Monday, May 19, 2025

রাবিতে নির্মাণাধীন ভবন ধস: প্রকৌশলী বরখাস্ত করে কাজ শুরু


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) নির্মাণাধীন শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান হল ধসের কারণ হিসেবে তদন্ত কমিটি নির্মাণ কাজে গাফিলতি খুঁজে পেয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর আগে গত ২৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩০তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য সহ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম ও নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সিন্ডিকেট সদস্যদের থেকে জানা যায়, মিলনায়তনের একাংশ ধসে পড়ার ঘটনায় নির্মাণ কাজে গাফিলতি পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ওই প্রকল্পে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই প্রকৌশলীকে প্রত্যাহার ও আহত শ্রমিকদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আহত শ্রমিকদের চিকিৎসাব্যয় ও পর্যাপ্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

ধসের তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, সাটারিংয়ে ব্যবহৃত খুঁটির রড মান-সম্মত ছিল না। এছাড়া কাঁচা বিমের ওপর ছাদ ঢালায় করায় ওই দূর্ঘটনা ঘটেছে। ভবনের অন্যান্য অংশেও এ ধরণের কোনো কাজ করা হয়েছে কিনা সেটিও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে তদন্ত কমিটি। এর প্রেক্ষিতে উভয় পক্ষের প্রকৌশলীকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া যে অংশ ভেঙে পড়েছে তা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব অর্থায়নে নতুন সরঞ্জাম ব্যবহার করে, আলাদা নকশা করে তৈরি করে দিবে। এ ঘটনায় আহত শ্রমিকদের চিকিৎসার খরচ এবং ক্ষতিপূরণ দিবে।

আগে থেকেই দূর্নীতির তকমা পাওয়া এই প্রতিষ্ঠান কাজ পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা অনেক বড় অর্থের কাজ। সাধারণত কোটি টাকার ওপরে গেলে সেটা সরাসরি মন্ত্রণালয় থেকে পাশ করা হয়। এটাও তাই হয়েছে। তবে এ ঘটনার বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত নন বলে জানান।

এদিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা ও সেই অনুযায়ী জড়িতদের বিরুদ্ধে নেওয়ায় নির্মাণাধীন ওই ভবনে কাজ শুরু হয়েছে। গত শনিবার (৩১ মার্চ) সকাল থেকে এ কাজ শুরু হয় বলে জানা গেছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে দায়িত্বরত জীবন নামে এক সুপারভাইজার বলেন, গতকাল থেকে প্রায় ২০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের ঝুলে থাকা অংশ অপসারণ করতে বলা হয়েছে। এরপর নতুন নকশায় পুরোদমে আবার কাজ শুরু হবে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান আবাসিক হল ও ২০ তলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ করছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ‘বালিশ কাণ্ডে’ আলোচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন এ দুই ভবনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এর আগেও বিভিন্ন সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রসঙ্গত, গত ৩০ জানুয়ারি দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের সামনে নির্মাণাধীন শহিদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের মিলনায়তনের একাংশ ধসে পড়ে। এ ঘটনায় নয়জন শ্রমিক আহত হয়েছিলেন। ওই দিন রাতেই জরুরি সভা ডেকে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

তবে ঘটনার চার দিন পর ৪ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কমিটির সদস্যদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। ওই দিন থেকে পরবর্তী সাত কার্যদিবস শেষ হলেও তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। পরে তদন্ত কমিটির সদস্যদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে আরও সাত কার্যদিবস বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় দফা সময় শেষ হওয়ার আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়।



Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles