Monday, July 8, 2024

ক্রিকেট, আমেরিকার সঙ্গেও পারলে না! 


বিবিসি’র একটি প্রতিবেদনে ইউরোপ-আমেরিকায় ক্রিকেট খেলা নিয়ে মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখছিলাম। ইউরোপে ইংল্যান্ড বাদে বাকী দেশগুলোর মানুষ ক্রিকেট কি জানেই না। যে নেদারল্যান্ড দল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রিকেট খেলে তাদের দেশের মহিলারা বলছিলেন ক্রিকেট এক ধরনের পোকা! ইংরেজি থেকে বাংলায় তর্জমা করলে ক্রিকেট তো আসলেই ঝিঁঝিঁ পোকার নাম। আর আমেরিকা?

বেসবল, ভলিবল এসবের দাপটে সে দেশে সকার পর্যন্ত জনপ্রিয় হতে পারেনি। এমনকি বিশ্বকাপে খেলার পরও না। আমেরিকা সকার বিশ্বকাপ নিজ দেশে আয়োজন করেও ফুটবলকে সবার কাছে নিতে পারেনি এখনো। আর ক্রিকেট? আমার ধারণা নিরানব্ব শতাংশ আমেরিকান এর নাম জানে না। সে আমরিকার কাছে বাংলাদেশ হেরে গেছে। যে বাংলাদেশ আইসিসি স্বীকৃত একটি টেস্ট দল।

বাংলাদেশে এখন তারকা বলতে আমরা বুঝি রাজনীতিবিদ বা ক্রিকেটার। মিডিয়া খুললেই তাদের দেখা পাবেন। ক্রিকেটের কথায় আসি। উপমহাদেশের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারত আর পাকিস্তান ক্রিকেট না খেললে আমরাও খেলতাম না। যুদ্ধ আর জাতিগত বিদ্বেষের আরেক নাম ছিল এই ক্রিকেট খেলা। ভারত পাকিস্তান ক্রিকেট মানেই ছিল লড়াই। সে লড়াই বাইশ গজে যতটা তার চেয়ে বেশি ছিল মানুষের মনে। বলাবাহুল্য বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু আর প্রগতিশীল মুসলমানের পছন্দের দল ভারত। বাকীরা সবাই ছিল পাকিস্তানের জন্য মরিয়া। কায়দা করে যারা পাশ কাটিয়ে যেতে বলে- খেলায় কোনো রাজনীতি নাই, তারা আসলে আহম্মক অথবা ধুরন্ধর । রাজনীতি না থাকলে ভারত হারলে পাকিস্তানে মিষ্টি বিতরণ হতে পারে কিন্তু বাংলাদেশে কেন হয়? কেন পাকিস্তান হারলে আমাদের মনের আনন্দ দ্বিগুন হয়ে যায়? ক্রিকেট আর রাজনীতি উপমহাদেশে এতটাই একাকার যে একটি ছাড়া আরেকটি অচল। মনে পড়ে সেই তরুণের কথা শচীন তেন্ডুলকারের সমর্থনে পতাকা ওড়ানোর জন্য যাকে জেলে যেতে হয়েছিল। সেই যুবকটিকে মনে করি যাকে প্রায় পিটিয়ে মারার মতো অবস্থা করেছিল ভারতীয় দর্শক।  

এই সংক্রমণ আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়লো বিগত কয়েক দশকে, যখন আমাদের ক্রিকেট টিম হলো, এগারো জন খেলোয়াড় পেলাম, আনন্দের বাঁধ ভেঙে রাস্তায় নামলো মানুষ। না চাইতেই আইসিসি’র সদস্য পদ, না খেলেই কারো আনুকুল্যে চান্স পাওয়ার পরিণাম কি হয়? যা হবার তাই হচ্ছে পদে পদে। নবীন দল বলার দিন পেরিয়ে গেছে। বরং প্রবীণ হতে হতে কারো কারো গোঁফ দাড়ি পেকে সাদা কিন্তু ক্রিকেট যে তিমিরে সে তিমিরেই রয়ে গেছে। সবচেয়ে যেটা আশ্চর্যের বিষয় জ্ঞান-বিজ্ঞান  আর্ট কালচার সব ছাপিয়ে এই ক্রিকেটাররা হয়ে গেলেন জাতীয় হিরো। এদের ফলোয়ার অনুগামীর সংখ্যা লাখে লাখ। সাকিব আল হাসান নিঃসন্দেহে ভালো খেলোয়াড় । কিন্তু খেলা বোঝে কয়জন? আসলে ক্রিকেট বোঝার মতো কতজন মানুষ আছে দেশে? প্রমীলা দর্শকের বেশীর ভাগই  মাঠে যায় আনন্দের জন্য। পুরুষরা চার ছক্কা বা কে ব্যাট করে সেটা জানলেও ডিপ ফাইন লেগ বা মিড ইউকেট চেনে না। এই না চেনা, না জানা ক্রিকেটারদের আমরা এতটাই বড় করে ফেলেছি যে তারা এখন অনেকে এমপি।  আরো অনেকের মনে সে আশা জাগরুক হয়ে গেছে ।

আমেরিকার কাছে বাংলাদেশ হারার পর মিডিয়া লিখছে: গতকাল ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেটের সবচেয়ে আনন্দময় দিন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে আইসিসির পূর্ণ সদস্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে দ্বিতীয় জয় এটি। স্বাভাবিকভাবেই আনন্দে মাতোয়ারা দেশটির ক্রিকেটপ্রেমীরা। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাজমুল হোসেন শান্তর দলের মুণ্ডপাত করছেন বাংলাদেশের সমর্থকরা। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এমন হার নিঃসন্দেহে টাইগার শিবিরের বড় ধাক্কা। অনেকটা ‘ওয়েক আপ’ কলের মতো। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই হারের দায় কার? বিশ্বকাপ খেলতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে টি-টোয়েন্টি জয়ের একটা ফর্মুলা দিয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। এতে অবশ্য তার মূল ভরসা ছিল বোলিং ইউনিট। আগে ব্যাট করলে ব্যাটাররা ১৬০-১৭০ রান করবেন। আর মিতব্যয়ী বোলিংয়ে বোলাররা ম্যাচ জেতাবেন।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে প্রথম শর্তই পূরণ করতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ঘরের মাঠে সদ্য শেষ হওয়া জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে প্রথম ম্যাচে ব্যর্থ টাইগার ব্যাটাররা। এমন হারের জন্য স্বাভাবিকভাবে কাঠগড়ায় ওঠার কথা ব্যাটারদের। একই কাজ করলেন দলপতি। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ভালো ব্যাটিং করতে না পারার আক্ষেপ ছিল শান্তর কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘আমরা ভালো ব্যাটিং করিনি। আমরা প্রথম দুই ওভারে ভালো শুরু করেছিলাম। কিন্তু মাঝে উইকেট হারিয়েছি। আমরা আরও ২০ রান বেশি করতে পারতাম। তাহলে ম্যাচটা অন্যরকম হতে পারত।’

ব্যাট হাতে দীর্ঘদিন ধরে রান খরায় ভুগছেন লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে শুরুটা ভালো করেছিলেন লিটন। একবার জীবন পেয়েও এই ওপেনার আউট হন ব্যক্তিগত ১৪ রানে। আর টাইগার দলপতি ১১ বল খেলার পর সাজঘরে ফেরেন ২ রান করে। এমন ধারাবাহিক ব্যর্থতার পরও উইকেটকে দায়ী করছেন শান্ত।

বুঝুন এবার! আমেরিকার মতো নবীন, নাম না জানা দলের কাছে  হারার পর যদি অধিনায়ক উইকেটকে দায়ি করে তো কি বলার থাকে? এখন আসলে সময় এসেছে নতুন ভাবে ভাবার। এই ক্রিকেট যদি আমাদের জাতীয় গর্ব বা পরিচয় হয়ে থাকে তো বিপদ আরো বাড়বে । বিদেশের মাটিতে আশা নিয়ে বসবাস করা বাংলাদেশীদের স্বপ্ন ভঙ্গ হবে বারবার। এটা কোন ম্যাজিক না যে আগামী সব খেলায় ফাটিয়ে দেবে আমাদের এই বীরেরা। তারা প্রায়ই ধুঁকে মাঝে মাঝে সোজা হয়ে খাড়াতে পারে। একটা সময় ফুটবল, তারপর হকি আশা জাগিয়েছিল। বিশেষ করে ফুটবল ছিল আকাশ সমান জনপ্রিয়। ধীরে ধীরে তারা ইতিহাসে ঠাঁই নিয়ে ফেলেছে। এখন সময় ক্রিকেটের।

অনেকে বলবেন, একটা ম্যাচে হারলেই কি এসব লিখতে হয়? জি না। একটা না, এই ব্যর্থতা ধারাবাহিক। ক্রিকেট রাজনীতি যতটা পপুলার ক্রিকেট খেলাটা ততো নয়। খেলোয়াড় থেকে কলাকুশলী সমথর্ন সবকিছুতেই রাজনীতি। এতে আসলে দেশের কী লাভ? কী লাভ প্রবাসের বাঙালির? যারা ছুটি নিয়ে ডলার পাউন্ড খরচ করে মাঠে যায় তারা ফিরে আসে একবুক হতাশা নিয়ে।

আমার মতে ক্রিকেটে এখন যারা তারকা তারা থাকতে আসলেই কোন ভরসা নাই। সাকিব হোক আর লিটন হোক যাদের দিন গেছে তাদের গেছে। খেলাকে মূলত খেলার জায়গায় রাখলে হয়তো ফল পাওয়া যেতে পারে। ভারতের মতো জুয়া আর উন্মাদনা কিংবা পাকিস্তানের মতো জোশের ওপর ছেড়ে দিলে ক্রিকেট নয় থাকবে যুদ্ধ । আমেরিকার কাছে আমাদের এই হার যদি চোখ খুলতে পারে তো খেলাধুলারই মঙ্গল।

সিডনি থেকে




👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles