রমজানে মাংস ও ফল ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে গোপালগঞ্জে কালেক্টর বাজারের মাধ্যমে ৬৬০ টাকায় প্রতি কেজি গরুর মাংস ও ন্যায্য মূল্যে ফল বিক্রি শুরু করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বাজারের তুলনায় গরুর মাংস ও ফল কম মূল্যে বিক্রি করায় এ বাজারে ভিড় করছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। এ বাজারের মাধ্যমে ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রি করায় অন্যান্য বাজারে দাম কমে আসবে বলে মনে করেন জেলা প্রশাসক।
শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে কালেক্টর বাজারে গিয়ে জানা গেছে, রমজান এলেই অন্যান্য দিনের তুলনায় মাংস, ফলসহ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পায় কয়েকগুণ। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের হাতে নাগালের বাইরে চলে যায়। তাই বিশেষ করে গরুর মাংস ও ফল ন্যায্যমূল্যে বিক্রির জন্য গোপালগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে স্থাপন করা হয়েছে কালেক্টর বাজার। মঙ্গলবার ৬৬০ টাকা ন্যায্য মূল্যে দুই কেজি করে গরুর মাংস ক্রেতাদের হাতে তুলে দিয়ে এ কালেক্টর বাজারের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম।
প্রতিদিন এ বাজারে গরু জবাই করা হয়। পরে তা ক্রেতাদের সামনে কেটে গরুর মাংস প্রতি কেজি সরকার নির্ধারিত মূল্য ৬৬৪ টাকার থেকেও ৪টাকা কমে ৬৬০টাকায় বিক্রি করা হয়। এছাড়া ৫ থেকে ১০ কেজির প্রতি পিস তরমুজ ২০০ থেকে ৩০০ টাকা এবং প্রতি পিস ফুটি ৫০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
অন্যান্য বাজার থেকে কলেক্টর বাজারে প্রতি কেজি মাংস প্রায় দেড়শ’ টাকা ও তরমুজ এবং ফুটি এক থেকে দুইশ’ টাকা কমে কিনতে পারায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিড় করেন নানা বয়সের ক্রেতারা। তবে বেশিরভাগ ক্রেতাই শ্রমজীবী, দিনমজুর ও ছোট ব্যবসায়ী। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে কম দামে চাহিদামত পণ্য কিনতে পারায় খুশি ক্রেতারা।
কালেক্টর বাজারে মাংস কিনতে আসা ক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ দেখতে পেলাম বাজার মূল্য থেকে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। তাই দুই কেজি মাংস নিলাম। এই যুবকরা যদি ৬৬০ টাকা দামে মাংস বিক্রি করতে পারে তাহলে বাজারের ব্যবসায়ীরা কেন পারবে না। প্রশাসনের কাছে দাবি ব্যবসায়ীদের এই সিন্ডিকেট যাতে ভেঙে দেওয়া হয়।
মাংস কিনতে আসা শহরের নবীনবাগ এলাকার বাসিন্দা শেখ মোস্তফা জামান বলেন, বাজারে কেউ কিছু বলে না। যে যার মতো দাম নিচ্ছে। এখানে বাজার থেকে ১৫০ টাকা কম দামে মাংস কিনতে পেরে ভালো লাগছে।
রিক্সা চালক ফারুক শেখ বলেন, প্রতিদিন রিক্সা চালিয়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হয়। এর থেকে অবার রিক্সা ভাড়া ও হাত খরচ করে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা থাকে। নিত্যপণ্যের যে দাম তাতে গরুর মাংস তো দূরের কথা ভাল কোন খাবার কিনতে পারি না। কিন্তু এখানে দেখলাম ১৫০ টাকা কমে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। তাই কয়েক দিনের জমানো টাকা দিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কিনলাম। এখন অনেক দিন পর মা, বাবা, স্ত্রী ও ছেলে মেয়ের মুখে একটু মাংস তুলে দিতে পারবো।
আরেক ক্রেতা ইজিবাইকচালক আরিফ হোসেন মোল্লা বলেন, দেখলাম কম দামে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে তাই এক কেজি কিনলাম। দেখে খুব ভালো লাগছে যে গরুর মাংস ৬৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গোপালগঞ্জ শহরে ও অন্য বাজারে কিনতে গেলে ৭৫০-৮০০ টাকা লাগতো।
শহরের বাজার রোডের বাসিন্দা সেকেন্দার সিকদার বলেন, গোপালগঞ্জ জেলা শহরের বড় বাজার, বটতলা, গেটপাড়া, বেদগ্রাম, ঘোনাপাড়া, পাঁচুড়িয়া বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয় ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা দরে। এসব ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে মাংস বিক্রি করে। আর এই কালেক্টর বাজারে ৬৬০ টাকা দরে মাংস বিক্রি হচ্ছে জানতে পেরে আমি মাংস কিনতে এসেছি। এখান থেকে দুই কেজি মাংস কিনেছি।
কালেক্টর বাজারের পরিচালক আরমান খান জয় বলেন, বাজারের প্রতিটি পণ্যের দাম জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে দরিদ্র ও কম আয়ের শ্রমজীবী মানুষ মাংস তো দূরের কথা মাছও কিনে খেতে পারে না। সারাদিন রোজা রেখে যদি পুষ্টিকর খাবার না খেতে পারে তাহলে এরা নানান অসুখে ভুগতে পারে। তাই আমরা বেশ কয়েকজন যুবক মিলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি, রমজান উপলক্ষে সরকার নির্ধারিত মূল্যে গরুর মাংসসহ তরমুজ, ফুটি, কলা
বিক্রি করবো। যাতে মানুষ কিনে খেতে পারে। আমাদের বেশি লাভের দরকার নেই। তাই খরচ বাবদ যেটা প্রয়োজন সেটুকু লাভ করেই আমরা মাল বিক্রি করছি। আমাদের লক্ষ্য একটাই সেটা হলো সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের কল্যাণে কাজ করা।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোহসিন উদ্দিন বলেন, কালেক্টর বাজার একটা নয় শহরের গুরুত্বপূ্র্ণ স্থানে আরও স্থাপন করা হবে। পর্যায়ক্রমে এই ধরনের বাজার সম্প্রসারণ ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির কাজ চলছে। আশাকরি করি আমরা কালেক্টর বাজার স্থাপনের মধ্য দিয়ে ক্রেতা সাধারণকে ভেজালমুক্ত পণ্য কম দামে দিতে সক্ষম হবো। এতে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করায় অন্যান্য বাজারেও পণ্যের দাম কমে আসবে।
জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, সরকার ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের প্রণোদনা দিয়েছে। তারপরও বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রয়েছে। আমরা একটা জিনিস বুঝেছি অর্থনীতিকে অর্থনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে। বাজার মনিটরিং-এ ফল দিচ্ছে না। বাজারে যোগান বাড়াতে হবে। সরকার ২৯টি পণ্যের যে দাম নির্ধারণ করেছে আমরা সেই দামে বা তার থেকে কম দামে পণ্য বিক্রি করছি।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, বাজারের সকল ব্যবসায়ীরা যাতে কম লাভে জনগণের হাতে পণ্য তুলে দিতে পারে সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। পরীক্ষামূলকভাবে এই কালেক্টর বাজার শুরু করেছি। জেলার বিভিন্ন স্থানে খাসজমি রয়েছে। সেসব জমি অবৈধ দখল মুক্ত করে শুধু গোপালগঞ্জ শহরেই নয়, জেলার বিভিন্ন স্থানে কালেক্টর বাজার স্থাপন করে স্থায়ীভাবে সরকার নির্ধারিত মূল্যের বাজার ব্যবস্থা চালু করা হবে। বাজারের ব্যবসায়ীরা যাতে এই বাজারের দেখাদেখি উদ্বুদ্ধ হয় এবং ক্রেতা সাধারণের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি করে তার আহ্বান জানাই।