Saturday, October 5, 2024

আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরে হতভম্ব মানুষ


তিন দিন হয় বাড়ি ফিরেছি। বাড়ি বলছি, কিন্তু সেটা আর বাড়ি নাই। এক ঘরের জিনিস আরেক ঘরে ভেসে গেছে, মেঝে নষ্ট হয়ে খানাখন্দে ভরা। ফিরে এসে বলতে গেলে না খেয়ে আছি। চাল-ডাল-তেল আছে, রান্না করার অবস্থা নাই। ঘরের ভেতরে খাট আছে, তোশক নেই। তারপরও থাকছি, কিন্তু সাপখোপের ভয়ে ঘুমাতে পারি না। কুমিল্লার মালাপাড়ার বেশিরভাগ মানুষের এই অবস্থা। তাদের ঘর আছে দুয়ার নাই, খাবারের কোনও খোঁজ নেই। এদিকে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বুড়িচংয়ের মানুষ ফিরে এসে নিজের বাড়ি চিনতে পারছেন না। ‘এ ঘর আমারই ছিল’—এটা ভাবতেও ভয় তাদের। ঘরদুয়ার মেরামত করবেন কীভাবে, কেউই জানেন না। মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে জীবনের এই বিশাল পরিবর্তন মেনে নিতেই কষ্ট হচ্ছে তাদের।

বন্যা গেছে, কিন্তু কোনও কিছুই আর আগের মতো নেই, ছবি: ফোকাস বাংলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবশ্যই কিছু জিনিস মেনে নিয়ে ঘরে ঢুকতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে সেসব বিষয়ে ঘন ঘন প্রচার করতে হবে। তারা বলছেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নিজ বাড়িতে ফিরে এসে বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও জ্বালানির সংকটে পড়ে মানুষ। নিজ বাড়ি বসবাসের অনুপযোগী দেখে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন শুরুতেই। ফলে তার কাছে দ্রুত সহায়তা পৌঁছাতে হবে। কীভাবে বসবাস শুরু করবে, সে নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে দিকনির্দেশনা থাকতে হবে। ঘরবাড়ি আর আশপাশের এলাকা পরিষ্কার করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। বসবাসের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়া ঘরটিকেও নতুনভাবে গুছিয়ে নিতে হয়।

দেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আগস্টের শেষে এসে দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা। কিছু জায়গায় পানি নামতে শুরু করলেও নিচু অঞ্চলগুলোতে এখনও পানিবন্দি হয়ে আছে প্রচুর মানুষ। বন্যায় এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭ জনে। সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ফেনীতে ২৬ জন।

সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হালনাগাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পর সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে, ছবি: ফোকাস বাংলা

অনেক এলাকায় টিউবওয়েল ডুবে আছে। এতে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে এখনও সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন। অতি দ্রুত পুনর্বাসন প্রক্রিয়া এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা না হলে মানুষের মাঝে পেটের পীড়া ও চর্মরোগ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

যেসব টিউবওয়েল বন্যায় ডুবে গেছে, সেগুলোর পানি ডিসইনফেকশন না করে পান করা যাবে না উল্লেখ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়াটার এইড-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চাইলে তারা নিজেরাই করতে পারেন এই কাজ। ১০০ গ্রাম ব্লিচিং পাউডারের সঙ্গে দেড় থেকে দুই লিটার পরিমাণ পানি একটি জগ বা পাত্রে ভালো করে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। এরপর টিউবওয়েলের মূল অংশটি খুলে ফেলে পাইপের মধ্যে সেই মিশ্রণটি ঢেলে দিতে হবে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন, টিউবওয়েলের মূল অংশটি লাগিয়ে ৩০ মিনিট ধরে হাতল চাপতে থাকুন। এরপর নিরাপদ পানি পাওয়া যাবে।’

বন্যায় রেখে গেছে ক্ষত চিহ্ন, ছবি: ফোকাস বাংলা এদিকে ঘরে ফিরে সাপের ভয় পেয়ে বসেছে কুমিল্লা ও ফেনী এলাকার মানুষের। গত ১০ দিনে লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে ১১২ জন সাপে কাটা রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার কথা জানিয়েছে সিভিল সার্জনের কার্যালয়। শনিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে জেলা সিভিল সার্জন (সিএস) আহাম্মদ কবীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর মধ্যে সদর হাসপাতালে ৮০ জন, রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭ জন, রামগঞ্জে ১৪, কমলনগরে ১১ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

ছিল সাজানো সংসার, এখন যেন এক পরিত্যক্ত ভাগার, ছবি: ফোকাস বাংলা

বন্যা শেষে সাপের উপদ্রবের কারণ জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফিরোজ জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পানি ছিল যখন, তখন সাপ ছাদ বা ভেন্টিলেশনে আশ্রয় নিয়েছে। এরা এই পানির মধ্যে না খেয়ে ছিল। পানি সরে যাওয়ার পরে নেমে এসেছে এবং খাবার খুঁজছে। আবার বন্যার মধ্যে উজান থেকে অনেক সাপ ভেসে চলে এসেছে ভাটিতে। তাই পরিমাণ বেড়ে গিয়ে থাকতে পারে।’ করণীয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাড়িতে ফিরে শুরুতেই পুরো বাড়ি ভালো করে চেক করতে হবে। যেখানে কোনও স্তূপ আছে, সেখানে চট করে হাত দিয়ে দেওয়া যাবে না। আর রাতে অবশ্যই আলো নিয়ে চলাচল করতে হবে। এসব কাজ হাতে গ্লাভস আর পায়ে বুট পরে করার চেষ্টা করতে হবে।’

ঢলের পানিতে ভেসে গেছে গোছানো সংসার, রেখে গেছে কংকাল, ছবি: ফোকাস বাংলা পানি নেমে গেলে বাড়ির আশপাশে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিন। বাড়িতে ফেরার সময় করণীয় বলতে গিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘যা কিছু বন্যার পানির সংস্পর্শে এসেছে, সবই পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। যদি ধোয়ার পানি না থাকে, তাহলে কড়া রোদে শুকাতে হবে। যেসব সামগ্রী পানি শোষণ করে, যেমন- বালিশ, গদি, তোশক প্রভৃতি ফেলে দেওয়াই নিরাপদ। জানালা-দরজা খুলে দিয়ে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে শ্বাসকষ্টের মতো ভয়াবহ অসুখের মধ্যে পড়তে হবে।’




👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles