Tuesday, February 4, 2025

মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের ফলে কী ক্ষতি হতে পারে বাংলাদেশের?


সাত মাসেরও বেশি সময় হলো ফিলিস্তিনে হামলা জারি রেখেছে ইসরায়েল। যুদ্ধ শুরুর পর সাত মাসে গাজায় প্রায় ৩৫ হাজার লোক নিহত ও প্রায় ৬০ হাজার লোক আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এমনকি গাজায় যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরায়েল, সেখানে অবিস্ফোরিত অস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ ধ্বংসস্তূপ অপসারণ করতেও অন্তত ১৪ বছর সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা। অন্যদিকে ইসরায়েলের দাবি, এই সময়ে তাদের অন্তত ১২০০ লোক নিহত হয়েছে। এই সংঘাতের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের দেশগুলোতেও।

এরইমধ্যে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করেছে সিরিয়া ও লেবাননের মাটিতে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যেও পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। অন্যদিকে ইয়েমেনের ইরানপন্থি হুথি বিদ্রোহীরাও লোহিত সাগরে ইসরায়েলগামী জাহাজে হামলা চালাচ্ছে। তুরস্ক ইসরায়েলের সঙ্গে সবরকম বাণিজ্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। এই উত্তেজনাকে ঘিরে ওঠানামা করছে জ্বালানি তেলের দাম। সেইসঙ্গে পাল্টাপাল্টি সমর্থন-বিরোধিতা জানিয়ে এই সহিংসতার সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইরান ও চীনসহ বিশ্বের পরাশক্তি দেশগুলোও। সব মিলিয়ে আরব ভূখণ্ডের এই যুদ্ধাবস্থার উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বিশ্বেই।

যুক্তরাষ্ট্র একদিকে ইসরায়েলকে সহিংসতা এড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছে, আবার কোটি কোটি ডলারের অস্ত্রও সরবরাহ করছে। জাতিসংঘ বার বার চেষ্টা করেও সংঘাতের ভয়াবহতা কমাতে ব্যর্থ হচ্ছে।  সহিংসতা দীর্ঘায়িত হলে বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাবের শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা। করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতির ঊর্ধ্বগতিতে কিছুটা ভাটা পড়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, ভূমধ্যসাগর পাড়ের এই সংঘাত প্রলম্বিত হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আবার নতুন করে কী প্রভাব পড়তে পারে?

প্রধানমন্ত্রীর শঙ্কা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ মে জাতীয় সংসদে বক্তব্য দেওয়ার সময় শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টির যে আভাস দেখা যাচ্ছে, তা বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা যায়। বিশ্ববাজারের অস্থিতিশীলতা, বাজার ব্যবস্থাপনায় অসামঞ্জস্যতা এবং বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সূত্রে দেশের মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়ার আশঙ্কা থাকে। সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে পণ্যের সাপ্লাই-চেন ক্ষতিগ্রস্ত হলে মূলত ইরান বা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে রফতানি সংশ্লিষ্ট পরিবহন খরচ বাড়তে পারে। এতে পণ্য তৈরি ও সরবরাহের ব্যয় বেড়ে গিয়ে রফতানিকারকরা কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে পারেন।

সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ফাইল ছবি)

এ বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে দেশের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকে যেন মধ্যপ্রাচ্যের চলমান ঘটনাপ্রবাহের ওপর নজর রাখে এবং এ বিষয়ে নিজ নিজ করণীয় নির্ধারণ করে। সংঘাত দীর্ঘ হলে কোন কোন সেক্টরে প্রভাব পড়তে পারে, তা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি।

জ্বালানি তেলের বিকল্প উৎস হিসেবে চীন, মরক্কো, তিউনিশিয়া, কানাডা ও রাশিয়া ইত্যাদি দেশের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদার করারও পরামর্শ দেন।

মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নির্ভরতা

মুসলিম দেশ হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে বরাবরই সুসম্পর্ক রেখে আসছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ পাকিস্তানের পক্ষ নিলেও একাত্তরের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় আরব দেশগুলো একে একে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি ও সাহায্য দিতে শুরু করে।

গত কয়েক দশকে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর বাংলাদেশের বড় ধরনের নির্ভরতা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের শ্রমশক্তির একটি বড় অংশ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাজ করছে এবং তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই কাজ করেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা (ফাইল ছবি)

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিভিন্ন দেশে কাজ করতে যাওয়া ১৩ লাখ প্রবাসী কর্মীর মধ্যে প্রায় ৮ লাখ কর্মী মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কর্মরত। এর মধ্যে সৌদি আরবে ৪ লাখ ৯৭ হাজার, সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) ৯৮ হাজার, কুয়েতে ৩৬ হাজার, ওমানে প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার, কাতারে ৫৬ হাজার, লেবাননে আড়াই হাজার এবং জর্ডানে ৮ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী গেছেন। মাঝখানে লোক যাওয়া কিছুটা কমলেও করোনা মহামারির পর তা আবার বেড়েছে।

জ্বালানি তেলের জন্যও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ কোটি ৫৫ লাখ ১ হাজার ৬৪৫ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল (১০ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকার) এবং পরিশোধিত জ্বালানি তেল আনা হয় ৪ কোটি ৮৫ লাখ ৮৫১ মেট্রিক টন (৪৮ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকার)। এই তেলের একটি বড় অংশই এসেছে সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও আবুধাবি থেকে।

যুদ্ধের কারণে কী কী সংকট আসতে পারে

বিশ্লেষকদের মধ্যে, আরবে যুদ্ধাবস্থার কারণে বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রধান আঘাত আসতে পারে আমাদের নির্ভরতার জায়গাগুলোতে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গিয়ে বড় ধরনের মূল্যস্ফীতি ঘটতে পারে, ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিস চলে যাবে সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের বাইরে। অন্যদিকে প্রবাসীরা চাপের মুখে পড়লে রেমিট্যান্স কমে গিয়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের পথ সীমিত হয়ে যাবে; যা দেশের অর্থনীতিতে আরও চাপ তৈরি করবে।

বাংলাদেশের জ্বালানি তেলের বড় উৎস মধ্যপ্রাচ্য (ছবি: সংগৃহীত)

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. দীন ইসলাম বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনা দীর্ঘায়িত হলে তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি এই দুই ধরনের প্রভাব পড়বে। তাৎক্ষণিকভাবে তেলের দাম বাড়লে পুরো বিশ্বেই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে, পরিবহন খরচ বাড়বে, ডলারের দাম নিয়ে অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে, টাকার মান কমে যাবে।’

‘দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে শ্রমবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রবাসীরা কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে আসতে পারেন। এতে করে রেমিট্যান্সও কমবে। আর বেশি পরিমাণ প্রবাসী কাজ হারালে আর্থ-সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হবে’, উল্লেখ করেন তিনি।

মধ্যপ্রাচ্য সংকটের কারণে এখনই বাংলাদেশের বড় মাপে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোনও কারণ নেই বলে মনে করছেন ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ইরাক বা লিবিয়ার যুদ্ধের সময় আমাদের কর্মীদের ফিরিয়ে আনতে হয়েছিল। ইসরায়েলে-ফিলিস্তিন সংঘাতকে কেন্দ্র করে এরকম কোনও শঙ্কা এখনই নেই। প্রভাবটা যে রাতারাতি পড়বে, এমন না। তবে সবসময় মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা ও তেলের বাজার আমাদের প্রভাবিত করে। কারণ আমরা তাদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরশীল। শীর্ষ যে ১০টা দেশ থেকে আমাদের সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে, তার মধ্যে ছয়টিই মধ্যপ্রাচ্যের— সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, ওমান ও বাহরাইন। এই দেশগুলোতে আগে থেকেই শ্রমবাজার সংকুচিত হচ্ছে। গত বছর শ্রমিক যাওয়া বাড়লেও রেমিট্যান্স আসা কিন্তু বাড়ছে না।

‘আমাদের মূল সংকটটা হচ্ছে আভ্যন্তরীণ। একবার তেলের দাম বাড়লে আর কমে না। বাইরে ১ টাকা বাড়লে, আমাদের এখানে ১০০ টাকা বাড়ে। যেমনটা খেজুরের ক্ষেত্রেও দেখেছি’, বলেন তিনি।      

সমাধান কী

শুধু যুদ্ধকে বিবেচনায় রেখেই নয়, নানা দিক থেকে অন্যদের ওপর একটি নির্ভরশীল দেশ হিসেবে আমাদের সবসময়ই নির্ভরতা কমানো এবং স্বনির্ভরতা অর্জনে মনোযোগী হওয়া উচিত বলে মনে করেন ড. মো. দীন ইসলাম। ‍তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী-আমলারা বরাবরই শ্রমবাজার বাড়ানোর কথা বলছেন। কিন্তু এ বিষয়ে এখনও ফলপ্রসূ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কম।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাড, ইউরোপ ও জাপান, এমনকি মধ্যপ্রাচ্যেও কেয়ার ইকোনমিতে শ্রমিকের বিশাল চাহিদা আছে। আমাদের শ্রমিকরা মূলত মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছেন নির্মাণ শ্রমিক, ইলেকট্রিশিয়ান ও ড্রাইভার; এমন কাজে। আরবের দেশগুলো নারী শ্রমিকরা যাচ্ছেন গৃহকর্মী হিসেবে। যদি শিশু-বৃদ্ধ-অসুস্থদের সেবা বা নার্সিং, কেয়ার গিভিংয়ের অন্যান্য খুঁটিনাটি বিষয়ে অল্প সময়ের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মীদের পাঠানো যায়, তবে আমাদের শ্রমবাজার আরও বাড়তে পারে। কেয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে শ্রমিকের চাহিদা কমবে না। বরং মধ্যপ্রাচ্যেও নারীরা এখন বাইরের কাজে যুক্ত হচ্ছেন, ফলে তাদের ঘরের কাজে কর্মীর চাহিদা বাড়ছে। শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনের মতো দেশগুলো প্রশিক্ষিত কর্মী পাঠিয়ে শ্রমবাজারে রাজত্ব করছে। আমরা উদ্যোগী হলে এই বাজারের বড় একটা অংশ দখল করতে পারি।

তিনি রেমিট্যান্স বাড়াতে এর ওপর সরকারি প্রণোদনা বৃদ্ধি, ডলার সংকট ঠেকাতে হুন্ডি প্রতিরোধ, মুদ্রা ও অর্থপাচার প্রতিরোধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার পরামর্শ দেন। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাড়িয়ে দেশেই বিনিয়োগের ক্ষেত্র সম্প্রসারণের ওপর জোর দেন। আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে এখন থেকেই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়ার কথাও বলেন।

ডলার সংকট ঠেকাতে হুন্ডি প্রতিরোধের আহ্বান বিশেষজ্ঞদের

‘জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানোর বিষয়ে ভারতের পদক্ষেপ অনুসরণ করতে পারি আমরা। রাশিয়া ও ব্রাজিলের মতো বিকল্প বাজারে যোগাযোগ বাড়াতে পারি। একইসঙ্গে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে পারি। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর জোর দিতে পারি’, যোগ করেন ড. দীন ইসলাম।

শরিফুল ইসলামের মতে, ‘ইউক্রেনে বা মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ হচ্ছে, আমরা এগুলোকে দায়ী করি। কিন্তু আমাদের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, সুশাসন, অনিয়ম, দুর্নীতি তার চেয়েও বড় সমস্যা। আমরা যদি সব ধরনের অর্থনৈতিক অবস্থা মোকাবিলা করার মতো কাঠামো দাঁড় করাতে পারি, তাহলে প্রভাবটা এড়ানো সম্ভব।’

রাজনৈতিক ভাবমূর্তি বাড়ানোর সুযোগ

‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’– স্বাধীনতার পর থেকেই এই কূটনৈতিক নীতিতে চলছে বাংলাদেশ। আবার দেশের সংবিধানে এটাও উল্লেখ আছে– সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতাবাদ বা বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের সবখানে নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সংগত সংগ্রামকে সমর্থন করতে হবে।

শুরু থেকেই ফিলিস্তিনে এই সংঘাত ঠেকাতে বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানিয়ে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশে ও দেশের বাইরে সব প্ল্যাটফর্মে তিনি যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তির ফিরিয়ে আনার কথা বার বার বলে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের মুক্তির-স্বাধীনতার অধিকারের বিষয়টিও তুলে ধরছেন। বাংলাদেশ এ ব্যাপারে ‘শাটল ডিপ্লোম্যাসি’ বা তৃতীয় দেশ হিসেবে শান্তির দূত হিসেবে ভূমিকা রেখে নিজের অবস্থান উজ্জ্বল করতে পারে বলে মনে করেন লেখক, বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী।

তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জনকারী দেশ, মুসলিম প্রধান হয়েও সেক্যুলার বা অসাম্প্রদায়িক দেশ এবং শান্তির জন্য প্রচেষ্টারত আস্থাভাজন দেশ হিসেবে বাংলাদেশে আলাদা মর্যাদা তৈরি হয়েছে বিশ্বে। শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়ে, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় প্রতিবেশীদের সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক রেখে বাংলাদেশ নিজের একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত নিরসনে আমরা সরাসরি হয়তো ভূমিকা রাখার মতো অবস্থানে নেই। তবে যে বৃহৎ শক্তিগুলো যুদ্ধ থামাতে পারে তাদের প্রভাবিত করার কাজ চালিয়ে যেতে পারে সরকার। প্রয়োজনে শান্তিরক্ষা ও সংঘাত প্রতিরোধের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে জাতীয় কমিটি তৈরি করে ও কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে এ বিষয়ে কাজ করা যায়। এর ফলে শুধু বিশ্ব রাজনীতিতে যেমন বাংলাদেশের সম্মান বাড়বে, একই সঙ্গে এই আস্থার জায়গাটি আমাদের অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণেও সহায়ক হবে। নিজেদের ভাবমূর্তির বাড়িয়ে কীভাবে সেটার সুবিধা নেওয়া যায় তা জানতে হবে।

সতর্ক থাকতে হবে দেশের ভেতরেও

ড. সাজ্জাদ বলেন, ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় আমেরিকান জনগণের মধ্যে বিক্ষোভ দানা বেঁধে উঠলে তারা অস্ত্র ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হয়। এখন গাজার যুদ্ধ নিয়ে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই একই রকম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। পুরো বিশ্বেই যুদ্ধবিরোধী একটা জোয়ার তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়তে পারে। ছাত্র-জনতা যে কেউ মাঠে নেমে আসতে পারে ফিলিস্তিনের পক্ষে নিজের অবস্থান জানাতে। কিন্তু অনেকের-অনেক গোষ্ঠীর অনেক রকম না পাওয়ার বা বঞ্চনার ক্ষোভ থাকে। কেউ ফিলিস্তিনপন্থি জোয়ারকে ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করে কিনা এ ব্যাপারেও সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে।  




👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles