Saturday, May 17, 2025

ইমানদারের প্রতি আল্লাহর প্রণোদনা


শান্তিময় জীবনব্যবস্থার নাম ইসলাম। এখানে জটিল-কুটিল ও কপটতার স্থান নেই। সত্য-সুন্দর ও সরল পথের অনুসারীরাই মূলত মুমিন-মুসলমান। অথচ আজকাল কিছু লোক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করে, মুসলিম পরিচয় ধারণ করে ইসলামের বিপক্ষে অবস্থান নিতে কুণ্ঠাবোধ করে না।

আল্লাহর কোনও বান্দাকে কেউ যদি কখনও মুনাফিক বলে সম্বোধন করে, তবেসে যারপরনাই রাগান্বিত হয়ে যায়। কিন্তু অনেকের মধ্যেই এই মুনাফিকির নমুনা পাওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা ও তার রাসুলের (সা.) ওপর ইমান আনয়নকারী ব্যক্তি যে সম্পদ লাভ করে, স্বভাব-চরিত্রে তার বৈপরীত্য যদি পরিলক্ষিত হয়, তবে মুনাফিকির প্রভাব প্রকাশ পায়।

মান্যবর ওলামায়ে কেরাম যখন সমাজে অন্যায়-অসঙ্গতি ও প্রতিকূল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোনও দিকনির্দেশনা দেন, তখন একশ্রেণির নকল মুমিনের আবির্ভাব ঘটে। ইসলামের সরল পথ থেকে তারা সটকে পড়েন! তখন তাদের মুনাফিক ছাড়া আর কী বলা যায়?

রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে মুনাফিকদের স্বভাব-চরিত্রের ব্যাপারে উল্লেখ করেন, ‘মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী, এরা (স্বভাব-চরিত্রে) একে অপরের মতোই। তারা (উভয়েই মানুষকে) অসৎ কাজের আদেশ দেয় ও সৎকাজ থেকে বিরত রাখে এবং (আল্লাহ তাআলার পথে খরচ করা থেকে) উভয়েই নিজেদের হাত বন্ধ করে রাখে; তারা (যেমনি এ দুনিয়ায়) আল্লাহ তাআলাকে ভুলে গেছে, আল্লাহ তাআলাও (তেমনি আখিরাতে) তাদের ভুলে যাবেন; নিঃসন্দেহে মুনাফিকরা সবাই পাপিষ্ঠ। (সুরা: আত-তাওবাহ, আয়াত: ৬৭)

মুনাফিকরা দুনিয়ার স্বার্থের জন্য হেন কাজ নেই করতে পারে না। আল্লাহ তাআলা ইমানদার মানুষের প্রতি যেমন দয়া করে প্রণোদনার হাত প্রসারিত করেন, তেমনি মুনাফিকদের প্রতি মারাত্মক ক্রোধান্বিত হন। আহকামিল হাকিমিন আল্লাহ কোরআন মাজিদে ‘(এ) মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী এবং কাফিরদের জাহান্নামের ভয়াবহ আগুনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যেখানে তারা চিরকাল (ধরে জ্বলতে) থাকবে, (জাহান্নামের) এ (আগুনই) হবে তাদের জন্য যথেষ্ট, তাদের ওপর আল্লাহ তাআলার গজব (নাজিল হোক), তাদের জন্য রয়েছে এক চিরস্থায়ী আজাব। (সুরা: আত-তাওবাহ, আয়াত: ৬৮)

আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের হাজারো নিয়ামতের সাগরে অবগাহন করেও অকৃতজ্ঞ বান্দাদের অনেকেই অহংকারের কারণে মূলত আল্লাহ ও তার রাসুলের (সা.) বিরুদ্ধাচরণকে শিল্প-সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রজ্ঞা মনে করে নিজেদের বড়ত্ব জাহিরে লিপ্ত হয়। কিন্তু আল্লাহ তাআলার সূক্ষ্ম দৃষ্টিকে ফাঁকি দেওয়া কস্মিনকালেও তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(তোমরা) ঠিক তাদেরই মতো, যারা তোমাদের আগে এখানে প্রতিষ্ঠিত) ছিল, তারা শক্তিতে ছিল তোমাদের চাইতে প্রবল, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি তাদের তোমাদের চেয়ে ছিল বেশি; দুনিয়ার যে ভোগ-বিলাস তাদের ভাগ্যে ছিল তা তারা ভোগ করে গেছে, অতঃপর তোমাদের ভাগে যা আছে, তোমরাও তা ভোগ করে (একদিন) চলে যাবে, যেমনি করে তোমাদের আগের লোকেরা তাদের যে পরিমাণ ভোগ করার ছিল তা শেষ করে (চলে) গেছে। তারা যেমন অনর্থক কাজকর্মে ডুবে থাকত, তোমরাও তেমনি অর্থহীন কথাবার্তায় ডুবে আছ। এরা হচ্ছে সেসব লোক, দুনিয়া-আখিরাতে যাদের কর্মফল বিনষ্ট হয়ে গেছে, আর (সত্যিকার অর্থে) এরাই হচ্ছে নিদারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সুরা: আত-তাওবাহ, আয়াত: ৬৯)

এদিকে আল্লাহ রাহমানুর রাহিম তার অনুগত বান্দাদের ব্যাপারে অনবহিত নন, দ্বীন ইসলামের পথে চলার জন্য তাদের শক্তি জোগান এবং অনুপ্রাণিত করেন।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, (অন্যদিকে) মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা হলো একে অপরের বন্ধু। এরা (মানুষকে) ন্যায় কাজের আদেশ দেয়, অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে, তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত আদায় করে, (জীবনের সব কাজে) আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসুলের (সা.) (বিধানের) অনুসরণ করে, এরাই হচ্ছে সেসব মানুষ; যাদের ওপর আল্লাহ তাআলা অচিরেই দয়া করবেন; অবশ্যই আল্লাহ তাআলা পরাক্রমশালী, কুশলী ৷ (সুরা: আত-তাওবাহ, আয়াত: ৭১)

যারা আল্লাহর হুকুম মেনে জীবন যাপন করে; সতত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুকরণ ও অনুসরণে অগ্রসর, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়ায় শান্তি ও আখিরাতে মনোরম জান্নাত।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘(এ ধরনের) মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের আল্লাহ তাআলা এমন এক সুরম্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার তলদেশ দিয়ে ঝরনাধারা প্রবহমান থাকবে, সেখানে তারা চিরদিন অবস্থান করবে, (চিরস্থায়ী) জান্নাতে তাদের জন্য সুন্দর সুন্দর বাসস্থানের ব্যবস্থা থাকবে; (সেদিনের) সবচেয়ে বড় (নিয়ামত) হবে (বান্দার প্রতি) আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি, এটাই হবে (সেদিনের) সবচেয়ে বড় সাফল্য। (সুরা: আত-তাওবাহ, আয়াত: ৭২)

লেখক: সাংবাদিক



Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles