Monday, May 19, 2025

ঋণ খেলাপি ধরতে আলাদা ইউনিট গঠনের নির্দেশ


কোনো ব্যক্তি নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি হয়ে তা পরিশোধ করার ৫ বছরের মধ্যে কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবে না। একই সঙ্গে এসব খেলাপিরা রাষ্ট্রীয় কোনো সম্মাননা বা পুরস্কারও পাবে না। তাদের শনাক্ত করতে আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ইউনিট গঠন করতে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃত খেলাপী ঋণগ্রহীতা কোনো রাষ্ট্রীয় পুরস্কার বা সম্মাননা পাওয়ার যোগ্য হবেন না, তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গাড়ি, জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট ইত্যাদির নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হবে। কোনো ঋণ গ্রহীতা ইচ্ছাকৃত খেলাপী হিসাবে চিহ্নিত হলে সংশ্লিষ্ট ঋণ গ্রহীতা ঋণ পরিশোধ করে অব্যাহতি প্রাপ্তির পর পাঁচ বছর না হওয়া পর্যন্ত কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানি বা ব্যাংক কোম্পানীর পরিচালক হতে পারবে না।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অব্যাবহিত দুই ধাপ নিচের কর্মকর্তার অধীনে প্রধান কার্যালয়ে ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপী ঋণগ্রহীতা শনাক্তকরণ ইউনিট’ নামে একটি পৃথক ইউনিট গঠন করতে হবে। এ ইউনিট ২০২৩ এ প্রদত্ত ইচ্ছাকৃত খেলাপী ঋণগ্রহীতার সংজ্ঞা অনুযায়ী ফাইন্যান্স কোম্পানি কর্তৃক তাদের কোনো খেলাপি ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি হাচ্ছাকৃত খেলাপী ঋণগ্রহীতা কি না তা শনাক্ত করতে হবে। খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার তৎপরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে ওই ঋণগ্রহীতা ইচ্ছাকৃত খেলাপী কি না তা নিরূপণের লক্ষ্যে বিবেচ্য বিষয়সমূহ বিবেচনায় নিয়ে ফাইন্যান্স কোম্পানির সংশ্লিষ্ট ইউনিট কর্তৃক পর্যালোচনাপূর্বক শনাক্ত করতে হবে। তবে যৌক্তিক কারণে বর্ণিত সময়ের মধ্যে শনাক্ত করা সম্ভব না হলে ফাইন্যান্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমোদনক্রমে ওই সময় আরও ৩০ দিন বাড়ানো করা যাবে।

ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ গ্রহীতা চূড়ান্তকরণের বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানী ইচ্ছাকৃত খেলাপী ঋণগ্রহীতা হিসেবে শনাক্ত হলে তা চূড়ান্তকরণের ক্ষেত্রে কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে এর মধ্যে কোনো খেলাপী ঋণগ্রহীতা ইচ্ছাকৃত খেলাপী ঋণগ্রহীতা হিসেবে শনাক্তকৃত হলে শনাক্তকরণের কারণ উল্লেখপূর্বক সংশ্লিষ্ট ঋণ গ্রহীতাকে তার বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ১৪ কর্মদিবস সময় প্রদান করতে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা বক্তব্য প্রদানে ব্যর্থ হলে অথবা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণগ্রহীতা কর্তৃক প্রদত্ত বক্তব্য গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হলে বা না হলে ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা শনাক্তকরণ ইউনিট’  কর্তৃক এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে ফাইন্যান্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। তবে জাতীয় শিল্প নীতিতে বর্ণিত সংজ্ঞানুযায়ী বৃহৎ শিল্প খাতের ৭৫ কোটি ও তদূর্ধ্ব, ‘মাঝারি শিল্প’ খাতের ৩০ কোটি ও তদূর্ধ্ব এবং অন্যান্য খাতের ১০ কোটি ও তদূর্ধ্ব স্থিতিসম্পন্ন ঋণের ক্ষেত্রে ফাইন্যান্স কোম্পানির নির্বাহী কমিটির পরিচালক পর্ষদের অনুমোদন গ্রহণ আবশ্যক হবে।

ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে বলা হয়েছে, ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩ এর ৩০(৯) ধারার আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার নিকট ইচ্ছাকৃত খেলাপী ঋণগ্রহীতাদের তালিকা প্রেরণ করতে পারবে এবং তাদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানীজ অ্যান্ড ফার্মস এর নিকট কোম্পানি নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করলে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানি বা ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা হিসাবে তালিকাভুক্ত হলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩ এর ৩০(১০) এ বর্ণিত বিধান অনুসারে তার পরিচালক পদ শূন্য ঘোষণা করা হবে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চূড়ান্তভাবে ইচ্ছাকৃত খেলাপী ঋণগ্রহীতা হিসেবে তালিকাভুক্ত হলে এবং উক্ত তালিকাভুক্তির বিরুদ্ধে আপিল করা না হলে অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক আপিল নামঞ্জুর করা হলে সংশ্লিষ্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি উক্ত ঋণ গ্রহীতাকে দুই মাস সময় প্রদান করে তার নিকট প্রাপ্য সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত প্রদানের জন্য নোটিশ জারি করবে। নোটিশ প্রাপ্তির দুই মাসের মধ্যে ইচ্ছাকৃত খেলাপী ঋণগ্রহীতা তার নিকট প্রাপ্য অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে, সংশ্লিষ্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি পরিচালক পর্ষদের অনুমোদনক্রমে উক্ত ঋণ গ্রহীতার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করবে। এরূপ ফৌজদারি মামলা দায়ের করা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট ঋণ বা অগ্রিম বা পাওনা আদায়েরক্ষেত্রে অর্থ ঋণ আদালতের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে না।

নির্দেশনা লঙ্ঘনের জন্য জরিমানার বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানি কর্তৃক উপরে বর্ণিত নির্দেশনা লঙ্ঘন করা হলে অথবা কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানি জ্ঞাতসারে বা ইচ্ছাকৃতভাবে বর্ণিত নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছে মর্মে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট বিবেচিত হলে ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে উক্ত লঙ্ঘনের জন্য সংশ্লিষ্ট ফাইন্যান্স কোম্পানিকে ৫০ লাখ টাকা এবং অনধিক ১ কোটি টাকা জরিমানা আরোপ করা হবে। যদি উক্ত লঙ্ঘন অব্যাহত থাকে, তাহলে উক্ত লঙ্ঘনের প্রথম দিনের পর প্রত্যেক দিনের জন্য অতিরিক্ত অনূর্ধ্ব ১ লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করা হবে। 



Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles