চরম বৈষম্যের শিকার বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) ১৩তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আড়াই হাজারের বেশি নিবন্ধনধারী। তাদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় থাকলেও গত ১১ মাসে কোনও প্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশ করেনি এনটিআরসিএ।
চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, রায় বাস্তবায়নে এনটিআরসিএ চরম উদাসীনতা দেখাচ্ছে। বিগত ১১ মাস ধরে আমরা আপিল ডিভিশনের রায়কে সম্মান জানিয়ে সেটি বাস্তবায়নের জন্য বারবার আহ্বান করেছি। রায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ সুপারিশের অনুরোধ জানিয়েছি, আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু আজ অবধি কোনও পদক্ষেপ নেয়নি এনটিআরসিএ। আর সে কারণে এই আড়াই হাজারের বেশি প্রার্থীদের মধ্যে অনেকে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নতুন করে নিয়োগ নিয়েছেন। আর আমরা এখনও নিয়োগ পাইনি, হতাশার মধ্যে দিনযাপন করছি।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পরও ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীরা নিয়োগের সুপারিশ পাননি কেন জানতে চাইলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান মো. সাইফুল্লাহিল আজম বলেন, ‘আপিল বিভাগের রায় দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। রায় না দেখে কথা বলতে পারবো না।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালের বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রত্যয়ন বিধিমালা অধিকতর সংশোধন করে ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবরের নতুন সংশোধিত গেজেট এবং পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর নতুন পরিপত্র জারি করা হয়। পরিপত্র অনুযায়ী, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্যে শিক্ষক বাছাই এবং শিক্ষক সুপারিশের ক্ষমতা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির কাছ থেকে প্রথমবার এনটিআরসিএ পায়।
সংশোধিত গেজেট এবং নতুন পরিপত্র অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। বিজ্ঞপ্তির আলোকে সর্বমোট ৫ লাখ ২৭ হাজার ৭৫৪ জন পরীক্ষার্থী ১৩তম শিক্ষার্থী নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নেয়। ওই পরীক্ষায় ২০১৭ সালের ৪ জুন সর্বমোট ১৭ হাজার ২৫৪ জন প্রার্থী চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়। শূন্য পদের বিপরীতে সরাসরি নিয়োগের জন্য ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের নিয়োগের জন্য নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু নিবন্ধনধারীদের নিয়োগ সুপারিশ না করায় উত্তীর্ণ ১৭ হাজার ২৫৪ জন নিবন্ধন প্রার্থীর মধ্যে ২ হাজার ২০৭ জন ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। হাইকোর্টের রায়ে প্রার্থীদের নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয় ২০২২ সালের ১ জুন। ওই রায়ের ওপর এনটিআরসিএ আপিল করলে ২০২৩ সালের ২ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। আপিল বিভাগের রায় বাস্তবায়নে এনটিআরসিএ ২০২১ সালের ৩১ মার্চ তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এবং ওই বিজ্ঞপ্তিতে শূন্য পদ সংরক্ষণ করে ২ হাজার ২০৭ জনের জন্য এবং তাদের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি নিয়োগ সুপারিশ করে। তবে পদ না থাকার অজুহাত দেখিয়ে ৬৫ জন প্রার্থীকে আজও নিয়োগের সুপারিশ করেনি এনটিআরসিএ।
এদিকে ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নিয়োগের সুপারিশ পাওয়া ২ হাজার ২০৭ জনের চেয়ে বেশি নম্বর পাওয়া ২ হাজার ৫০০ জন নতুন করে রিট করেন হাইকোর্ট বিভাগে। রিটে তারা সরাসরি নিয়োগের দাবি জানান।
হাইকোর্ট বিভাগ শুনানি শেষে ২০২২ সালের ১ জুন ১৩তম ব্যাচের ২ হাজার ৫০০ জনের রিটের শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করেন। রায়ের দিন থেকে পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে নিয়োগ সুপারিশের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের রায়ের বিপক্ষে এনটিআরসিএ লিভ টু আপিল দায়ের করে। আপিল শুনানি শেষে ২০২৩ সালের ২ এপ্রিল আপিল বিভাগ রিটকারীদের পক্ষে থাকা হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। ফলে হাইকোর্টর রায় অনুযায়ী আপিলের রায়ের পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে নিয়োগ সুপারিশ করার কথা, কিন্তু গত ১১ মাসেও নিয়োগের সুপারিশ করেনি এনটিআরসিএ।
শুধু তাই নয়, রায় বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রার্থীদের পক্ষে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যানকে লিগ্যাল নোটিশ করা হলেও তার জবাব দেয়নি এনটিআরসিএ। এসব কারণে চাকরির সুপারিশ বঞ্চিত এসব প্রার্থীর মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।
১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সবুজ বণিকসহ প্রার্থীরা আসন্ন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে পদ সংরক্ষণ করে নিয়োগ দেওয়ার দাবি করেছেন এনটিআরসিএ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে।