সুপার এইটে বাংলাদেশ খেলবে, এমন প্রত্যাশা বিশ্বকাপের আগে কেউই করেনি। করবেই বা কেমন করে! নাজমুল হোসেন শান্তর দলের পারফরম্যান্সের যা হাল ছিল- তাতে করে এমন কিছু কল্পনাতীত। তারপরও কন্ডিশনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে পেসারদের কল্যাণে বাংলাদেশ দল সুপার এইটে উঠেছে। বাংলাদেশের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তখন ঘোষণা দেন, সুপার এইটের ম্যাচগুলো তাদের জন্য বোনাস! তবে অস্ট্রেলিয়া-ভারতের বিপক্ষে বোনাস পাওয়ার তাড়না দেখা যায়নি কোনও ক্রিকেটারদের মাঝেই! ব্যাটিং-বোলিংয়ে ছন্নছাড়া ক্রিকেট খেলে বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ থেকে বিদায় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেলো। শনিবার আরও একটি ব্যাটিং ব্যর্থতা এবং ভুল পরিকল্পনার খেসারত দিয়ে ভারতের কাছে ৫০ রানের ব্যবধানে হারতো হলো।
২০০৭ বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের তখনকার অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠার প্রত্যাশার কথা শুনিয়ে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশ দল প্রথম আসরে খেলতে নেমেই সুপার এইটে উঠে। ওই পর্বে কোনও ম্যাচ জিততে না পারলেও এতদিন পর্যন্ত সেটাই ছিল বাংলাদেশের সেরা বিশ্বকাপ। গত ১৭ বছরে বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক কিছুই বদলে গেছে। কিন্তু বদল হয়নি ক্রিকেটারদের মানসিকতার। ১৭ বছর পরেও এসে ক্রিকেটারদের যাত্রাটা লক্ষ্যহীন। ক্রিকেটারদের সঙ্গে কোচিং স্টাফরাও প্রথম রাউন্ড উতরে যাওয়াকে সেরা অর্জন হিসেবে দেখেন। এমন সাফল্য গায়ে মেখেই সুপার এইটের আগে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুসিংহে। সুপার এইটে নিজেদের লক্ষ্যের কথা জানতে চাওয়া হয়েছিল তার কাছে। লঙ্কান কোচের উত্তর ছিল, ‘এখানে আসতে (সুপার এইট) পেরে আমরা খুবই খুশি, আর এখান থেকে যেকোনও প্রাপ্তিই হবে বোনাস।’
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ২০০৭ সালে প্রথম বিশ্বকাপের পরও নবম বিশ্বকাপে এসেও বাংলাদেশের স্বপ্ন, প্রত্যাশা এবং লক্ষ্য কী করে একই থাকে? তাহলে কি বাংলাদেশের ক্রিকেটে কোনও পরিবর্তন হয়নি? বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মানসিকতায় কি কোনও বদল আসেনি? যদি বদল এসেই থাকে, তাহলে দলের প্রধান কোচ সুপার এইটের ম্যাচকে কীভাবে ‘বোনাস’ হিসেবে বিবেচনা করেন? আর যদি বদল না এসে থাকে, তাহলে এত কোটি কোটি টাকা খরচ করে কোচিং স্টাফের বিশাল বহর রাখা কেন? অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের বিপক্ষে ছন্নছাড়া পারফরম্যান্সের পর আরও একবার বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ঘিরে এই প্রশ্ন সামনে এলো।
ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপে কখনোই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে বেঙ্গালুরুতে দারুণ সুযোগ পেয়েও জয় হাতছাড়া করেছিল। ২০২১ বিশ্বকাপেও সুযোগ ছিল ভারতকে হারানোর, কিন্তু কোনোবারই পারেনি লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। শনিবার সুপার এইটের নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে আরও একটি ম্যাচে খেলতে নেমে শুরুতেই ভুল করে বসে বাংলাদেশ। ভারতীয় শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে তাসকিনকে বসিয়ে খেলানো হয় জাকের আলীকে। অথচ তাসকিনকে বসিয়ে শরিফুলকে নেওয়া গেলে সেটি হতে পারতো কার্যকর সিদ্ধান্ত। কিংবা তাসকিনকেও খেলানো যেত। অতীতে ভারতের বিপক্ষে তাসকিন বেশ সফলই ছিলেন।
শুধু একাদশ নির্বাচনেই ভুল করেননি টিম ম্যানেজমেন্ট। টস জিতলে ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা যেখানে ব্যাটিং নিতেন, সেখানে টস হেরেই ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন কেবল বাংলাদেশের অধিনায়কের কল্যাণে। শুরুর এই দুই ভুলেই ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে বাংলাদেশ। এমনিতেই অ্যান্টিগার ব্যাটিং উইকেটে মোস্তাফিজ কেমন করে সেটি নিয়ে শঙ্কা ছিল। তার মধ্যে একজন বোলার কম নিয়ে বোলিংয়ে নেমে শুরু থেকেই খেই হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলির ওপেনিং জুটিতেই দারুণ শুরু পায় ভারত। ২২ বলে ৩৯ রানের জুটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান। ১১ বলে ২৩ রান করা রোহিতকে ফিরিয়ে টি-বিশ্বকাপে অনন্য এক রেকর্ড পৌঁছে যান বাঁহাতি এই স্পিনার। বিশ্বকাপে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ৫০ উইকেট নিয়েছেন এই অলরাউন্ডার। এ রেকর্ড গড়তে তার লেগেছে ৪০ ইনিংস। দ্বিতীয় উইকেটে কোহলি ও রিশাভ পান্ত ৩২ রানের আরেকটি জুটি গড়েন। নবম ওভারে এই জুটি ভাঙেন তানজিম হাসান সাকিব।
ওই ওভারে জুনিয়র সাকিবের বল সামনে এসে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে ২৮ বলে ৩৭ রানে বোল্ড হন কোহলি। এরপর উইকেটে নেমে প্রথম বলেই হুক করে দারুণ একটি ছক্কা হাকান সূর্যকুমার যাদব। পরের বলে আউটসাইড-এজের পর ধরা পড়েছেন উইকেটকিপার লিটন দাসের হাতে। কোহলি ও সূর্যকুমারকে ফিরিয়ে সিনিয়র সাকিবের আরেকটি রেকর্ড ছুঁয়েছেন তানজিম। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের হয়ে সাকিব ২০২১ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১১ উইকেট শিকার করেছিলেন। সেই রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন তিনি। তবে বেশিক্ষণ স্থায়ী থাকেনি সাকিবের রেকর্ডটি। রিশাদ হোসেনও ভাগ বসান তাতে। বাংলাদেশি স্পিনার ফেরান পান্তকে (৩৬)। রিশাদের দ্বিতীয় শিকার শিবম দুবে (৩৪)।
ভালো বোলিং অপশন না থাকায় ঘুরিয়ে ফিরিয়েই বিশেষজ্ঞ ৫ বোলারকেই বোলিং করাতে হয়েছে। মাহমুদউল্লাহ অবশ্য দুই ওভার করে অবদান রেখেছেন। ভালো বোলিং করলেও তার কোটা পূরণ করা হয়নি। বাংলাদেশের বোলারদের ছন্নছাড়া বোলিংয়ের সুযোগ নিয়ে ভারত ১৯৬ রান তুলে ফেলে। শেষ দিকে হার্দিক পান্ডিয়া ২৭ বলে ৫০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন।
রিশাদ ৪৩ রান খরচায় দুটি উইকেট নিয়েছেন। তানজিম ৩২ রানে নেন দুটি উইকেট। বাঁহাতি স্পিনার সাকিব বেশ ব্যয়বহুল ছিলেন। ৩ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে তার শিকার একটি উইকেট। মোস্তাফিজ ৪৮ রান খরচ করে উইকেট শূন্য ছিলেন। সবচেয়ে ভালো বোলিং করেছেন মাহমুদউল্লাহ, উইকেট নিতে না পারলেও দুই ওভারে খরচ করেন ৮ রান।
ভারতের দেওয়া ১৯৭ রানের কঠিন লক্ষ্য খেলতে নেমে শুরু থেকেই অস্বস্তি নিয়ে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ। অস্বস্তি তো হবেই, শান্ত তো টসের সময় বলে দিয়েছিলেন, এই উইকেটে ১৫০-১৬০ রান ভালো স্কোর। শান্তর প্রত্যাশার চেয়ে ৪০ রান বেশি করেছে ভারত! এমন লক্ষ্যে খেলতে গিয়ে তো কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হবেই। শেষ পর্যন্ত রানের পাহাড়ে চাপা পড়ে বাংলাদেশের ইনিংস থামে ১৪৬ রানে। শুরুতে উইকেট ধরে রাখার কৌশলে এগিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু লক্ষ্যটা এতো বড় যে, এই রান চেজ করা মোটেও সহজ ছিল না। রিশাদ শেষ দিকে খেলেছেন ১০ বলে ২৪ রানের ক্যামিও। এটাই এই ম্যাচের প্রাপ্তি। মাত্র ১৩ রানে ২ উইকেট নেওয়া যশপ্রীত বুমরা। এবং ১৯ রানে ৩ উইকেট নেওয়া কুলদীপ যাদবই মূলত বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপকে ধ্বংস করে দিয়েছেন।
👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com