Thursday, October 16, 2025

একসঙ্গে মা-দাদি-নানিকে হারালো ৭ মাসের শিশুটি


‘৭ মাসের সন্তান রেখে আমার স্ত্রী, মা ও শাশুড়ি চলে গেলো। অবুঝ এই শিশুটির এখন কী হবে? মা ডাকার আগেই ওর মাকে আল্লায় নিয়া গেলো। আমি তো এটা চাইনি আল্লাহ। তুমি কেন এভাবে আমাদের ঘর খালি করলে?’— বিলাপ করে করেই কথাগুলো বলছিলেন বরগুনায় ব্রিজ ভেঙে গাড়ি ডুবে বেঁচে যাওয়া সোহেল খান। এই দুর্ঘটনায় তার পরিবারের ৭ সদস্য নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে বেঁচে আছে তার ৭ মাসের শিশু জাফরিন। দুর্ঘটনায় শিশুটির মা, দাদি, নানিও নিহত হয়েছেন।

মালয়েশিয়া প্রবাসী সোহেল খান বরগুনার শিবচর উপজেলার ভদ্রাসন ইউনিয়নের শাহাপাড়া এলাকার মৃত ফজলুর রহমান খানের ছেলে। তিন বছর আগে পার্শ্ববর্তী উমেদপুর এলাকার রফিকুল ইসলামের মেয়ে রাইতি আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। গত ৭ মাস আগে তাদের একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। প্রায় ১ বছর পর মালয়েশিয়া থেকে গত ১৫ দিন আগে দেশে ফিরেছেন। মেয়ের জন্মের পরে এই প্রথম তিনি মেয়েকে সরাসরি দেখলেন। শনিবার বরগুনার আমতলীতে ব্রিজ ভেঙে গাড়ি ডুবে তাদের পরিবারের ৭ জনসহ মোট ১০ জন লোক মারা যান।

দুর্ঘটনার পরে রাত ১২টায় সোহেল খানের পরিবারের জীবিত সদস্যরা বাড়িতে আসেন। কান্নার রোল পরে যায় তাদের নিজ বাড়িসহ স্বজনদের বাড়িতে। এই দুর্ঘটনায় সোহেল খানের স্ত্রী, মা ও শাশুড়ি মারা গেছেন।

রবিবার ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মাঝে মাঝেই সোহেল খান বিলাপ করে মা ও স্বজনদের স্মরণ করে কেঁদে উঠছেন। বলছেন, ‘আমার স্ত্রী-শ্বাশুড়ি মারা গেছে। আমার বাচ্চাকে উদ্ধার করতে পারলেও স্ত্রীকে উদ্ধার করতে পারিনি। আমাদের সব শেষ!’

মেয়েটিকে বুকে নিয়েই একটু পর পর মুর্ছা যাচ্ছেন সোহেল খান। এসময় নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে বললেন, গাড়িটি যখন ডুবে যায় তখন মেয়েটি আমার কোলে ছিল। আমি আমার ৭ মাসের শিশুকে নিয়ে বের হয়েছিলাম। পরে ওখানে একজনের কাছে ওকে দিয়ে আবার গাড়ির কাছে যানই। গ্লাস ভেঙে আরও ১ জনকে বের করে আনি। ওর মা গাড়ির ভেতরেই ছিল, তাকে বের করতে পারিনি। গাড়িটি ততক্ষণে পানির নিচে চলে যায়। আমার মা ও শাশুড়িও গড়ির ভেতরেই ছিলেন। তারাসহ আমার মামি ও দুই বোনও মারা গেছেন। 

দুর্ঘটনায় আহত সোহেল খানের বড় ভাইয়ের স্ত্রী দিশা বলেন, ‘ব্রিজ ভেঙে মাইক্রোবাস খালে পড়ে যাওয়ার পর আমরা জানালার কাঁচ ভেঙে বের হয়ে আসি। আমি ড্রাইভারকে গাড়ির গেট খুলতে বললেও তিনি খোলেন নাই। খুললে হয়তো সবাই বেঁচে যেতো। ব্রিজ যখন ভেঙে পড়ে তখন বলা হলেও ড্রাইভার দরজার লক খুলে দেয়নি। ড্রাইভার নিজে বের হয়ে যায়, কিন্তু দরজার লক খোলেনি।’

সোহেল খানের বড় ভাই সাবেক সেনা সদস্য মাহাবুব খান জানান, ‘ব্রিজটি ভেঙে গেলে গাড়িটি পানিতে পড়ে যায়। আমি গাড়ির সামনের সিটে বসা ছিলাম। আমার কোলে আমার মেয়ে ও ভাগনে ছিল। ওদের নিয়ে আমি বের হই। ড্রাইভার তার সাইডের গেট খুলছে, আমি আমার সাইডের গেট খুলি। গাড়িটি আস্তে আস্তে দেবে যায় পানির নিচে। অনেক চেষ্টা করেও আমার মাকে বের করতে পারিনি। স্থানীয় লোকজন অনেক হেল্প করে। তারা রশি দিয়েছিল। রশি দিয়ে তাদের উঠিয়েছি। আমার কাঁধে দুজনকে উঠিয়েছি। সবাই চোখের সামনে মরে গেলো। কিছুই করতে পারলাম না।’

এদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় নিজের স্ত্রী ও আদরের দুই শিশু সন্তানসহ পরিবারের ৭ জনকে হারিয়ে পাগল প্রায় আবুল কালাম আজাদ। তিনি সোহেল খানের মামা। কোনও সান্ত্বনাতেই তার আহাজারি থামছে না। 

বিলাপ করতে করতেই আবুল কালাম বলে উঠছেন, ‘একসঙ্গে সবাই ভাগনের বিয়েতে গেলাম, হায় আল্লাহ, আমার এইয়া কী হইয়া গেলো! আমারে তুমি লইয়া যাও। আমি কাদের জন্য বাঁচবো, বেঁচে থাকার সবটুকু সম্বল কেড়ে নিলা আল্লা। আমার সব কিছু শেষ হইয়া গেলো।’

বাবার কোলে শিশু জাফরিন (ছবি: সংগৃহীত)

এদিকে রবিবার সকাল ৯টা থেকে তিন বাড়িতে পৃথক জানাজা শেষে শিবচর উপজেলার ভদ্রাসন এলাকায় কবর দেওয়া হয় তাদের। এর আগে রাত ৩টার দিকে মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা।

আবুল কালামের চাচাতো ভাই বলেন, এই ৭ জনই একে অপরের স্বজন। তারা সবাই একসঙ্গে বিয়ের আনন্দের রেশ নিয়ে রবিবার বাড়ি ফেরার কথা ছিল। অথচ শোকের চাদরে ঢেকে দিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন তারা। কোনোভাবেই তাদের এই মর্মান্তিক মৃত্যু আমরা মানতে পারছি না। পুরো এলাকা জুড়ে বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। আমরা খোঁজ-খবর নিয়েছি। নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি।’ নিহত প্রত্যেকের দাফন সম্পন্ন বাবদ ১০ হাজার করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, শনিবার দুপুরে বৌভাতের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বরগুনার আমতলী পৌর এলাকায় বরের বাড়িতে যাওয়ার সময় হলদিয়া- চাওড়া সীমান্তবর্তী চাওড়া হলদিয়া খালের ওপর লোহার ব্রিজ ভেঙে মাইক্রোবাস পানিতে পড়ে ডুবে যায়। এ দুর্ঘটনায় একই পরিবার ৭ জনসহ ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত সাত জনই মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার বাসিন্দা।

নিহতরা হলেন মাদারীপুরের শিবচরের ভদ্রাসনের গ্রামের আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী শাহানাজ আক্তার মুন্নী (৪০) ও তার দুই মেয়ে তাহিদা (৭) এবং তাসদিয়া (১১)। একই এলাকার মৃত ফকরুল আহম্মেদের স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪০), সোহেল খানের স্ত্রী রাইতি আক্তার (৩০), বাবুল মাদবরের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৪০) ও রফিকুল ইসলামের স্ত্রী রুমি বেগম (৪০)।




👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles