সরকারের অনুমোদন ছাড়াই সারা দেশে প্রায় ৭০ লাখ অবৈধ ইলেকট্রিক থ্রি-হুইলার চলাচল করছে। আর এতে অবৈধভাবে ব্যাটারি চার্জ করার কারণে বছরে প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ চুরি হচ্ছে। অথচ বৈধভাবে দেশে তৈরি বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার ‘বাঘ’কে সড়কে নামাতে দেওয়া হচ্ছে না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ’র অনুমতি পাওয়া দেশীয় ব্যবস্থাপনায় অ্যাপভিত্তিক পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার ইকো-ট্যাক্সি (তিন চাকার বাহন) ‘বাঘ’ সড়কে নামাতে গেলেই বাধা দিচ্ছে জেলাগুলোর বিআরটিএ অফিস।
পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক এই থ্রি-হুইলার তৈরি করেছে ‘বাঘ ইকো মোটরস লিমিটেড’। প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট কাজী জসিমুল ইসলাম বাপ্পি সড়কে শব্দহীন ও সৌরবিদ্যুৎনির্ভর থ্রি-হুইলার নামানোর জন্য ছয় বছরের বেশি সময় চেষ্টা করে আসছেন। কিন্তু সরকারের এক দফতর থেকে আরেক দফতর, এক কর্মকর্তা থেকে আরেক কর্মকর্তা, এই কাগজ থেকে সেই কাগজের পেছনে ছুটে চলা এই উদ্যোক্তা এখনও কোনও কূলকিনারা পাচ্ছেন না। সড়কে বৈধ প্রক্রিয়ায় বাঘ নামাতে গিয়ে বুয়েট টেস্টসহ বিভিন্ন টেস্ট (পরীক্ষা) দিতে চলে গেছে কয়েক বছর। বিআরটিএ’র অনুমতি পেতেই তাকে প্রায় সাড়ে তিন বছর (৪২ মাস) অপেক্ষা করতে হয়েছে। অনুমতি পাওয়ার আরও আড়াই বছর কেটে গেছে বিআরটিএ’র জেলা অফিসগুলোর অনুমতির আশায়। ২০২২ সালের মার্চ মাসে বিআরটিএ’র অনুমতি পেলেও জেলা অফিসগুলোর অনুমতি এখনও মেলেনি।
এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট কাজী জসিমুল ইসলাম বাপ্পি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রো এলাকায় অবৈধভাবে প্রায় ৭০ হাজার সিএনজি চলাচল করা সত্ত্বেও আমাদের বৈধ গাড়িকে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম মেট্রো এলাকায় চলাচলের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। আমাদের বিআরটিএ থেকে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম মেট্রো এলাকা ব্যতীত অন্যান্য জেলায় চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অনুমোদনের পরও তিন বছর ধরে অদৃশ্য কারণে জেলা থেকে আমাদের গাড়ি চলাচলের অনুমতি ও রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হচ্ছে না।’
তিনি জানান, জেলাগুলোতে চলাচলের জন্য স্থানীয় বিআরটিসি’র মিটিংয়ের প্রয়োজন হয়। আমরা তিন বছর আগে বিভিন্ন জেলায় রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করি। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিআরটিসি মিটিংয়ের কথা বলে আমাদের গাড়ি চলাচলের অনুমতি ও রেজিস্ট্রেশন দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘২০১৮ সাল থেকে আমরা পরিবেশবান্ধব সোলার ও লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিচালিত ইলেকট্রিক থ্রি-হুইলার গাড়ি নিয়ে কাজ করে আসছি। প্রায় ছয় বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু এর মধ্যে সারা দেশে প্রায় ৭০ লাখ অবৈধ গাড়ি চলাচল করছে। অথচ আমাদের বৈধ ও পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক গাড়ি চলতে দেওয়া হচ্ছে না। বুয়েটের সবচেয়ে মানসম্পন্ন টেস্টিং রিপোর্ট পাওয়া সত্ত্বেও গাড়ি রাস্তায় নামতে দেওয়া হচ্ছে না।’
কাজী জসিমুল ইসলাম বাপ্পি জানান, দীর্ঘ ৪২ মাস চেষ্টার পর ২০২২ সালের মার্চে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ‘বাঘ’কে সরকার রেজিস্ট্রেশন দেয়। এটার মাধ্যমে দেশে প্রথম বৈধতা পায় পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বমানের একটি বাহন বানিয়েছে, কিন্তু সড়কে নামাতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘এই পরিবহন চলতে দিলে যাত্রীরা একদিকে নিরাপদে যাতায়াত করতে পারবেন, অপরদিকে ভাড়াও কমে আসবে।’
কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই গাড়িতে বিদ্যুতের চার্জ ব্যয় কমবে। আগে যেখানে প্রতি ইউনিটে খরচ হতো ১৭ টাকা, ‘বাঘে’ হবে ৭ টাকা।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি কিলোমিটারে খরচ পড়বে ৪০-৪৫ পয়সা। একবার চার্জ করলে চলবে ১২০ কিলোমিটার। সৌরবিদ্যুতে চলবে আরও ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার।’
তিনি উল্লেখ করেন, সরকারের সমর্থনে আমরা পরিবেশ রক্ষায় বৈদেশিক ফান্ডের টাকা আনতে পারি।
এ বছর জলবায়ু পরিবর্তন-বিষয়ক সম্মেলন ‘কপ’ আজারবাইজানে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেখানে সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে উপস্থিত হয়ে এই গ্লোবাল ওয়ার্মিং ফান্ডটি সারা বাংলাদেশের জন্য আনতে চাই, উল্লেখ করেন তিনি।
কাজী জসিমুল ইসলাম বলেন, ‘বাঘ ইকো মোটরস লিমিটেড বাংলাদেশে প্রথম পরিবেশবান্ধব ও দূষণমুক্ত পরিবহন উৎপাদন ও সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান।
ঢাকার গাজীপুরের কারখানায় ইতোমধ্যে কিছু ‘বাঘ’ তৈরি হয়েছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এটি রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
জসিমুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, ‘গাজীপুরের হোতাপাড়ার কারখানায় প্রতিদিন তিন হাজার ‘বাঘ’ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘বাঘ’ রফতানির ব্যাপারে ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কম্বোডিয়া, সুদান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইথিওপিয়া এটি নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
একদিকে যাত্রীদের খরচ কমবে, অপরদিকে সরকার প্রতিবছর অন্তত ১০-১২ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব পেতে পারে। ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব লিথিয়াম ব্যাটারি ব্যবহারের ফলে বছরে অন্তত ৪ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল কমানো সম্ভব।’ বাপ্পি বলেন, প্রচলিত ইজিবাইক বন্ধ হলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে কার্বন ক্রেডিটের জন্য অতিরিক্ত আরও তিন হাজার কোটি টাকা পাওয়া সম্ভব। প্রতিটি প্রচলিত ইজিবাইক বন্ধ হলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে কার্বন ক্রেডিটের জন্য সরকার ১৫ ডলার করে পাবে। ২০ লাখ ইজিবাইক বন্ধ হলে আসবে ৩ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া প্রচলিত ইজিবাইকগুলো নিবন্ধন ছাড়াই সড়কে চলাচল করছে। এগুলোর রোড পারমিট নেই। তাই কোনও রাজস্ব পায় না সরকার।’
রাস্তায় যেসব ইজিবাইক চলছে, তাতে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এসিড ব্যাটারি ব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ কাজী জসিমুল ইসলাম বাপ্পির। তার মন্তব্য—সরকার নীতিমালা করে দিলে প্রচলিত ইজিবাইক রিসাইকেল করা যায়। এরপর এগুলো পরিবেশবান্ধব করে অ্যাপের মাধ্যমে চালানো সম্ভব। তিনি বলেন, ‘এক লাখ ৬০ হাজার টাকায় কেনা ইজিবাইক তো ফেলে দেওয়া যাবে না। যেহেতু অ্যাপের মাধ্যমে চলবে, সেহেতু আমরা এগুলোকে পণ্য ডেলিভারির কাজেও ব্যবহার করতে পারবো।’
এর আগে বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কাজী জসিমুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘বাঘ’ বিশ্বের প্রথম অ্যাপভিত্তিক গাড়ি প্রতিষ্ঠান হবে। কারণ, উবার ও পাঠাওসহ রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলোর নিজস্ব গাড়ি নেই। প্রাথমিক অবস্থায় দেশের ২০ লাখ মানুষকে সেবা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে ‘বাঘ’।
তিনি আরও জানান, অ্যাপভিত্তিক এই গাড়িতে চালকসহ সাত জন বসতে পারবে। এছাড়া ওয়াইফাই, জিপিএস, টেলিভিশন, ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা, ইন্টারনেট সুবিধা থাকবে এতে। ভাড়া মেটাতে ব্যবহার করা যাবে এটিএম কার্ডসহ যেকোনও মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ। তুলনামূলক বড় আকারের চাকা থাকবে এতে, তাই কমবে দুর্ঘটনা।
প্রতিটি ‘বাঘ’-এ থাকছে সোলার চার্জিং সিস্টেম। সোয়াপ (ব্যাটারির চার্জ সিস্টেম) ব্যাটারি হওয়ায় চার্জের জন্য বাহনটিকে থেমে থাকতে হবে না। একবার চার্জে এটি ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলবে। ‘বাঘ’-এ থাকবে উন্নতমানের লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি। এর ব্যাটারি ও চার্জারে থাকবে মাইক্রোচিপ। যাতে একটি অ্যাপ প্রিলোডেড থাকবে (বিল্টইন)।
আবার মানসম্পন্ন ইস্পাতের কাঠামো ব্যবহারের ফলে ‘বাঘ’ অন্য গাড়ির তুলনায় বেশি টেকসই থাকবে। দেশে বড় গাড়ির জন্য যে ইস্পাত ব্যবহৃত হয় ,তা দিয়েই তৈরি হবে ‘বাঘ’। ফলে দুর্ঘটনায় সিএনজি-অটোরিকশাকে যেভাবে দুমড়েমুচড়ে যেতে দেখা যায়, ‘বাঘের’ বেলায় তেমনটি হবে না বলে জানান এই উদ্যোক্তা।
👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com