাপমাত্রা বাড়ছে। শুধু বৃক্ষ নিধনই এর মূল কারণ নয়। রয়েছে আরও বেশ কিছু কারণ। সেগুলো খতিয়ে দেখতে হবে। পরিবেশ ঠিক রাখতে বৃক্ষ রোপণের কোনও বিকল্প নেই।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল আজাদ জানান, গত কয়েকদিনে যশোরে লাগাতার তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ জনজীবন। ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় যশোরে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ মোংলায় ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৩ এপ্রিল ওই জেলায় সর্বোচ্চ ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি, তার আগে ২২ এপ্রিল সর্বোচ্চ ৪০ দশমিক ৬ (চুয়াডাঙ্গা ও যশোর), ২১ এপ্রিল যশোরে তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি এবং ২০ এপ্রিল তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি এই বছরের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এমন তাপমাত্রা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে।

লাগাতার এমন তীব্র গরমে যশোরের বিভিন্ন সড়কের বিটুমিন গলে যাচ্ছে। যশোর-ঝিনাইদহ সড়ক, যশোর-খুলনা সড়ক, যশোর-নড়াইল সড়কের কিছু অংশে এই দৃশ্য দেখা গেছে।

নিয়ন্ত্রিত কিছু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সাধারণ বিটুমিন কিনতে হয়

মহাসড়কের কিছু অংশের বিটুমিন কেন গলে যাচ্ছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সড়ক নির্মাণে জড়িত এক ঠিকাদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগে রাস্তা তৈরি হতো কম। আমরা পদ্মা, যমুনাসহ বিভিন্ন অয়েল কোম্পানি থেকে বিটুমিন সংগ্রহ করতাম। এখন প্রচুর পরিমাণ সড়কের কাজ হচ্ছে। সে কারণে তারা সে পরিমাণ সরবরাহ করতে পারছে না। একসময় ইরান থেকে বিটুমিন আমদানি করা হতো। এখন অবশ্য বন্ধ। ফলে দেশীয় সাধারণ গ্রেডের অর্থাৎ তরল বিটুমিন ব্যবহার করতে হয়। সঙ্গত কারণেই উচ্চ তাপমাত্রা সহনীয় বিটুমিন ব্যবহার করা হয় না। লোকাল মার্কেট থেকে “নিয়ন্ত্রিত কিছু ব্যবসায়ীর” কাছ থেকে কিনতে হয়। তারা যে ধরনের বিটুমিন সরবরাহ করে, সেগুলো দিয়ে আসলে মানসম্মত সড়ক তৈরি সম্ভব নয়। এই কারণে বিটুমিন দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় কিংবা বেশি গরম পড়লে গলে যাচ্ছে।’

সড়ক নির্মাণে তরল বিটুমিনের ব্যবহার বেশি

সড়ক নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, দেশে দুই ধরনের বিটুমিন বাজারজাত হয়। একটি ৬০-৭০ গ্রেডের, যা অধিকতর গাঢ়। এই শ্রেণির বিটুমিন সড়কের পিচ ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহৃত হলে তা উন্নত ও টেকসই হয়। আর ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন কিছুটা তরল। তরল বিটুমিন দিয়ে পিচ ঢালাই হলে সড়ক টেকসই হয় না। ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন গুণগত মানে তরল বা পাতলা হওয়ার কারণে গ্রীষ্মকালে সড়কগুলো গলে ঢিবির মতো উঁচু-নিচু বা ঢেউয়ের আকৃতি ধারণ করে। এতে সড়কে সৃষ্টি হয় অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত। আবার বর্ষার সময় ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় এবং সড়কে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়। 

যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে সহনীয় সড়কে ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়। পরে আরও বেশি তাপমাত্রা সহনশীল সড়কে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়। কিছু কিছু সড়ক বেশ কয়েক বছর আগের তৈরি। সেখানে মূলত ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে। সে কারণে এগুলো গলে যেতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরেক ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ৮০-১০০ গ্রেডের পরিবর্তে ৬০-৭০ গ্রেডের গাঢ় বিটুমিন ব্যবহারের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যকর কোনও পদক্ষেপ নেয় না সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তবে কিছু স্থানে ৮০-১০০ গ্রেডের ব্যবহার হলেও বেশিরভাগ সড়কে ৬০-৭০ গ্রেড ব্যবহার হয়।’

সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে গরমের কথা

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাহবুব হায়দার খান বলেন, ‘সড়কের বিটুমিন গলে যাচ্ছে মূলত তাপমাত্রার কারণেই। গত কয়েকদিন ধরে যশোরে প্রচণ্ড তাপমাত্রা বিরাজমান। এই তাপমাত্রায় কোথাও কোথাও বিটুমিন গলে যাচ্ছে; এমন খবর আমরা জানি।’

সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক প্রকৌশলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘যশোর অঞ্চলে বর্তমানে জাতীয় মহাসড়ক বা এন-৭-এর কাজ চলছে। (এন-৭ হলো বাংলাদেশের একটি জাতীয় মহাসড়ক যা রাজধানীর কাছাকাছি দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এবং বাগেরহাটের মোংলা বন্দরকে সংযুক্ত করেছে। এটি ফরিদপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, যশোর ও খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি বৃহত্তম শহর ও নগরের মধ্য দিয়ে গেছে)। এটি করতে গিয়ে মহাসড়কের পাশের বহু গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ফলে গাছের ছায়া পড়ছে না। আগের চেয়ে বেশি উত্তপ্ত হচ্ছে। গাছের ছায়া এবং রাস্তার ওপর দিয়ে ঠান্ডা বায়ু প্রবাহ থাকলে বিটুমিন এভাবে গলতো না।’

গাছ লাগানোর বিকল্প নেই

এসব বিষয়ে কথা হয় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যিালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাজনীন সুলতানার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গাছ কাটলে তো পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বেই। কিন্তু উন্নয়নের স্বার্থে এগুলো মেনে নিতে হবে। আমেরিকা-জাপানের দিকে দেখুন, তাদের দূষণ কিন্তু অনেক বেশি। সেখানে শিল্প-কলকারখানা বেশি, গাড়ি ও এসির ব্যবহারও বেশি। শুধু যে বৃক্ষ কর্তনের কারণে দূষণ বাড়ছে, ঠিক এমন নয়। আরও বেশ কিছু কারণ আছে। সেগুলো রিসার্চের মাধ্যমে শনাক্ত করতে হবে। দূষণ যাতে আরও কমিয়ে আনতে পারি, সেদিকে নজর দিতে হবে আমাদের। পাশাপাশি পরিবেশ ঠান্ডা রাখার জন্য বেশি বেশি গাছ লাগানোর আসলে কোনও বিকল্প নেই।’

আরও পড়ুন: যশোরে তীব্র গরমে গলে যাচ্ছে সড়কের বিটুমিন




👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles