একদিকে কোচ ও খেলোয়াড়ের কণ্ঠে কথার তুবড়ি ছুটছে। অন্যদিকে মাঠের খেলাতে সবাই এক হয়ে নিজেদের উজার করে দিচ্ছে। এমন বিপরীতমুখী অবস্থানে থেকে কোন দল নিজেদের কাজটি করেছে, তা বলা মুশকিল। বাংলাদেশ নারী দল এই জায়গায় ব্যতিক্রম। ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলার একদিকে। অন্যদিকে সাবিনা ও সাথীরা। ঠিক এই বিপরীতমুখী অবস্থায় বাংলাদেশ দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে আবারও সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ছোঁয়া দূরত্বে আছে। টানা দ্বিতীয় শিরোপা জেতার দ্বারপ্রান্তে থেকে অধিনায়ক সাবিনা খাতুন কাঠমান্ডুর হোটেল থেকে বাংলা ট্রিবিউনের কাছে কথার লড়াইয়ের পাশাপাশি মাঠের দারুণ পারফরম্যানন্স নিয়ে নানান কথা শুনিয়েছেন। আরও বলেছেন আনুষাঙ্গিক অন্য কথাও…
বাংলা ট্রিবিউন: বাংলাদেশ আবারও ফাইনালে উঠেছে। নিশ্চয়ই আশা করতে পারি এবারও ট্রফি বাংলাদেশে আসছে?
সাবিনা: হ্যাঁ, আশা তো করতেই পারেন। তবে এবার গতবারের চেয়ে কঠিন হবে বলে মনে হচ্ছে। বিশেষ করে সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে যেভাবে নেপাল খেলেছে, গ্যালারি ভর্তি দর্শক। সবমিলিয়ে কঠিন এক ফাইনালের সামনে আমরা। যদিও আমাদের মেয়েরা মাঠভর্তি দর্শকের সামনে খেলতে অভ্যস্ত।
বাংলাদেশ দল তো দারুণ ছন্দে আছে। এতো কিছুর পরও দলের খেলাতে কোনও প্রভাব পড়ছে না। এর রহস্য কী?
সাবিনা: রহস্য কিছুই না। আমরা আসলে নিজের জন্য খেলছি। দেশের জন্য খেলছি। অন্য কারও জন্য নয় (কোচকে ইঙ্গিত)। আমরা যে পারি। তা নতুন করে প্রমাণের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। কে কী বলছে, তা আপাতত মগজে রাখছি না। আমাদের তরফ থেকে যা বলার বলছি। মুখে কোনও নেতিবাচক কথা বলা বা শুনলেও তা মাঠের বাইরে রেখে আসছি।
নেতিবাচক কথার প্রসঙ্গ যখন উঠলোই, তখন সরাসরি বলেই ফেলি ইংলিশ কোচ পিটার বাটলারের সঙ্গে শুরু থেকে আপনাদের দূরত্ব। এতদিন হয়ে গেলো তা এখনও ঘোচেনি। এর কারণ কী মনে হয়?
সাবিনা: আমরা জানি না সমস্যা কোথায়। তবে এটা বলতে পারি সবার প্রতি সবার শ্রদ্ধা থাকা উচিত। কোচ ও খেলোয়াড়দের মধ্যে কেমন সম্পর্ক থাকা উচিত, তা উভয় পক্ষের জানা। এখন কেউ যদি তা মেনে না চলে তাহলে তো সমস্যা দেখা দেবে।
আপনার সঙ্গে তো শুরু থেকে তথা চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে যত ঝামেলা শুরু…
সাবিনা: আসলে সেটি ছিল কোচের প্রথম ম্যাচ। তিনি আমাকে পুরো ম্যাচ খেলাননি। আগে পরে নেতিবাচক মন্তব্য করে আসছিলেন। যা আমার কাছে ভালো মনে হয়নি। ফিটনেস ও পারফরম্যান্স দিয়ে তো একজন মাঠে খেলছে। এছাড়া তো দলে কেউ খেলতে পারে না। তাই নয় কী?
সেই রেশ কাঠমান্ডুতে এসে বড় আকারে ধারণ করলো। কথার তুবড়ি ছুটলো একে অন্যের বিরুদ্ধে, এমনটি কেন?
সাবিনা: কোনও কোচ যদি তার শিষ্যদের সম্পর্কে যা তা বলে তাহলে তা মেনে নেওয়া কঠিন। একটা কথা বলি উনি বলেছেন আমরা টিকটক করি। আমি আগেও বলেছি মেয়েরা যদি ‘আয়না ঘরে’ থেকে সাফল্য পায়। টিকটক করে সাফল্য পায়। তাহলে সমস্যা কোথায়। ওদের তো পরিশ্রমের পর রিক্রিয়েশনের প্রয়োজন আছে। এখন কোচের কথার কারণে সারাবিশ্বে আমাদের নিয়ে এখনও ট্রল হচ্ছে।
গোলাম রব্বানী ছোটন ও পিটার বাটলারের মধ্যে পার্থক্য কী দেখছেন?
সাবিনা: দুজন দুরকম। বাটলার কেমন তা এখন নতুন করে বলার কিছু নেই। সবাই এখন ভালো করে জেনেছেন। ছোটন স্যার কিংবা একজন বাঙালি কোচ হলে তখন আমাদের সম্পর্কে সব সহজেই জানতে পারেন। ভাষাগত বা জাতিগতভাবে। এটা সহজ হয়। বিশেষ করে ছোটন স্যার আমাদের মধ্যে থেকে মাঠের পারফরম্যান্সটা বের করে নিতে পারতেন। কেউ খারাপ করলে তাতে উজ্জীবিত করে আগের জায়গায় নিয়ে আসতেন। এটা আমাদের জন্য ইতিবাচক ছিল।
বাটলারের অধীনেও তে আপনারা দারুণ খেলছেন। কী বলবেন….
সাবিনা: আমি আগেই বলেছি আমরা নিজের ও দেশের জন্য খেলছি। কারও দিকে খেলছি না। আমরা যে পারি। এখানে সবাই পারফরম্যান্স দিয়ে দলে জায়গা পেয়েছে তার প্রমাণ দিচ্ছে সবাই।
আপনার পারফরম্যান্স নিয়ে আলোচনায় আসি। ৩১ বছর বয়সে এই সাফে ভুটানের বিপক্ষে জোড়া গোল করে আগের মতো ঝলক দেখালেন। মাঝে একটু ভাটার পর মনে হচ্ছে সাবিনার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের পারফরম্যান্স দেখতে পাচ্ছি..
সাবিনা: আমরা জেদ থেকে খেলছি। আমাদের যে করেই হোক ভালো খেলতে হবে। আমি নিজেও চেষ্টা করে যাচ্ছি। হয়তো সে কারণে আমার পাশাপাশি সবার পারফরম্যান্স ভালো হচ্ছে। আমি তো আগে যেমন খেলতাম তেমনটি খেলছি। হয়তো আমার দিকে সবার দৃষ্টি বেশি থাকে তাই একটু হের ফের মনে হয়।
আর একটা কথা আপনি যখন পারফরম্যান্স চাইবেন তার আগে আমাদের তো সেভাবে তৈরি করবেন। আমরা সাফে এসেছি কোনও প্রস্তুতি ম্যাচ না খেলে। শুধু অনুশীলন করলেই তো হবে না। খেলতো তো হবে। আমরা কিছু না পেলে মাঠে কীভাবে পারফরম্যান্স করে দেখাবো? এছাড়া আসার আগে ১৫দিন কেমন ছিলাম তা হয়তো আপনারা জানেন না। আমাদের অনেক কিছু বলার আছে। আমি টুর্নামেন্ট শেষে সবকিছু বলবো। এখনই সব বলতে চাই না।
গত সাফে ৮ গোল করে টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছিলেন। এবার মাত্র দুই গোল। যদিও ফাইনাল বাকি। এছাড়া একসময় আপনি নাম্বার নাইন পজিশনে খেলতেন। কয়েক বছর ধরে খেলছেন নাম্বার টেন হয়ে। কোন পজিশনে স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন?
সাবিনা: দেখুন একেক সময় একেক রকম পারফরম্যান্স দেখা যায়। আমি কয়েক বছর ধরে গোল করার চেয়ে করানোর দিকে বেশি মনোযোগ দিয়ে আসছি। গতবার ৮ গোল করেছি। এবার কম। কিন্তু দলের পারফরম্যান্সে তো হেরফের হয়নি। আগে যখন ‘নাম্বার নাইন’ পজিশনে খেলতাম তখন অন্যরকম পরিস্থিতি ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে আমি পেছন থেকে খেলতে পছন্দ করছি। কেননা আমার মনে হচ্ছে প্লেমেকার পজিশনে আমাকে বেশ মানায়। মনিকা-মারিয়াদের সঙ্গে সেতুবন্ধনটা ভালো হয়। মাঝমাঠ থেকে সেভাবে বলের জোগানও আসছে।
আগের প্রশ্নের উত্তরের রেশ ধরে বলছি… অনেক কিছু বলতে নিশ্চয়ই অনেক অভিযোগ-ক্ষোভ… বেতন ভাতা সহ অনেক কিছু নিয়ে বলবেন…
সাবিনা: আমাদের কথাতে অনেক কিছু থাকবে। কীভাবে আমরা খেলতে এসেছি… খেলছি। কীভাবে সবকিছু চলছে তার সবকিছু থাকবে। এখনই তা না বলে ফাইনাল শেষে বলতে চাই। যেন সবাই সবকিছু জানতে পারে।
অনেক তো অভিযোগ-অনুযোগের কথা হলো… এবার ফাইনালের অপেক্ষা। এবারও কী ট্রফি জিতে ছাদখোলা অভিনন্দন পেতে চাইছেন?
সাবিনা: আসলে এখন যদি বলি হ্যাঁ আমরা জিতে ছাদখোলা অভিনন্দন পেতে চাই তাহলে আবারও হয়তো ট্রল হবে। তাই আমাদের কিছু বলার নেই সেভাবে। দেশবাসী ও সরকার আছেন তারা ঠিক করবেন, কী করবেন। আগে তো সাফটা আবার ঘরে আনি। তারপর সবকিছু ঠিক হবে। হ্যাঁ এটা বলতে পারি ছাদখোলা অভিনন্দন পেতে কার না ভালো লাগে।
কাজী সালাউদ্দিনের দীর্ঘ যুগ শেষ হয়েছে। নতু সভাপতি হয়েছেন তাবিথ আউয়াল। নতুন কমিটির কাছে আপনাদের প্রত্যাশা কী?
সাবিনা: প্রত্যাশা আহামরি কিছু নয়। আমরা মেয়েরা চাই ছেলেদের মতো বর্ষপঞ্জী হোক। লিগ ছাড়াও ফেডরেশন কাপ অন্য টুর্নামেন্ট হোক। লিগে বড় দলগুলো খেলুক। মেয়েদের পারিশ্রমিক বাড়ুক। সুযোগ-সুবিধাও। এছাড়া সারা বছর যেন ফিফা প্রীতি ম্যাচ ছাড়াও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পারি তার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হোক। মোট কথা মেয়েদের সামনে পরিষ্কারভাবে তাদের ভবিষ্যতটা দেখিয়ে দেওয়া উচিত।
আচ্ছা ভাইয়া আজ অনেক কথা হলো। আবার পরে কথা হবে। এই বলে সাবিনা ফোনের অন্য প্রান্তে বিদায় নিয়ে অনুশীলনের দিকে ছুটলেন।
👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com