আসন্ন ঈদযাত্রায় উত্তরবঙ্গে পথে টাঙ্গাইলে সিঙ্গেল সড়কে যানজটের শঙ্কায় রয়েছেন পুলিশ, যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা। এবারের ঈদের ছুটিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের সেতুর পূর্বপ্রান্তের সংযোগ সড়কের প্রায় আট কিলোমিটার সড়ক যানজটের জন্য দুর্ভাবনা কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই মহাসড়কের টাঙ্গাইল জেলার অংশের মধ্যে পড়েছে ৬৫ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যানবাহন চার লেনের সুবিধায় কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পর্যন্ত আসতে পারে। এলেঙ্গা-রংপুর চার লেন প্রকল্পের আওতায় সেতুর পূর্বপ্রান্তের সংযোগ সড়কের এলেঙ্গা থেকে সেতুর দিকে আড়াই কিলোমিটার চার লেন সড়ক নির্মাণ হয়েছে। অপর দিকে সেতুর পূর্বপ্রান্তের গোল চত্বর থেকে জোকারচর পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়ক চারলেন হয়েছে। মাঝে প্রায় আট কিলোমিটার রয়ে গেছে দুই লেনের সড়ক। আর এই আট কিলোমিটারে যানজটের আশঙ্কা করছেন পুলিশ ও সংশ্লিষ্টরা।
তবে যানজট যাতে না হয় সে জন্য সড়ক সংস্কারসহ বিভিন্ন প্রদক্ষেপ নিয়েছে সড়ক ও জনপদ এবং পুলিশ বিভাগ।
পুলিশ ও সেতুর টোল প্লাজা সূত্র জানায়, স্বাভাবিক অবস্থায় বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০ হাজার যানবাহন পারাপার হয়। কিন্তু ঈদের ছুটি শুরু হলে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। ঈদের সামনে যানবাহন পারাপারের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তাই প্রতি বছর ঈদে দেখা দেয় যানজট।
সোমবার (২৫ মার্চ) মহাসড়কের মির্জাপুর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ঘুরে চারলেন সড়ক এবং এর দুই পাশে সার্ভিস লেন রাস্তায় দেখা যায়, কোথাও কোনো সমস্যা নেই। চারলেন নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলাম জানান, এলেঙ্গা রংপুর চারলেন সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আড়াই কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অনুরূপভাবে সেতুর পূর্বপ্রান্তে তিন কিলোমিটার চার লেন সড়ক চালু হয়ে গেছে। তবে মাঝে প্রায় আট কিলোমিটার চার লেন প্রকল্পের কাজ চলছে।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, ওই আট কিলোমিটার অংশের কোথাও মাটি ফেলার কাজ হচ্ছে, আবার কোথাও সেতু, কালভার্ট নির্মাণ কাজ চলছে। এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাস্তার পাশে বৈদ্যুতিক খুঁটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সেখানে সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে।
বগুড়ার ট্রাক চালক আবু হানিফ বলেন, স্বাভাবিক সময়ে রাতে অনেক সময় এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয়। ঈদের ছুটিতে যানবাহনের চাপ বাড়লে যানজট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। অনেক সময় চালকদের বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর জন্য যানজট হয়ে থাকে।
টাঙ্গাইলের ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) রফিকুল ইসলাম সরকার জানান, যানবাহনের চাপ বেশি হলে এলেঙ্গা থেকে উত্তরবঙ্গগামী সড়ক একমুখী (ওয়ানওয়ে) করে দেয়া হবে। তখন উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী যানবাহন সেতু পার হওয়ার পর ভূঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা পর্যন্ত চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে। এজন্য সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সিনথিয়া খান জানান, ঈদকে সামনে রেখে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সংস্কার করা হচ্ছে। যানবাহনের চাপ বাড়লে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর ঢাকাগামী যানবাহন ভূঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা পর্যন্ত চলাচলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ বিভাগ। তাই ভূঞাপুর এলেঙ্গা সড়কের সংস্কার করা হচ্ছে। নিয়মিত এ কাজ তদারকি করা হচ্ছে। দুই এক দিনের মধ্যেই এর সংস্কার কাজ শেষ হবে।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরফুদ্দীন জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশে ৬৫ কিলোমিটার পড়েছে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপ্রান্তের সংযোগ সড়কের প্রায় আট কিলোমিটার অংশ তাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পর সাত শতাধিক পুলিশ মহাসড়কে মোতায়েন থাকবে। ঈদে মানুষ নির্বিঘ্নে যাতে ঘরে ফিরতে পারে সে জন্য জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।