Thursday, June 26, 2025

প্রস্তুত এশিয়ার বড় ঈদগাহ ময়দান গোর-এ-শহীদ


ঈদুল ফিতরের বাকি আর দুদিন। এরই মধ্যে জামাতের জন্য প্রস্তুত এশিয়ার সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মাঠ দিনাজপুরের গোর-এ-শহীদ। ধোয়ামোছা ও রং করে সৌন্দর্য বাড়ানো হয়েছে মাঠের। মুসল্লিদের সুষ্ঠুভাবে নামাজ আদায়ের জন্য কাতারও তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা।

প্রায় ২২ একর আয়তনের গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানের ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনারের সামনে মাঠটি ইতোমধ্যেই ঘিরে ফেলা হয়েছে। গত ঈদুল ফিতরের জামাতে ছয় লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণ হয়েছিল বলে জানিয়েছে আয়োজক কমিটি। এবার আরও বেশি লোকসমাগমের আশা করছে তারা।

এমন বড় মাঠে নামাজ আদায় করতে প্রস্তুত মুসল্লিরাও। তাদের বিশ্বাস, বড় জামাতে নামাজ আদায় করলে বেশি সওয়াব হয়। তা ছাড়া গত কয়েক বছর যেভাবে শান্তিপূর্ণভাবে নামাজ আদায় হয়েছে, তাতে খুশি তারা। তাই শুধু জেলার মধ্যেই নয়, আশপাশের জেলাগুলো থেকেও আসেন মুসল্লিরা। এ জন্য দুটি ঈদ স্পেশাল ট্রেনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে এবার। যেগুলোর একটি পার্বতীপুর থেকে আসবে এবং অপরটি আসবে ঠাকুরগাঁও থেকে। মুসল্লিদের নামাজ আদায় শেষে ওই ট্রেনে করেই তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হবে।

জানা গেছে, গোর-এ-শহীদ ঈদগাহজুড়ে কয়েকটি স্তরে নিরাপত্তাব্যবস্থায় পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করবেন। সকাল ৭টা থেকেই মুসল্লিদের জন্য মাঠের ১৭টি প্রবেশপথ খুলে দেওয়া হবে। মাঠে প্রবেশের আগে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে মুসল্লিদের তল্লাশি করা হবে। শুধু জায়নামাজ ও ছাতা নিয়ে প্রবেশ করবেন মুসল্লিরা।

এ ছাড়া থাকবে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। পুরো মাঠটি সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করা হবে। ড্রোনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হবে পুরো মাঠ। ইতোমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন। মুসল্লিদের জন্য মাঠের এক পাশে থাকবে স্বাস্থ্য ক্যাম্প, মিনারের পেছনে অজুখানা এবং পানি পানের ব্যবস্থা।

দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে নামাজ আদায় করতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসবেন বলে জানান স্থানীয়রা। পাহাড়পুর এলাকার লোকমান হাকিম বলেন, আমার কয়েকজন আত্মীয় আসবেন ঠাকুরগাঁও থেকে। আমাদের এই মাঠে নামাজ আদায় করার জন্য অনেকেই আগ্রহী।

সুইহারী এলাকার সিরাজুল ইসলাম বলেন, এই মাঠে নামাজ আদায় হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। শান্তিপূর্ণভাবেই ঈদের নামাজ আদায় করতে পেরেছি। সবার সঙ্গে দেখা হয়েছে, খুব ভালো লেগেছে। এবারও নামাজ আদায় করতে আসবো।

একই এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, বেশি মানুষের সঙ্গে নামাজ আদায় করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। তাই তো এই মাঠে আসি, অনেকের সঙ্গে নামাজ আদায় করি, কোলাকুলি করি। খুব ভালো লাগে।

বাহাদুরবাজার এলাকার সেলিম রেজা বলেন, এই মাঠ আমাদের জন্য গর্বের। এত বড় মাঠে নামাজ আদায় করলে নিজেকে গর্বিত মনে হয়। এখন বড় গলায় বলতে পারি, আমাদের একটি মাঠ আছে, যা দেশের এবং এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড়। যেখানে আমরা নামাজ আদায় করি। 

দিনাজপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২২ একর আয়তন নিয়ে গোর-এ-শহীদ ময়দান। ২০১৭ সালে ৫২ গম্বুজবিশিষ্ট এই ঈদগাহ মিনার তৈরিতে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ঐতিহাসিক নিদর্শন ও মনোরম কৃতীর সৌন্দর্য ও নান্দনিক হিসেবে এর নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। এই ৫০ গম্বুজের দুই ধারে ৬০ ফুট করে দুটি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে। ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহেরাব (যেখানে ইমাম দাঁড়াবেন) তার উচ্চতা ৪৭ ফুট। এর সঙ্গে রয়েছে আরও ৪৯টি গম্বুজ।

এ ছাড়া ৫১৬ ফিট লম্বায় ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। উপমহাদেশে এত বড় ঈদগাহ মাঠ দ্বিতীয়টি নেই। পুরো মিনার সিরামিক দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলে ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে ওঠে। 

২০১৭ সাল থেকেই প্রতিবারে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করছেন দিনাজপুর জেলাসহ পাশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। তবে করোনার প্রকোপের সময় দুই বছর এই মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। করোনা কমে গেলে পরিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঈদের জামাত।

দিনাজপুর পুলিশ সুপার শাহ্ ইফতেখার আহমেদ বলেন, এই মাঠে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যেই শহর ও আশপাশে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মাঠটি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্প থাকবে, ড্রোনের মাধ্যমে মাঠ পর্যবেক্ষণ করা হবে। সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে মাঠটি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এ ছাড়া প্রতিটি কাতারেই সাদাপোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। পুলিশের পাশাপাশি এই মাঠে র‌্যাব, বিজিবি, এনএসআই, ডিজিএফআই, ডিএসবিসহ সব গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মোতায়েন থাকবেন। বাইরে র‌্যাব ও বিজিবির টহলও থাকবে।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ বলেন, ঈদের নামাজ শান্তিপূর্ণভাবে আদায় করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আগেভাবেই মাঠটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন মাঠটি সম্পূর্ণ প্রস্তুত। অজুর জন্য পানির ব্যবস্থা, কাতারের ব্যবস্থা এবং প্রবেশদ্বারের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে শান্তিপূর্ণভাবেই মুসল্লিরা এখানে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবেন এবং নির্বিঘ্নে বাড়িতে ফিরতে পারবেন। 

সবচেয়ে বড় এই ঈদগাহ ময়দান ও মিনারের মূল পরিকল্পনাকারী ও প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, জামাত উপলক্ষে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মাঠে মুসল্লিদের আগমনের জন্য প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে কয়েক দিন ধরেই। দিনাজপুর ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা যাতে অংশ নিতে পারেন, এ জন্য দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

গত কয়েকটি ঈদের জামাতে যে পরিমাণ লোকসমাগম হয়েছিল, তার চেয়েও বেশি লোকসমাগম হবে এবার, যাতে সব মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেন, সে জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।



Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles