Sunday, June 15, 2025

মহানায়কের মহাকীর্তির ২০ বছর | খেলাধুলা


ক্রিকেট বিশ্ব যুগে যুগে বেশ কয়েকজন কিংবদন্তি এবং প্রতিভাবান ক্রিকেটারের দেখা পেয়েছে। নিজেদের অসাধারণ ক্ষমতায়, মায়াবী যাদুতে তারা মুগ্ধ করেছেন অগণিত ক্রিকেট ভক্তদের। শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে তারা প্রত্যেকেই প্রায় সমান। তবে কেউ কেউ সব সময়ই থেকেছেন আলাদা। তাদের চলা, তাদের কথা বলা। তাদের বিচক্ষণতা, ক্রিকেটীয় জ্ঞান, মেধা, প্রজ্ঞা, অর্জন আলাদা করেছে অন্যদের সঙ্গে। ব্রায়ান চার্লস লারা ঠিক তেমনই একজন। যাকে কোনো মাপকাঠিতে ফেলে তার ওজন নির্ণয় করা কঠিন।

ক্রিকেট মাঠে ব্রায়ান লারা খেলতেন রাজার মতো। ব্যাট হাতে প্রবল দাপট এবং ঔদ্ধত্যের সাথে অসাধারণ দৃষ্টনন্দন শট করার ক্ষমতা তাকে বাকী সবার থেকে আলাদা করে রাখত। ১৯৯০ সালে স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস অবসর নেওয়ার পর থেকে মরতে বসে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজদের মনের মধ্যে তাই ক্রিকেট বাঁচাতে এমন কাউকে দরকার ছিল যিনি দর্শকদের আটকে রাখতে পারবেন। আর তখনই ব্রায়ান লারার আবির্ভাব। যিনি পরবর্তী সময়ে আধুনিক ক্রিকেটে পৃথিবীর সেরা তারকা হয়ে ওঠেছিলেন। শুধু ক্যারিবিয়ান না, লারার নেশায় মত্ত হয়েছে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব।

যা তাকে এনে দিয়েছে সর্বকালের সেরা ক্যারিবীয় ক্রিকেটারের মর্যাদা। যদিও অনেকে বলে থাকে ক্যারিবীর ক্রিকেট মানে স্যার ভিভ, গর্ডন গ্রিনিজ, ক্লাইভ লয়েড এমন আরও অনেকে। তবে এদের সাথে লারার পার্থক্য, এসব কিংবদন্তিরা প্রায় একই সময়ে স্বর্ণালী একটা দল পেয়েছিলেন। আর লারা ভগ্নদশা এক রাজ্যের একাকী নায়ক ছিলেন। যার ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় কেটেছে একাকী যুদ্ধ করে। আর সে যুদ্ধ জয় করে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেওয়ার মধ্য দিয়ে।

হঠাৎ লারাকে নিয়ে এতো বন্দনার কারণ কি? এজন্য ফিরে যেতে হবে ২০ বছর আগে। আজকের এই দিনে লারা ক্রিকেটকে নতুন করে ভালোবাসতে শিখিয়েছে। তার ব্যাটে রাঙা হয়েছিল ৪০০ রানের ঝকঝকে এক ইনিংসের। 

যার নামের পাশে আছে কুয়ান্টিপল সেঞ্চুরি তার জন্য কোয়াড্রপল বড় কিছু নয়! নাহ অবশ্যই বড় কিছু। ঘরোয়া আসরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পাঁচশ করা আর আন্তর্জাতিক মঞ্চে চারশ করার মাঝে বিশাল ব্যবধান। জাতীয় দলের জার্সিতে খেলা, প্রতিপক্ষ, গণমাধ্যম, মাঠের উত্তেজনা, রোমাঞ্চ সব কিছু মিলিয়ে চাপ থাকে। সেই চাপ সামলে কোয়াড্রপল সেঞ্চুরি পাওয়া বিশাল কীর্তি।

২০০৪ সালে আজকের দিনেই সেই কীর্তি গড়েছিলেন ক্রিকেটের বরপুত্র ব্রায়ান চার্লস লারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার। বিশ্ব ক্রিকেটে এ বাঁহাতি একমাত্র ব্যাটসম্যান যিনি ফার্স্ট-ক্লাস ক্রিকেটে কুয়ান্টিপল সেঞ্চুরি এবং আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে কোয়াড্রপল সেঞ্চুরি করেছেন।

১৯৯৪ সালে উইকশায়ারের হয়ে ডরহামের বিপক্ষে ৫০১ রান করেন লারা। ২০০৪ সালে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আসে ৪০০ রান। ৭৭৮ মিনিট ক্রিজে থেকে ৫৮২ বলে লারা চারশত রানের ইনিংসটি খেলেন। ৪৩ বার মাটি কামড়ে আর ৪ বার হাওয়ায় ভাসিয়ে বল বাইরে পাঠিয়েছেন।

ম্যাচের প্রথম দিনই ব্যাটিংয়ে আসেন লারা। ৮১ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেন। দ্বিতীয় দিন সেঞ্চুরি, ডাবল সেঞ্চুরি ও ট্রিপল সেঞ্চুরিও পেয়ে যান। থাকেন ৩১৩ রানে অপরাজিত। পুরো বিশ্ব সেদিন রাতে অপেক্ষায় থাকে পরদিন লারার ব্যাটিংয়ের জন্য।

অ্যান্টিগার গ্যালারিতে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। লারা মাঠে ঢুকতেই গ্যালারি ফেঁটে পড়ে উল্লাসে। রাজ্যের চাপ ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়কের কাঁধে। আগের দুদিন যেভাবে ব্যাটিং করেছিলেন। ঠিক সেভাবেই শুরু। ইংলিশ পেসারদের দারুণ কয়েকটি শটে বাউন্ডারিতে পাঠান। স্পিনার বেটিকে উড়ান ছক্কায়। সেই বেটিকে সুইপ করে ৪০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন লারা।

৮৭ রান যোগ করে নিজেকে নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়। অবিশ্বাস্য! অতিমানবীয় এক ইনিংস। ২০ বছরের পরও এখনও এই রেকর্ড অক্ষত। এ সময়ে হুমকির মুখে পড়েছিল লারার কীর্তি। মাহেলা জয়াবর্ধনে ঘরের মাঠে ৩৭৪ করে সবথেকে বেশি কাছে গিয়েছিলেন। পারেননি মহানায়ককে ছুঁতে। গেইল ৩৩৩ করেছিলেন। ক্লার্কের ব্যাট থেকে এসেছিল ৩২৯ রান। মারকুটে শেবাগ ৩১৯ করেছিল। ডেভিড ওয়ার্নার ৩৩৫ করেছিলেন। কিন্তু তারা কেউই ‘লারা’ হাতে পারেননি।



Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles