Wednesday, October 15, 2025

ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…


কেউ চায় না, তবু এরকম সন্ধ্যা আসে। যে সন্ধ্যায় প্রিয়তম শিল্পীকে নিয়ে বলতে হয় স্মৃতিকথা। যিনি পৃথিবীর অধ্যায় চুকে চলে গেছেন অনন্তলোকে, চির অমরত্বে। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) রাজধানীর ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে এমনই সন্ধ্যা নেমেছিল। যেখানে রবীন্দ্রসংগীতের শিল্পী, অনুরাগীরা একত্র হয়েছেন তাদের অধিকাংশের গুরু সাদি মহম্মদের স্মরণে।

গত ১৩ মার্চ এরকমই সন্ধ্যায় হঠাৎ মৃত্যুর পথ বেছে নেন নন্দিত এই শিল্পী। যিনি তার জীবনের পুরোটা সময় বিলিয়ে দিয়েছেন সংগীতে। পথ দেখিয়েছেন পরবর্তী একাধিক প্রজন্মকে। নিজের দীপ্ত প্রতিভার দ্যুতি ছড়িয়ে দিয়েছেন অসংখ্য শিক্ষার্থীর মাঝে। যারা পরবর্তীতে হয়ে উঠেছেন রবীন্দ্রসংগীতের সফল শিল্পী। সেই গুণী গুরুর স্মরণে গান-কথার বিশেষ আয়োজন সাজিয়েছে সাদি মহম্মদেরই গড়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠান ‘রবিরাগ’।

সন্ধ্যা ৭টায় নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানটি। যেখানে সাধারণ দর্শক ও রবীন্দ্রসংগীতের শিল্পীরা ছাড়াও উপস্থিত হয়েছিলেন দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা।

‘রবিরাগ’র সভাপতি হিসেবে শুরুতেই বক্তব্য রাখেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী আমিনা আহমেদ। সাদি মহম্মদের সঙ্গে দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে তার সুর-সম্পর্ক ও পারিবারিক বন্ধন ছিল। সেসব স্মৃতির টুকরো কিছু অংশ তুলে ধরেন তিনি। আমিনা আহমেদ বলেন, ‘তার সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিল গত ভালোবাসা দিবসে। দুজনে ফুল দেওয়া-নেওয়া করেছি, শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি। আমি তাকে গুরু বলি। কিন্তু বয়সে তিনি আমার ছোট। অথচ আমাকেই কিনা বিদায় জানাতে হলো ছোট ভাইকে। সাদি মহম্মদ যেখানেই আছেন, ভালো থাকুন। এই পৃথিবীর দুঃখ থেকে আপনি বিদায় নিলেন। কিন্তু আপনাকে আমরা ভোরের শিশিরে খুঁজে বেড়াচ্ছি।’

আমিনা আহমেদ ব্যস্ততার পাশ কাটিয়ে অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। যাকে সন্তানের মতো স্নেহ করতেন, ভালোবাসতেন সাদি মহম্মদ। প্রিয় মানুষটির স্মরণে কাজী নাবিল আহমেদ বললেন, ‘সাদি ভাইয়ের জন্মদিন ৪ অক্টোবর, আমার জন্মদিনও এই দিনে। ফলে প্রতি বছরের এই দিনে আমাদের মেসেজে কিংবা ফোনে কথা হতো। উনি যেমন আমার মা ও বাবাকে ভাই-বোন সম্বোধন করতেন, আবার আমি, আমার ভাই-বোনেরাও ওনাকে সাদি বলে ডাকতাম! সম্পর্কটা ছিল এমন সাবলীল আর প্রাঞ্জল। ১৯৮৭-৮৮ সাল থেকেই আমাদের পরিবারের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা। আমাদের যে কোনও আয়োজনে তিনি প্রাণপুরুষ হিসেবে উপস্থিত থাকতেন। রবীন্দ্রসংগীতকে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তার অসামান্য অবদান। আর মানুষকে আপন করে নেওয়ার দারুণ গুণ ছিল তার। এখনও তার কণ্ঠস্বর আমার কানে বাজে। তিনি আমাদের মাঝে নেই, তবে তার আত্মা যেন শান্তিতে থাকে। তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’  

অনুষ্ঠানটি সাজানো হয় স্মৃতিচারণার মাঝে মাঝে গান দিয়ে। গান পরিবেশনায় ছিলেন ইফফাত আরা দেওয়ান, ফাহিম হোসেন চোধুরী, ইন্দ্রাণী কর্মকারসহ বেশ কয়েকজন শিল্পী। আর স্মৃতিচারণায় বিষণ্ণ মনে কথার ঝাঁপি খুলেছেন সাদি মহম্মদের বাল্য বন্ধু থেকে শুরু করে বহু শিক্ষার্থী, সহশিল্পী ও শুভাকাঙ্ক্ষী। এছাড়া আবৃত্তি শুনিয়েছেন ইকবাল বাহার চৌধুরী।

সাদি মহম্মদের স্মরণে কথা বলছিলেন কাজী নাবিল আহমেদ বড় ভাই হলেও সাদি মহম্মদ তার ছোট ভাই শিবলী মহম্মদকে বন্ধুর মতো আগলে রেখেছিলেন। বন্ধুসম ভাইকে হারিয়ে দিশেহারা, বিষণ্ণ শিবলী। তাই স্মরণসভায় এসে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বারবার। অভিমানী কণ্ঠে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘সাদি মহম্মদ খুব স্বার্থপর। খুব অন্যায় করে ফেলেছে আমার সঙ্গে। আমি কোনও দিন ক্ষমা করবো না তাকে। মা, বড় বোন তো আগেই চলে গেছে। এখন সাদি তাদের কাছে, তাদের আদর পাচ্ছে। অথচ আমি এখানে কত কষ্ট পাচ্ছি। এই জীবন কি জীবন! ও কেন বুঝলো না! সব কিছুতে অভিমান করতো। কিছু বললেই বাচ্চাদের মতো অভিমান করে ফেলতো। চলে যাবার আগের দিনও আমি, নিপা সবাই মিলে কত বোঝালাম, ভাই আমরা তোমাকে ভালোবাসি। রোজ রাতে দুই ভাই মিলে কত গল্প করতাম, পুরনো দিনের সিনেমা দেখতাম। একটাবার ভাবলো না, ও চলে গেলে আমরা কীভাবে থাকবো!’

ছোট বেলা থেকে সাদি মহম্মদের সঙ্গে বেড়ে উঠেছেন আবদুল গাফফার। একসঙ্গে স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করেছেন তারা। সেই স্মৃতির কিছু অংশ তুলে ধরেন শিল্পীর বন্ধু আবদুল গাফফার। তিনি জানান, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান দারুণভাবে অবিকল গাইতে পারতেন সাদি মহম্মদ। গাফফার বলেন, ‘ও কিন্তু সাদি মহম্মদ ছিল না, সে তখন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ছিল! আমরা যখন স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করেছি, সবাই গোল হয়ে বসতাম, আর সে হেমন্তের গলায় আমাদের গান শোনাতো। পরবর্তীতে শান্তিনিকেতন থেকে গান শিখে আসার পর প্রথমবার তার কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত শুনি; অর্থাৎ এই সাদি মহম্মদকে শুনি। তার কাছ থেকে শুনেই রবীন্দ্রসংগীতের প্রেমে পড়েছিলাম আমি।’    

সমবেত কণ্ঠে সংগীত পরিবেশনা পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন কৌশিক শংকর দাশ। শেষ দিকে সাদি মহম্মদের সুর করা কালজয়ী গান ‘সে দিন আকাশে মেঘ ছিল’ প্রচার করা হয়। রাত ১১টায় ‘রবিরাগ’র সদস্যদের সমবেত কণ্ঠে ‘মারের সাগর পাড়ি দেবো’ গানটি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শেষ হয়।




👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles