Saturday, June 28, 2025

শৈশব কেন অনিরাপদ?


শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতন ক্রমেই বাড়ছে। পরিবার, আত্মীয়স্বজন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি পাড়া-মহল্লা, বলতে গেলে সব জায়গাই শিশুর জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে যে ঘর শিশুর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ হওয়ার কথা সেই নিজের বাড়িটিও আর নিরাপদ থাকছে না। পরিস্থিতির ভয়াবহতায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, শৈশব কেন অনিরাপদ? যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুরা বড় হচ্ছে অবিশ্বাস, ভয় আর শঙ্কা নিয়ে। শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করেন যারা তারা বলছেন, শিশুর প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ কেমন হতে পারে সেব্যাপারে আমাদের কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। যতদিন না মানসিকতা বদলাচ্ছে ততদিন অভিভাবকের কর্তব্য শিশুর জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা এবং শিশু যেন আত্মবিশ্বাস নিয়ে বড় হয় সেই আবহ নিশ্চিত করা।

গত ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের দুপুরে রাজধানীতে খেলনা কিনে দেওয়ার কথা বলে চার বছরের শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ২৩ এপ্রিল চাঁদপুরে ছয় বছরের দুটি শিশু ধর্ষণের শিকার হয় বলে খবর পাওয়া যায়। তার মধ্যে একটি ঘটনার অভিযুক্ত ধর্ষক সম্পর্কে শিশুটির নানা। ঠিক আগের মাসে তিন বছরের এক শিশু ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষক হিসেবে মামাকে আটক করা হয়।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় বেসরকারি সংস্থা ইনসিডিন বাংলাদেশ ‘বাংলাদেশে শিশুর প্রতি সহিংসতা পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ করে ২০২২ সালে জুনে। ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত ঢাকাসহ মোট ১১টি জেলায় ৫ হাজার ৭৪ জন শিশুর ওপর এ জরিপ চালানো হয়। জরিপে বলা হয়, ২৪.১ শতাংশ শিশু যৌন হয়রানির শিকার হয়। এর মধ্যে শতকরা ৫৫ জন শিশু পরিবারের মাধ্যমে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। স্বজনদের হাতেই বেশি যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে শিশুরা। এর মধ্যে ৭ থেকে ১৩ বছরের শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক বলেন, শিশু ধর্ষণের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় সুবিধাবঞ্চিত, নিম্ন আয়ের ও উচ্চবিত্ত পরিবারের শিশুরা বেশি ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্ষকরা মানসিক বিকারগ্রস্ত ও মাদকাশক্ত থাকে যার কারণে তারা তাদের মূল্যবোধ ও নীতিনৈতিকতা হারিয়ে ফেলে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থার অবিনতির কারণে মূলত শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা বাড়চ্ছে।

আরও পড়ুন- কেন ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়াচ্ছে কিশোররা?

পরিবারেও কেন শিশুরা নিরাপদ নয় প্রশ্নে মাহবুবুল হক বলেন, যেসব পরিবারের কলহ, মাদক, ও অর্থ-সামাজিক সংকট থাকে ওইসব পরিবারের শিশুরা সুরক্ষিত থাকতে পারে না। বিশেষ করে যেসব শিশু পরিবার থেকে একটু বিচ্ছিন্ন থাকে তাদের সঙ্গে নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটছে। শিশুদের জন্য সুরক্ষিত আবাস ও নিরাপদ শৈশব গড়ে তুলতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেখলা সরকার বলেন, কিছু সহিংস মানুষ আছে, যারা শিশু কিংবা দুর্বল মানুষদের সঙ্গে তাদের যৌন চাহিদা পূরণে আনন্দ পায়। এটা বিশেষ ধরনের মানসিক রোগ। এ ধরনের মানসিকতার পেছনে অনেক কারণ থাকে। একটা মানুষ যখন তার শৈশবে অনিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বড় হয় এবং শৈশবে তার সঙ্গেও যৌন নির্যাতনমূলক কর্মকাণ্ড ঘটে তখন তার মধ্যে এ ধরণে মানসিকতা গড়ে ওঠার শঙ্কা থাকে। এছাড়াও মাদকের প্রভাব, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, দায়হীনতাসহ বেশকিছু কারণে এ ধরনের মানসিকতা গড়ে উঠছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সমন্বয়ক তামান্না হক রীতি বলেন, আমাদের সমাজকে আমরা শিশুবান্ধব করে গড়ে তুলতে পারিনি। একটি সহিংসতাপ্রবণ সমাজে আমরা বসবাস করছি। যেখানে সবলেরা দুর্বলদের প্রতি শক্তি প্রয়োগ করে। তাই দিন দিন অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। বিশেষ করে শিশুরা দুর্বল হওয়ায় তাদের প্রতি নির্যাতন বেশি হচ্ছে। কেননা তারা বাধা দেওয়া বা প্রতিবাদ করতে পারে না। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে আমরা শিশুদের প্রতি সংবেদনহীলতা, তাদের মধ্যে অধিকার ও শ্রদ্ধার জায়গা তৈরি করতে পারছি না।

বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, শিশু ধর্ষণ প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিরোধ এবং প্রতিকারমূলক কাজ করে যাচ্ছে। দ্রুত অপরাধী শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

পরিবারে কেন শিশু অনিরাপদ প্রশ্নে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অভাবে এমনটা ঘটছে। শিশু নিরাপত্তায় পরিবারের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলোরও ভূমিকা রয়েছে।




👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles