Tuesday, June 24, 2025

এক জেলায় ৪০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রির আশা


‘লিচুর রাজ্য’ খ্যাত দিনাজপুরে জমে উঠেছে বেচাকেনা। এরই মধ্যে বাজারে এসেছে মাদ্রাজি, বেদানা, বোম্বাই ও চায়না-থ্রি জাতের লিচু। বর্তমানে খুচরায় ১০০ লিচু সর্বনিম্ন ৪০০ ও সর্বোচ্চ এক হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। শুরুতেই ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরা। তবে দাম বেশি হওয়ায় অস্বস্তিতে আছেন ক্রেতারা।

যদিও বাজারে ওঠা এসব লিচুর অনেকগুলো এখনও পরিপূর্ণভাবে পাকেনি। কৃষি বিভাগের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, মাদ্রাজি ছাড়া অন্য জাতের লিচু বাজারে আসার সময় হয়নি এখনও। তাদের হিসাবে, ১০ জুন থেকে বাজারে আসার কথা ছিল। তবে চাষি ও বাগানিরা বলছেন, এবার অতিরিক্ত গরম ও ঝড়ে অনেক লিচু নষ্ট হয়ে গেছে। এজন্য লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে আগেভাগেই বাজারজাত করছেন। 

লিচুর সবচেয়ে বড় বাজার বসেছে শহরের কালিতলা এলাকার নিউমার্কেটে। এখানে ১০-১১ দিন আগে থেকে বিক্রি শুরু হয়েছে। সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সরব বাজার। প্রতিটি দোকানে সবুজ পাতা বিছিয়ে তার ওপর লিচু সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে হাঁকডাক দিচ্ছেন বিক্রেতারা।

  বাজারে এসেছে মাদ্রাজি, বেদানা, বোম্বাই ও চায়না-থ্রি জাতের লিচু

রবিবার (০২ জুন) সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানে পাওয়া যাচ্ছে মাদ্রাজি, বেদানা, বোম্বাই ও চায়না-থ্রি ও হাড়িয়া জাতের লিচু। তবে পরিপূর্ণ পেকে যেমন লাল বর্ণ কিংবা খয়েরি হয়ে ওঠে, তা খুব একটা দেখা যায়নি। বেশিরভাগই সবুজ। কিন্তু আঁটি পরিকক্ব দেখা গেছে।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাদ্রাজি লিচুর হাজার তিন থেকে তিন হাজার ৫০০, বোম্বাই তিন থেকে তিন হাজার ৮০০, বেদানা পাঁচ হাজার ৫০০ থেকে আট হাজার, হাড়িয়া সাত থেকে নয় হাজার এবং চায়না-থ্রি আকারভেদে আট থেকে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। হিসাবে সর্বনিম্ন তিন টাকা থেকে ১৬ টাকা পর্যন্ত পিস বিক্রি হচ্ছে। সেটিও আবার পাইকারিতে। খুচরা বাজারে এগুলোর পিস চার থেকে ১৭-১৭ টাকা পড়ছে। এই দামে ক্রেতারা অখুশি হলেও কৃষক ও ব্যবসায়ীরা খুশি। 

দাম নিয়ে অস্বস্তির কথা জানিয়ে সদরের মিশনরোড এলাকা থেকে লিচু কিনতে আসা সিরাজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ছেলেটা ঢাকায় থাকে। তার জন্য কিছু ফল পাঠাবো। সঙ্গে নিজেরাও খাবো। কিন্তু লিচুর যে দাম, তাতে কিনতে পারিনি।’

সদরের সুইহারি এলাকার অলোক দাস বলেন, ‘১০০ মাদ্রাজি লিচু কিনেছি ৩৫০ টাকায়। বেদানা জাতেরগুলো ভালো। কিন্তু দাম অনেক বেশি। একেকটির দাম ৯ টাকা। আমার সাধ্যের বাইরে।’ 

বরিশাল থেকে লিচু কিনতে আসা ফিরোজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি সব জেলায় ফলের ব্যবসা করি। লিচু কিনে বিভিন্ন জেলায় পাঠাবো। এখানের লিচুর বেশ চাহিদা আছে। কিন্তু এবার দাম বেশি।’

বর্তমানে খুচরায় ১০০ লিচু সর্বনিম্ন ৪০০ ও সর্বোচ্চ এক হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে

ঢাকা থেকে আসা আরশাদ আলী বলেন, ‘এবার শুরুতেই বাজার চড়া। অনেক লিচু এখনও পুরোপুরি পাকেনি। আবার দুদিন আগে ঝড়ে যেসব গাছের ডাল ভেঙে গেছে সেসব লিচু নিয়ে এসেছেন বাগানি ও চাষিরা। এখনও কিনি নাই। আরও দুই-তিন দেখি, দাম আরেকটু কমলে কিনবো।’

এবার ফলন কম হয়েছে জানিয়ে সদরের ইত্যাদি ফল ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী মেহেরুল ইসলাম আঙ্গুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তাই দাম বেশি। আমি বাগান থেকে কিনে বাজারে খুচরায় বিক্রি করি। ফলন কম হওয়ায় সামনে দাম আরও বাড়তে পারে। বেদানার হাজার ছয় থেকে নয় হাজার, চায়না থ্রি ১২ থেকে ১৬ হাজার, মাদ্রাজি তিন হাজার ৫০০ থেকে চার হাজার আর বোম্বাই তিন থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করছি।’ 

হেলাল ফল ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী গোলাম রব্বানী রকি বলেন, ‘যদি গাছে বেশি ফলন হতো, তাহলে দাম একটু কম হতো। এ ছাড়া ঝড়ের কারণে অনেক গাছের লিচু ঝরে গেছে। খরার কারণে কিছু ফেটে গেছে এবং ঝলসে গেছে। সব মিলিয়ে ফলন খারাপ এবার। এজন্য চাহিদা থাকলেও দেওয়া যাচ্ছে না।’ 

স্থানীয় লিচু ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, ‘বেদানা ছয় থেকে সাত হাজার, মাদ্রাজি তিন হাজার ৫০০ থেকে চার হাজার, চায়না থ্রি ১১ হাজার থেকে ১২ হাজার, বোম্বাই তিন থেকে তিন হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি করছি। তবে এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় ফলন কম হওয়ায় দাম বেশি। তবে চাহিদা আছে বেশ।’ 

লিচু ব্যবসায়ী মোকাররম হোসেন বলেন, ‘এবার বাজার দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। কারণ ফলন খুবই কম। অন্যান্য বছর যেখানে বাজার দেড় মাসের মতো থাকতো, এবারে এক মাসের মধ্যেই লিচু শেষ হয়ে যাবে।’ 

শুরুতেই ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরা

সদরের দক্ষিণ নগর এলাকার চাষি বেনু রাম সরকার বলেন, ‘এখন মাদ্রাজি লিচু আমাদের এলাকায় নেই। আগেভাগেই সব বিক্রি হয়ে গেছে। কারণ যতই গাছে রাখা হচ্ছে, ততই ফেটে যাচ্ছে। বাজার ধরতে আমরা আগেভাগেই সব বিক্রি করে দিয়েছি। তবে অন্য জাতের কিছু লিচু এখনও বাগানে আছে।’

একই উপজেলার বোলতৈড় এলাকার চাষি সেলিম রেজা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঝড়ের কারণে আমার বেশিরভাগ গাছের লিচু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই আগেভাগেই বিক্রি করে দিয়েছি। যদি আবার ঝড় হয় তাহলে আবার ক্ষতি হবে। এখন বিক্রি করে ভালো দাম পেয়েছি।’ 

সদরের মাসিমপুর এলাকার মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘এবার কয়েক দফায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি আমরা। এখন গাছে লিচু রাখলে ক্ষতির আশঙ্কা আছে। এজন্য কেউ কৃষি বিভাগের দেওয়া সময়ের অপেক্ষা করেননি।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর দিনাজপুর হর্টিকালচার সেন্টারের তথ্যমতে, জেলায় কয়েক জাতের লিচু উৎপাদন হয়। এর মধ্যে মাদ্রাজি পরিপক্ব হয় মে মাসের শেষের দিকে। বোম্বাই ও বেদানা পরিপক্ব হয় জুন মাসের ১০ তারিখে, সবশেষে পরিপক্ব হয় চায়না থ্রি। কৃষি বিভাগের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, মাদ্রাজি ছাড়া অন্য জাতের লিচু বাজারে উঠার সময় হয়নি এখনও।

লিচুর সবচেয়ে বড় বাজার বসেছে শহরের কালিতলা এলাকার নিউমার্কেট

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর দিনাজপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক মো. এজামুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঝড় ও গরমে ক্ষতির আশঙ্কায় চাষিরা আগেভাগেই লিচু বিক্রি শুরু করেছেন। জেলার সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে লিচু গাছ রয়েছে। আমাদের ধারণা ৪৫ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন হবে। এতে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার বেচাকেনা হবে। যদিও দাম নির্ভর করছে প্রকৃতি ও বাজারের ওপর। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং বাজার ঠিক থাকলে কৃষক ও বাগানিরা লাভবান হবেন।’

এবার বৈরী আবহাওয়ার কারণে গাছেই লিচু ফেটে যেতে শুরু করে এবং ঝলসে গেছে জানিয়ে এজামুল হক আরও বলেন, ‘বেশি দামের আশায় আগেভাগেই অপরিপক্ব লিচু বাজারজাত করেছেন চাষিরা। আমাদের হিসাবে মাদ্রাজি বাজারে আসার কথা। বাকিগুলো ১০ জুনের পরে আসার কথা ছিল। অথচ সব লিচু বাজারে চলে এসেছে। চাষিরা বলেছেন গাছে রাখলে ক্ষতি হয়। পরে বাজারমূল্য নাও পেতে পারেন। এমন আশঙ্কায় সবাই বিক্রি করছেন। তবে গরম ও ঝড়ে লিচু ক্ষতিগ্রস্ত হয় এটাও ঠিক।’




👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles