Tuesday, June 24, 2025

৫ দিন আগে বাবা হয়েছিলেন মাসুদ, কী হবে স্ত্রী-সন্তান ও শয্যাশায়ী মায়ের


পাঁচ দিন আগে এক ফুটফুটে মেয়ে সন্তানের বাবা হয়েছেন। নিজের নামানুসারে মেয়েটির নাম রাখার পরিকল্পনা ছিল মাসুমা। ছোট্ট শিশুটিকে পৃথিবীর আলো দেখাতে স্ত্রী বিউটি আরার সিজারিয়ান অপারেশন হওয়ায় তিনিও অসুস্থ। বাবা বেঁচে নেই। মা অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন গ্রামে। নিজেও পঙ্গু। তার এই কষ্টের পৃথিবীতে আশার প্রদীপ হয়ে কন্যা সন্তানটিই ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। তাইতো পরম আনন্দে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ লিখে সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা করেন। সেই সঙ্গে নিজের এবং মেয়ের জন্য দোয়াও প্রার্থনা করেন।

বলছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদের কথা। হয়তো বছর গড়ালেই ফুটফুটে ছোট্ট মেয়েটির আলতো ঠোঁটে বাবা ডাক শুনতেন। কিন্তু সেই সৌভাগ্য যে তার ছিল না। বাবা হওয়ার চার দিনের মাথায় তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে নবজাতক শিশুর জন্য ওষুধ কিনতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন নগরীর বিনোদপুর এলাকায় তার ওপর দুর্বৃত্তরা হামলা করে। পরে মতিহার ও বোয়ালিয়া থানায় নেওয়ার পর অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় মাসুদকে। সেখানেই গভীর রাতে মারা যান।

পৃথিবীতে আব্দুল্লাহ আল মাসুদের মা, স্ত্রী আর চার দিনের ছোট্ট মেয়েটি আর ছাড়া আর কেউ নেই। কাছের বলতে একজন মামা রয়েছেন তার। তার মামার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সংবাদকর্মী পরিচয় দিতেই ফোনের ওপার থেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, ‘এই মুহূর্তে কথা বলার মতো তেমন কোনও পরিস্থিতিতে নেই আমি। ভাই পরে কথা বলেন। দোয়া রাখবেন। পরে যোগাযোগ করবেন। পরে কথা বলবেন।’ কান্নাভরা কণ্ঠটি শুনে নির্বাক থাকা ছাড়া আর কিছুই করার রইলো না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাবি শাখার সমন্বয়ক মাসুদ রানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে বলতে গেলে, আমার আন্দোলন হলো মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে। কোনও মানুষ যদি অপরাধীও হয়, মবের অধিকার নেই সেই বিচার নিজের হাতে তুলে নেওয়ার। আমাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য হলো, আইন তার গতিতে চলবে। এভাবে মবের মধ্যে একজন মানুষের মৃত্যু হওয়াটা খুবই দুঃখজনক এবং কষ্টদায়ক। এই ধরনের হামলার অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত।’

ছোট্ট মেয়ে শিশুটির এই পরিবারটিকে নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনের ভাবনা নিয়ে জানতে চাইলে ছাত্র উপদেষ্টা ড. আমিরুল ইসলাম কনক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উপাচার্যের পরামর্শে আমি এবং প্রক্টর মিলে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলাম। ওর পরিবারে চার দিন বয়সের একটি কন্যাসন্তান, স্ত্রী ও তার অসুস্থ মা রয়েছেন। তার স্ত্রীর চার দিন আগেই সিজার হয়েছে। তারা তাদের নিজ এলাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলে গেছেন। এখানে অভিভাবক বলতে তার মামা রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত বিধি অনুযায়ী তার বাচ্চার ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে সেই পরিবারটির জন্য আমরা সাহায্য করবো।’

এদিকে আব্দুল্লাহ আল মাসুদের এমন মৃত্যুর পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব জাহিদ নেওয়াজ খান তার ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে এক পোস্টে বলেন, ‘রাজশাহীতে পিটিয়ে পঙ্গু মানুষটাকে মেরে ফেলা একটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এরকম বর্বর খুনিদের হাতে জুলাই-আগস্ট মাসে শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন। ওরা ছিল পোশাকে, এরা পোশাক ছাড়া। এটাই পার্থক্য। তিন দিন আগে পিতা হওয়া মানুষটার বাচ্চাটা জীবনেও জানবে না বাবা কী জিনিস। মাসুদের প্রত্যেকটা খুনিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে- যেমন জুলাই-আগস্ট মাসের খুনিদের। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের এক মাসেরও বেশি সময় পর একটা হত্যাকাণ্ডকে জনরোষ বলার সুযোগ নেই। জনরোষও কোনও যুক্তি না। আগের সরকারের চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কতটা মানবিক, কতটা মানবাধিকারে বিশ্বাসী, সেটা বোঝা যাবে পঙ্গু মাসুদ হত্যাকাণ্ডে সরকার কত দ্রুত কী ব্যবস্থা নেয় তার ওপর।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান তার ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে পোস্ট করে বলেন, ‘এ ধরনের হত্যাকাণ্ড চরম বর্বরোচিত এবং জঘন্য। সে যেই হোক না কেন আর তার বিরুদ্ধে যত বড় অভিযোগই থাকুক না কেন এভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে আমি ধিক্কার জানাই। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারো নেই।’

এদিকে আব্দুল্লাহ আল মাসুদ নিহতের ১৮ ঘণ্টা পরও পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও প্রকার মামলার খবর পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি এস এম মাসুদ পারভেজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের এখানে কেউ কোনও অভিযোগ করেনি। তার বিষয়ে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া মতিহার থানায় হবে, সেখানে কেউ মামলা দায়ের করছে কি না আমি জানি না।’

এ বিষয়ে মতিহার থানার ওসি আরিফুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল সকালে ক্লাসে যাওয়ার পথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলের সামনে হামলার শিকার হন আবদুল্লাহ আল মাসুদ। এ সময় মাসুদের ডান পায়ের নিচের অংশ গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। বাঁ পা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেটে দেওয়া হয়েছিল তার হাতের রগ। পরে ২০২২ সালের ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়া হয় তাকে।




👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles