Monday, October 6, 2025

আজও উদঘাটন হয়নি ৩০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা বাবু হত্যার রহস্য


দেখতে দেখতে পার হয়ে গেছে ১১ বছর। ২০১৩ সালের এই দিনে (২৪ এপ্রিল) সাভারে ঘটে গিয়েছে সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ভয়াভহ, বীভৎস ও হৃদয় বিদারক ঘটনাটি। সেদিনের সেই ঘটনায় কেউ হারিয়েছেন মা, কেউ বাবা, কেউ ভাই, কেউ বোন, কেউ স্ত্রী, কেউ স্বামী, আবার কেউ হারিয়েছেন তার প্রিয় মানুষটিকে। সেদিন সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে ধসে পড়ে সাভার বাজারের বাসস্ট্যান্ডের নয় তলা রানা প্লাজা। দেশের ইতিহাসে এটাই মানবসৃষ্ট সবচেয়ে বড় বিপর্যয়।

ওই ভবনের তৃতীয় তলা থেকে নবম তলা পর্যন্ত ছিল পাঁচটি পোশাক কারখানা। এতে প্রায় চার হাজার পোশাক শ্রমিক কাজ করতেন। ভবন ধসের সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে চার হাজার পোশাকশ্রমিক। আমাকে বাঁচাও, পানি দাও, আমার হাতটি কেটে আমাকে বের করো- এমন আর্তনাদ। স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে শোকের মাতম নেমে আসে পুরো সাভারে এবং সেটা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। ভারী হয়ে ওঠে আকাশ। মুহূর্তের মধ্যেই ছুটে আসে সাধারণ উদ্ধারকর্মী, দমকল বাহিনী, সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন সংস্থা।

তাদের প্রচেষ্টায় ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে বের হতে থাকে জীবন্ত ও মৃত মানুষ। উদ্ধার হওয়া আহতদেরকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার জন্য সাভারের ঢাকা আরিচা মহাসড়ক বন্ধ করে দিয়ে মহাসড়কের দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় অ্যাম্বুলেন্স। তাদেরকে হাসপাতালে পাঠানো, প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানসহ সব ধরনের সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ছুটে আসেন হাজারও স্বেচ্ছাসেবী। একে একে বের করা হয় জীবন্ত, মৃত ও অর্ধমৃত মানুষ।

কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায়। হাসপাতালের মর্গ কানায় কানায় ভরে ওঠে। পরে লাশগুলোকে নিয়ে যাওয়া সাভারের অধরচন্দ্র স্কুলের মাঠে। স্কুল বারন্দায় সারিবদ্ধভাবে লাশ রেখে দেওয়া হয়। লাশের সংখ্যা গুনতে স্কুল মাঠে ঝুলানো হয় বোর্ড। সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা হয় কফিনের বাক্স। ততক্ষণে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া লোকদের স্বজনরা ছুটে আসেন রানা প্লাজার সামনে। তাদের কান্না আর আহাজারিতে গোটা আকাশটা ভারী হয়ে ওঠে।

প্রিয় মানুষটিকে জীবিত না পেলেও তার নিথর দেহটি নেওয়ার জন্য স্বজনেরা ভিড় জমান অধরচন্দ্র স্কুলের মাঠে। একটু পর লাশের গাড়ি এলেই তার দৌড়ে ছুটে যান- এই বুঝি এলো তার প্রিয় মানুষটির লাশ। এভাবেই কেটে গেল ৫/৬ দিন। দিন যতই যেতে থাকে ততই উদ্ধার হতে থাকে লাশ।

এদিকে ধসের পর দক্ষ জনবল ও প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হতে থাকে। উদ্ধার তৎপরতায় ধীরগতি দেখে, কোনও কিছু না ভেবেই উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন সাধারণ মানুষ। উদ্ধারকাজের ন্যূনতম অভিজ্ঞতা ছিল না কারও। তবুও ভবনের নিচে আটকে পড়া মানুষের জীবন বাঁচানোর তাগিদেই নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা ঢুকে পড়েছেন ধ্বংসস্তূপে। হাত-পা কেটে হলেও বের করে এনেছেন একেকটি জীবন্ত প্রাণ। পচা লাশের গন্ধ উপেক্ষা করে তারা সন্ধান করেছেন জীবিত প্রাণের। ওই মানুষগুলোর কারণেই ধ্বংসস্তূপের ভেতরে থেকে ২৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়াও লাশ উদ্ধার করা হয় ১১৩৮টি।

এদিকে ভবন ধসের ৫ম দিনে ২৮ এপ্রিল ভেতরে এক জীবিতের সন্ধান পাওয়া যায়। কাছে গিয়ে উদ্ধারকর্মীরা জানতে পারেন তার নাম শাহীনা। তাকে বাঁচাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হন কায়কোবাদ নামের এক উদ্ধারকর্মী গুরুতর আহত হন। টানা সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ৫ মে শনিবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে চলে যান তিনিও।

এ ছাড়াও এ ঘটনায় টানা সাত দিন উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করেন বাবু নামের এক সাধারণ উদ্ধারকর্মী। নিজের জীবন বিপন্ন করে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে উদ্ধার করেছিলেন ৩০ জীবিত মানুষকে। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে জীবিত, মৃত, অর্ধমৃত দেহগুলো কাঁধে নিয়ে বের হতে হতে একসময় নিজেই অসুস্থ হয়ে যান। ঠাঁই হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বারান্দায়। সেখান থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ার দুই দিন পর ওই হাসপাতালের তালাবদ্ধ একটি বারান্দার সামনে তার লাশ পাওয়া যায়।

লাশটি উদ্ধারের সময় গলায় শ্বাসরোধের স্পষ্ট আলামত পায় পুলিশ। তাকে হত্যা করা হয়েছে নাকি নিজে আত্মহনন করেছেন সেটি আজও উদঘাটন হয়নি।

ভবন ধসের ১৭তম দিনে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে উদ্ধার কাজের সমাপ্ত ঘোষণা করার আগ মুহূর্তে ঘটে এক অলৌকিক ঘটনা। ধ্বংসস্তূপের ভেতরে পাওয়া যায় আরেকটি প্রাণের সন্ধান। অলৌকিকভাবে চারটি বিস্কুট ও এক বোতল পানি খেয়ে বেঁচে ছিলেন রেশমা। ১৭তম দিনে বিকাল ৩টার দিকে ভেতরে থেকে একটি কাঠি নাড়াচাড়া করতে দেখেন উদ্ধারকর্মীরা। পরে তারা রেশমাকে জীবিত দেখতে পেয়ে তাকে উদ্ধার করে সাভারের সিএমএইচ হাসপাতালে নিয়ে যান। অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া রেশমাকে দেখতে হাসপাতালে তাৎক্ষণিকভাবে হেলিকপ্টারযোগে সেখানে ছুটে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রীরা।

এরপর ২০তম দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে রানা প্লাজার উদ্ধারকাজ সমাপ্ত ঘোষণা করেন উদ্ধারকাজে গঠিত সমন্বয় কমিটির প্রধান নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সোহরাওয়ার্দী। তিনি উদ্ধার কাজ শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এক হাজার ১২৭ জনকে মৃত ও দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধারের কথা জানান। এরপর দিন উদ্ধারকাজ শেষে ওই জায়গাটি ঢাকা জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।




👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles