Saturday, October 12, 2024

ওয়াসার প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ


ঢাকা মহানগরবাসীকে নিরাপদ পানি সরবরাহে ওয়াসার রয়েছে একাধিক শোধনাগার প্রকল্প। দাপ্তরিক নিয়ম অনুযায়ী, ওয়াসার কোনো প্রকল্পের প্রধান বা প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কথা একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর। কিন্তু, অনেকটা নিয়মবহির্ভূতভাবেই একজন অপেক্ষাকৃত স্বল্প অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রকৌশলীকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে, জুনিয়র প্রকল্প পরিচালকের অধীনে ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলীরা কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে ওয়াসার প্রকৌশলীদের ভেতরে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) পানি শোধনাগার প্রকল্পের প্রধান ওই প্রকৌশলীর নাম মোস্তাফিজুর রহমান। ৩০ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে তাকে বসানো হয়েছে প্রকল্প প্রধানের পদে। তার বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবের কাছে প্রতিবাদ ও নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন অন্য প্রকৌশলীরা।

অভিযোগ উঠেছে, দায়িত্ব পেয়েই দুর্নীতির ডালা সাজিয়ে বসেছেন প্রকৌশলী মোস্তাফিজ। বিদেশি একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন তিনি, এমন অভিযোগ সামনে এসেছে। অতিরিক্ত শর্ত ও অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বলা হচ্ছে, একটি নির্দিষ্ট দেশের নির্দিষ্ট কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতে টেন্ডারে বিশেষ শর্ত যোগ করিয়েছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তদন্ত করার দাবি জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। 

সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারের পানি সরবরাহের পাইপলাইন বসানোর প্রকল্পে ঠিকাদার নিয়োগের ক্ষেত্রেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে অনিয়মের বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছেন বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এক প্রতিনিধি।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পানি শোধনাগারের পাইপলাইন প্রকল্পের দরপত্র পরবর্তী মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান জিপসামকে কাজ দিতে ঢাকা ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের নির্দেশে সর্বোচ্চ প্রভাব খাটাচ্ছেন প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান। বিশ্বব্যাংক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে সেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সরাসরি জোগসাজশ রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় এবার পানি শোধনাগার প্ল্যান্ট ফেজ ৩-এর প্রাকযোগ্যতার ক্ষেত্রে ফরাসি প্রতিষ্ঠান ডিগ্রিমন্ট ও সুইজ ইন্টারন্যাশনালকে সুবিধা দিতে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি অভিজ্ঞতার সনদসহ নানা শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এই দুই প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশি এজেন্টদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে একটি প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ সুবিধা দিতে প্রশ্নবিদ্ধ টেন্ডারের শর্ত দিয়েছেন বলে প্রকল্প পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে দেওয়া চিঠিতে ক্ষুব্ধ প্রকৌশলীরা অভিযোগ করেছেন, ঢাকা ওয়াসার ‘সায়েদাবাদ শোধনাগার ফেজ-৩’ প্রকল্পের পরিচালক পদটি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদমর্যাদার হলেও ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রকল্প পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা ওয়াসায় তার ওপরে প্রায় ৩০ জন ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলী থাকা সত্ত্বেও বিশেষ সুবিধা পাকাপোক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ মেগা প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, আপনি আমাদের জনসংযোগ শাখায় যোগাযোগ করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন,  বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles