Wednesday, June 25, 2025

মধ্যরাতেও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজট, যাত্রীদের ভোগান্তি


পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগ করতে গ্রামে ছুটছে মানুষ। এ কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সোমবার (৮ এপ্রিল) বিকাল থেকেই তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে মহাসড়কের ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটারজুড়ে গাড়ির দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। যা মধ্যরাত পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এতে ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা।

যাত্রী ও বাসচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার বিকালে ছুটি পেয়ে শিল্প-অধ্যুষিত গাজীপুর থেকে লাখ লাখ পোশাকশ্রমিক বাড়ির পথে রওনা দেন। এতে গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ যাত্রীদের মহাসড়কে ঢল নামে।

তারা আরও বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে জেলার শেষ প্রান্ত জৈনাবাজার এলাকার ১৫টি পয়েন্টে যাত্রী ওঠানামা করানোর কারণে এ যানজট তৈরি হয়। এতে ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার এলাকায় যানজট লেগে মধ্যরাত পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। ধীরগতিতে যানবাহন চলার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়ে তারা।

ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী আলম এশিয়া পরিবহনের চালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ঢাকা থেকে গাড়ি নিয়ে বের হয়েই জয়দেবপুর চৌরাস্তা এসেছি। এক ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে মহাসড়কের ওই অংশ পার হতে। যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে তোলা হচ্ছে যাত্রী। এ যেন কেউ দেখার নেই। যদি যাত্রী নেওয়া গাড়িগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে এনে মহাসড়কের এক পাশে রেখে যাত্রী তোলা হতো, তাহলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না।

নেত্রকোনাগামী হযরত শাহজালাল পরিবহনের চালক আনোয়ার শেখ বলেন, আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী তুলি না বিধায় কোনও মোড়ে আমাদের দাঁড়ানোর দরকার হয় না। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজেন্দ্রপুর এলাকা পার হতে প্রায় ১৫ মিনিটের মতো সময় লেগেছে। রাজন্দ্রেপুর পার হয়ে হোতাপাড়া, ভবানীপুর, মেম্বার বাড়ি ও বাঘের বাজার পাড় থেকে প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় লেগেছে।

সময় লাগার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মহাসড়কে ছোট ছোট পিকআপ, খোলা ট্রাক ও স্বল্প দূরত্বের যান দূরপাল্লার যাত্রী বহন করছে। তারা মহাসড়কের যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছে। মহাসড়কের ওপর দাঁড়িয়ে ভাড়া নির্ধারণ করে যাত্রী তুলছে আর মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকায় যানজট তৈরি হচ্ছে।

ট্রাকে যাত্রী পরিবহন করছেন চালক মমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ভবানীপুর থেকে যাত্রী নিয়ে কয়েকটি জায়গার যানজট পেরিয়ে মাওনা ফ্লাইওভারে উঠেছি। মাওনা ফ্লাইওভার থেকে নেমেই আবদার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী তুলছে গাড়িগুলো। এতে পেছনে দীর্ঘ যানজটের তৈরি হচ্ছে, যানজটে ফ্লাইওভার ছাড়িয়ে বহুদূর পর্যন্ত ছাড়িয়েছে।

এদিকে রাত ১২টা পর্যন্ত নগরীর দিগারকান্দা বাইপাস মোড় থেকে শুরু হয়ে শম্ভুগঞ্জ চায়না ব্রিজে টোল প্লাজা পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ১০ কিলোমিটারজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যানবাহন ধীরগতিতে চলার কারণে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছে।

একাধিক যাত্রী বলেন, গার্মেন্টস ছুটি হওয়ার কারণে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের চাপে সড়কে যানবাহন বেশি চলে আসায় এই যানজটের সৃষ্টি। অনেকে বাসে, অনেকে খোলা ট্রাক ও পিকআপে চড়ে বাড়ি ফিরছে। সড়কে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে যানজট কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। এই যানজট ঈদের আগের রাত পর্যন্ত থাকবে মনে হয়।

এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর রিজিওনের পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা এক-দেড় সপ্তাহ আগে জানিয়েছি মহাসড়কের ওপর যত্রতত্র কোনও গাড়ি দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলতে পারবে না। এখন তার বাস্তবায়ন করছি। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত আমাদের হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছে, মোবাইল টিম হিসেবে কাজ করছে, বিভিন্ন জায়গায় রেকার মোতায়েন করা হয়েছে, অ্যাম্বুলেন্স আছে। সিসি টিভি ও ড্রোনের মাধ্যমে মনিটরিং করছি। যেখানেই অসঙ্গতি পাওয়া যাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, মহাসড়কে গাড়ির অধিক চাপ। আজ ৬০ ভাগের ওপরে গার্মেন্টস ছুটি হয়েছে। শ্রমিকদের একটি বড় চাপ আছে। এ কারণেই গাড়ির সংখ্যা বেশি। কোথাও গাড়ি থেমে নাই, গাড়ি চলছে। মাঝেমধ্যে যানজট লাগছে, আবার কেটে যাচ্ছে।

জেলা পুলিশ সুপার মাসুম আহমদ ভূঁইয়া দীর্ঘ যানজটের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে যানবাহন ময়মনসিংহ হয়ে বিভিন্ন এলাকায় যাওয়ার কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে যানজট নিয়ন্ত্রণে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে।



Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles