র্যাবের মধ্যস্ততায় উদ্ধার করা হয়েছে সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখার ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে। অপহরণের ৪৮ ঘণ্টা পর উদ্ধার সোনালী ব্যাংক বান্দরবানের রুমা শাখার ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে গিয়েছিলো অপহরণকারীরা। তাকে মুক্তি দিতে কোনো মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছিলো কি না সে বিষয়ে তাৎক্ষণিক কিছু জানা যায়নি।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটের দিকে নেজাম উদ্দীনকে পায় তারা। র্যাবের মধ্যস্ততায় উদ্ধার করা হয় সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখার ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে।
কীভাবে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, সরাসরি আমাদের হাতে দেয়নি। একটা নির্দিষ্ট জায়গায় তাকে রেখে গিয়েছিলো। আমরা চেয়েছি তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ ও নিরাপদে আনার জন্য। সেইভাবেই আমরা কিছু কৌশল অবলম্বন করে তাকে উদ্ধার করতে সম্ভব হয়েছি।
অপহরণকারীদের কোনো মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছিলো কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো টাকা পয়সা লেনদেন হয়েছে কি না সেটা আমরা আলোচনা করছি। আমাদের সঙ্গে অন্যান্য সংস্থাও কাজ করেছে। উনাদের সঙ্গে আলোচনা করে হয়তো বলতে পারবো।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন আমাদের কাছে ফেরত দেওয়া হয়ে তখন কোনো টাকা পয়সা দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন সোর্স ও সংস্থা কাজ করছিলো। তারা দিয়েছে কি না সেটা আলোচনার পর জানতে পারবো। কিন্তু যখন আমাদের মধ্যস্থতায় রেখে গেছে তখন কোনো অর্থের লেনদেন হয়নি। তবে র্যাবের এই কর্মকর্তা কোনো সংগঠনের নাম বলেননি।
এর আগে গত মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাত নয়টার দিকে পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ৭০ থেকে ৮০ জনের একটি সশস্ত্র দল সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখায় হামলা চালায়।
সন্ত্রাসীরা ব্যাংকের পাহারায় থাকা পুলিশ ও আনসারদের আটটি চায়নিজ রাইফেল, দুটি এসএমজি, চারটি শটগান ও ৪১৫ট রাউন্ড গুলি ছিনিয়ে নেয়। এরপর কাছের মসজিদেই প্রবেশ করে কেএনএফের সন্ত্রাসীরা। সেখান থেকে তারাবির নামাজে থাকা ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
এরপর বুধবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে থানচি উপজেলায় সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের দুটি শাখায় হামলা চালিয়ে ডাকাতি করে সন্ত্রাসীরা। সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে গুলি চালাতে চালাতে ব্যাংক দুটির শাখায় প্রবেশ করে। সেখান থেকে নগদ টাকা, ব্যাংকে কর্মরতদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় তারা। কেএনএফ সন্ত্রাসীরা নিজেদের অবস্থান জানান দিতেই এসব ঘটনা ঘটিয়েছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এরইমধ্যে জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম বলেন, রুমার ব্রাঞ্চ ম্যানেজার সুস্থ আছেন; তার সাথে কথা হয়েছে।
এদিকে পাহাড়ে কেএনএফের আস্তানায় জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার সদস্যরা সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিলো বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এর আগে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলো।
সেই আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত বছর অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া ও কেএনএফের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা’ কমিটি গঠন করা হয় গত বছরের মে মাসে। ওই কমিটির সঙ্গে গত ৫ মার্চ দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয় বেথেলপাড়ায়। রুমার উপজেলা পরিষদ বেথেলপাড়ার কাছেই অবস্থিত।
এদিকে চুক্তিভঙ্গ করে সশস্ত্র কার্যক্রম অব্যাহত রাখায় কেএনএফের সঙ্গে সব ধরনের আলোচনা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক ও বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা।
বাংলাদেশ জার্নাল/এসএস