প্রতিবছর ইজতেমায় একটা সংবাদ প্রচার হয়, যৌতুকবিহীন বিয়ের আয়োজন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যারা ইজতেমায় আসেন, তারা এই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় অংশও নেন। প্রশ্ন হলো, যৌতুকবিহীন বিয়ের এই আয়োজন ইজতেমার মাঠে সম্ভব হলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সেই সচেতনতা দেখা যায় না কেন। কেন প্রতিবছর এত মানুষ আজও যৌতুকের শিকার হচ্ছেন।
আলেমরা মনে করেন, তাবলিগে এই আয়োজন সম্ভব হয় দ্বিনের শিক্ষার কারণে, দ্বিনের প্রতি ভালোবাসার কারণে। সেটা সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তারা। নারী অধিকারকর্মীরা বলছেন, এই মানুষগুলো ইজতেমার মাঠে এক ধরনের ধর্মীয় আবহে থাকেন, ফলে তারা এটার নিয়ত করতে পারেন। তবে তারা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যৌতুক নানাভাবে দেওয়া-নেওয়া হয়। জীবনের কোন স্তরে আর তাদের এ ধরনের কোনও চাহিদা তৈরি হবে কিনা, সেটি আমরা কেউ জানি না।
এবারও বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিন শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বাদ আসর টঙ্গীর ইজতেমার ময়দানে ৬৩টি যৌতুকবিহীন বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। যৌতুকবিহীন এ বিয়ে পড়ান ভারতের মাওলানা জুহায়ের। রেওয়াজ অনুযায়ী বয়ানমঞ্চের মিম্বরের কামরার পাশে শনিবার সকাল থেকেই যৌতুকবিহীন বিয়ের আয়োজন শুরু হয়। চলে আসর নামাজের আগ পর্যন্ত। নামাজের পর বিয়ে পড়ানো হয়। একটি রেজিস্টারে নাম তালিকাভুক্তির পর হবু দম্পতিদের স্বজনদের কাছে একটি করে ‘সিরিয়াল নম্বর’ দেওয়া হয়।
আইন ও সালিশকেন্দ্রের হিসাব বলছে, ২০২৪ সালে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ৭৭ নারী। এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের পর হত্যার শিকার হন ৩৬ জন এবং আত্মহত্যা করেন ৭ নারী। যদিও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এসব তথ্যাদি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে নেওয়া হয়। যৌতুকের বিষয়টি যেহেতু উভয়পক্ষ লুকিয়ে রাখতে চায়, সে কারণে বেশিরভাগ ঘটনা সামনে আসে না। এটার ভয়াবহতা বুঝতে হলে পারিবারিক নির্যাতন, হত্যা, আত্মহত্যা সবগুলো বিষয় মিলিয়ে দেখতে হবে। এদিকে, ২০২৪ সালে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫২৩ জন নারী। এর মধ্যে নির্যাতনের কারণে মারা গেছেন ২৭৮ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১৭৪ জন।
যৌতুকের কারণে নির্যাতনের সঠিক হিসাব পাওয়া না গেলেও যৌতুকের অভিযোগে দায়ের করা মামলার হিসাব পাওয়া যায়। ২০২৩ সালে তৎকালীন জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তরে ফেনী-২ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রশ্নের জবাবে তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছিলেন, ‘দেশের ৬৪ জেলার আদালতগুলোতে গত বছরের (২০২২) ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যৌতুক নিরোধ আইনে বিচারাধীন মোট মামলার সংখ্যা ৪১ হাজার ৬৯৩টি।
যৌতুকবিহীন বিয়ে ইজতেমায় সম্ভব হলে দেশের অন্যান্য জায়গায় কেন নয়— জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সমাজে দুটো কারণে যৌতুক প্রথা চলছে। এক. দ্বিনি শিক্ষা নেই, দ্বিনের প্রতি আন্তরিকতা নেই। আমাদের দেশে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নারীদের যে অধিকার, বিয়ের আসরে দেনমোহর থেকে যে তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, বিবাহের মধ্যকার যে ফরজ, সে বিষয়ে সচেতনতা কার্যক্রম নেই। সরকারিভাবেও সচেতন করে তোলা হয় না।’ তিনি মনে করেন, আলেমরা যদি সমাজে মানুষদের সচেতন করতে কাজ করেন, তাহলে পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে পারে। ধীরে ধীরে নারীকে মোহর দেওয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ, সে নিয়ে সচেতনতা তৈরি হবে। তিনি মনে করেন, যৌতুক এখনও সমাজে বিদ্যমান, কারণ আমাদের অজ্ঞতা। বরং নারীকে অনেক হক ও অধিকার ইসলাম দিয়েছে। আন্তর্জাতিক তাহাফফুজে খতমে নবুয়ত বাংলাদেশের এই মহাসচিব আরও বলেন, ‘তাবলিগে দ্বিনি বুঝ হচ্ছে—এটা ভ্রাম্যমাণ মাদ্রাসার মতো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সে কারণে এখানে এটা সম্ভব হয়।’ তিনি মনে করেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে আইন শক্তিশালীভাবে প্রয়োগের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
যৌতুকবিহীন বিয়ে ইজতেমায় সম্ভব হলে অন্যখানে কেন নয় প্রশ্নে অধিকারকর্মী শাহানা হুদা বলেন, ‘এর সঙ্গে সওয়াব হাসিলের আকাঙ্ক্ষা জড়িত। যেহেতু ইজতেমার ময়দানে আলেমরা একটা ধর্মীয় আবহ ও নিয়তের মধ্যে থাকেন, ফলে এটা সম্ভব হয়। সমাজে তাকে আরও অনেক ধরনের হিসাব-নিকাশের মধ্যে থাকতে হয়, ফলে তখন সেটি তার চিন্তার মধ্যে থাকে না।’
👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultractivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 bdphoneonline.com
👉 dailyadvice.us