Monday, October 7, 2024

স্বাধীনতা দিবসে শহিদ মিনার তালা


মহান স্বাধীনতা দিবসে রাঙামাটির কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের ফটকে তালা দেওয়া ছিল। মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করতে পারেনি রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

তবে জেলা প্রশাসন বলছে, প্রতি বছর জাতীয় বিভিন্ন দিবসে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শহিদদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। কিন্তু এ বছর উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত স্মৃতিস্তম্ভে প্রথমবারের মতো শহিদদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। অনেকেই হয়ত ভুল করে বা না জেনে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে চলে গেছেন।

মঙ্গলবার সকালে রাঙামাটির কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গিয়ে দেখা গেছে, শহিদ মিনারের মূল ফটকটি তালাবদ্ধ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ফুল দিতে না পেরে ফিরে গেছেন। আবার অনেকেই ফটকেই ফুলের ঢালা রেখে গেছেন।

প্রশাসনের এমন অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও  সামাজি-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

জেলা সিপিবির সভাপতি সমীর কান্তি দে ও সাধারণ সম্পাদক অনুপম বড়–য়া শংকর এক বিবৃতিতে প্রশাসনের একতরফা সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এছাড়া নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে সমন্বয় করে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

প্রশাসনের এই ধরনের একতরফা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সিপিবি, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, উদীচী, খেলাঘরসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সমমনা সংগঠনগুলো  তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়েছে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি’র জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনুপম বড়-য়া শংকর বলেন, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সকালে ফুল দিতে গিয়ে ফটকে তালাবদ্ধ দেখে প্রতিবাদ করি। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, কেন দেয়াল টপকে ফুল দিব আমরা।

তিনি আরও বলেন, এবারই প্রথম এখানে এসে ফুল দিতে এসে ফিরে যেতে হয়েছে। স্থান পরিবর্তন করে সেটি প্রচার করা হয়নি। আমার সেটি জানিও না। পরে শুনেছি, উপজেলা পরিষদ অফিসের পাশে শহিদের নামের তালিকাসহ স্মৃতিস্তম্ভ আছে সেটিকে প্রশাসন স্মৃতিসৌধ বানিয়েছে।

জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তালাবদ্ধ শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়েছে। অপর দিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ফুল দিতে এসে তারাও বিভ্রান্তিতে পড়েছেন।

জাতীয় পার্টির রাঙামাটি জেলা কমিটির সভাপতি মো. হারুন মতব্বর বলেন, ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধু ম্যুারালে ফুল দেই কিন্তু স্বাধীনতা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি ও বিজয় দিবসে সবসময় আমরা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে আসছি। আজ সকালে শহিদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে জানতে পারি, এবছর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ফুল দেওয়ার স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে। সেই বিষয়ে আমরা জানতাম না। পরে উপজেলার সামনে গিয়ে ফুল দিয়ে আসি। পরে শুনেছি, স্থান পরিবর্তনের চিঠি দেওয়া হয়েছিল।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-র জেলার কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ বলেন, আমরা সকালে গিয়ে শহিদ মিনার তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখি। পরে দলীয় লোকজনসহ আমরা দেয়াল টপকে গিয়ে ফুল দেই। এভাবে স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে, সেটিও আমরা জানি না বা আমাদের জানানো হয়নি।

তিনি বলেন, আমি মনে করি এখানে যে-সব শহিদের নাম আছে তাদের অবমাননা করা হয়েছে। স্বাধীনতার ৫২ বছর পর জেলা শহরের সদর উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে এ বছর শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু করেছে প্রশাসন।

বীর শহিদদের স্মৃতিস্তম্ভের আগেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে দিবসটির আনুষ্ঠানিক সূচনা করেছে জেলা প্রশাসন। এদিকে, নতুন স্মৃতিস্তম্ভে এখনও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম উল্লেখসহ অন্যান্য কাজ বাকী রয়েছে। তড়িঘড়ি করেই জেলা প্রশাসন এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জেলা প্রশাসক মোহম্মদ মোশারফ হোসেন খানকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ফোন রিসিভ করেননি তিনি।

পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, স্বাধীনতা দিবসের প্রস্তুতি সভায় এই বিষয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দফতরে দফতরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া শহরে মাইকিং করা হয়েছে। প্রচারণার জন্য সব চেষ্টাই করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, এটি মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর ২৫ মার্চ  মাইকিং করা হয়েছে। এর পরও যদি কেউ না জানে, তাহলে আমার কি করার আছে। তাহলে বলতে হয়, যারা ওখানে গিয়েছেন, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে গেছেন।



Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles