ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ বলেছেন, কৃষিজমি কেবল শস্য উৎপাদনক্ষেত্র নয়। কৃষিজমি আমাদের অর্থনীতির প্রাণ এবং আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তি।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) ভূমি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইন, ২০২৪ (খসড়া) চূড়ান্তকরণ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমান, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সবুর মন্ডল, ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকী, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার যুগ্ম সচিব মো. খলিলুর রহমান খসড়া আইনটি উপস্থাপন করেন।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং দ্রুত শিল্পায়ন ও নগরায়নের কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভূমির মতো অমূল্য সম্পদ রক্ষার জন্য শক্তিশালী আইন প্রণয়ন করা জরুরি বলে মনে করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এজন্য তার নির্দেশনায় ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইন, ২০২৪ আইন প্রণয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। এই আইন স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন, বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং দীর্ঘমেয়াদী ব-দ্বীপ পরিকল্পনার সহজ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইন, ২০২৪ আইনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ন, আবাসন, শিল্প-কারখানা ও রাস্তা-ঘাট নির্মাণ রোধ করা; ভূমির শ্রেণি বা প্রকৃতি ধরে রেখে পরিবেশ রক্ষা ও খাদ্যশস্য উৎপাদন অব্যাহত রাখা; কৃষিজমি, বনভূমি, টিলা, পাহাড়, নদী, খাল-বিল ও জলাশয় সুরক্ষাসহ ভূমির পরিকল্পিত ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং ভূমির ব্যবহার নিশ্চিত করে পরিকল্পিত জোনিংয়ের মাধ্যমে ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহারে রাষ্ট্রীয় অনুশাসন নিশ্চিত করা।
টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা এবং ভূমি সম্পদের ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের অবিচল অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন মন্ত্রী। এ সময় উপস্থিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, আমরা এক যুগান্তকারী আইনের খসড়া চূড়ান্ত করার প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছি। উন্মুক্ত মতামতের ওপর ভিত্তি করে প্রাথমিক খসড়ায় ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় হালনাগাদ করা হয়েছে।
নারায়ন চন্দ্র চন্দ বলেন, যেহেতু আইনটি প্রণয়ন হলে প্রায় সকল সেক্টরে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, আমরা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মূল্যবান মতামত আহ্বান করছি। আমি আশা করছি, সবার প্রাপ্ত মতামতের ওপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত আইনের খসড়াটি কৃষি সমৃদ্ধিকে উৎসাহিত, খাদ্য সুরক্ষা জোরদার এবং আমাদের পরিবেশকে সুরক্ষিত করায় ভূমিকা রাখবে।
ভূমি সচিব জানান, এই আইনের মূল বিধানগুলোর মধ্যে রয়েছে ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, ভূসংস্থান এবং উদ্দিষ্ট ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে জমিকে স্বতন্ত্র অঞ্চলে নিখুঁতভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা।
সচিব জানান, বিশেষজ্ঞসহ সবার মতামতের ওপর ভিত্তি করে আইনের খসড়ায় ভূমি জোনিংয়ের জন্য ১০টি শ্রেণিবিন্যাসের প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে— আবাদি, আবাসিক, বাণিজ্যিক, জলাভূমি, নদী, বন, পাহাড়, রাস্তা, শিল্প এবং ধর্মীয় স্থান।
সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সকল বিষয় বিবেচনা করে এবং প্রস্তাবিত আইনের মৌলিক স্পিরিটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এ মাসের মধ্যেই ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইন, ২০২৪ (খসড়া) এর ওপর চূড়ান্ত মতামত লিখিতভাবে পাঠানোর অনুরোধ জানান ভূমি সচিব।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন—জাতীয় ভূমি জোনিং প্রকল্পের চিফ টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সাবেক সিনিয়র সচিব দিলওয়ার বখত, ল্যান্ড পলিসি স্পেশালিস্ট সাবেক গ্রেড-১ কর্মকর্তা মো. হান্নান মিয়াসহ ভূমি মন্ত্রণালয় ও এর আওতাভুক্ত দপ্তর/সংস্থা ও প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সভায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ ২২টির অধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।