পবিত্র ঈদুল ফিতরের আর খুব বেশি দেরি নেই। রাজশাহীর বড় বড় বিপণিবিতানগুলোতে শুরু হয়েছে ঈদের কেনাকাটা। সিল্কসিটি রাজশাহীর সিল্কের পোশাকের শোরুমগুলোও জমজমাট রোজার শুরু থেকে। হাজার হাজার টাকা খরচ করে ঈদের কেনাকাটা করছেন উচ্চবিত্তরা। মধ্যবিত্তরাও ব্যস্ত ঈদের কেনাকাটায়। তবে, বিপরীত চিত্র রাজশাহীর নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষের ক্ষেত্রে। তারা এখনও ঈদের কেনাকাটা শুরু করতে পারেননি। তাই কম দামের পোশাকের দোকানগুলোতে এখনো সেভাবে কেনাকাটা জমে ওঠেনি।
নিম্ন আয়ের বেশ কয়েকজন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতির কারণে দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতেই তারা হিমশিম খাচ্ছেন। তাই এখনো ঈদের নতুন পোশাকের কেনাকাটা শুরু করতে পারেননি তারা।
সকালে রাজশাহী নগরীর রেলগেট এলাকায় নিজের রিকশা মেরামত করাচ্ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা মো. নাসির (৪৮)। স্ত্রী ও সন্তানেরা চাঁপাইনবাবগঞ্জে থাকলেও তিনি একা থাকেন শহরের বহরমপুর এলাকায়। ঈদের কেনাকাটার খবর কি, জানতে চাইলে নাসির বললেন, ‘কিচ্ছু হয়নি ভাই। সপ্তায় রিকশার কিস্তি লাগে আড়াই হাজার টাকা। এরমধ্যে জিনিসপত্রের যে দাম, কুনুরকমে দিন চালাছি। অল্প কিছু টাকা বাড়ি পাঠাতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাড়িতে বাপ বাঁইচা আছে। ছ্যাইলা-মায়্যা আছে। হার ইসতিরি আছে। সবকে বুইলা দিয়্যাছি যে এবের কুনুকিছু কিনাকাটা করা যাবে না। আগেরগিলা দিয়াই এবের ঈদ করে লিতে হোবে। তা শুন্যা সভাই মুন খারাপ কর্যাছে। কিন্তু, কিচ্ছু তো করার নাই। আমার কি মুন খারাপ করে না? আমারও করে। কিন্তু সামর্থ্যতে জুটছে না।’
রাজশাহীর চৌমুহনী এলাকা থেকে প্রতিদিন কোদাল আর ডালি নিয়ে দল বেঁধে বাইসাইকেল চালিয়ে শহরে কাজের সন্ধানে আসেন আলতাফ হোসেনসহ কয়েকজন শ্রমিক। সকাল ১১টার দিকে কাজ শেষে ফিরে যাওয়ার সময় কথা হয় আলতাফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, শহরে কাজের সন্ধানে এলেও প্রায়ই তাদের কাজ না পেয়ে ফিরে যেতে হয়। যেদিন কাজ হয় সেদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়। রোজ কাজ না পাওয়ার কারণে এই টাকায় এখন সংসার চালানোই তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে গেছে। ডাল-ভাত আর ভর্তা খেয়ে রোজা করছি। ঈদের জন্য এখনো কেনাকাটা শুরু করতে পারেননি তিনি।
রাজশাহী নগরীর গণকপাড়া, রেলগেট, শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় ফুটপাতে থাকা কাপড়ের দোকানগুলো থেকে ঈদের আগে সাধারণত নিজের এবং সন্তানদের জন্য কম দামে পোশাক কিনে থাকেন নিম্নআয়ের মানুষ। এবার এসব দোকানগুলোতে বেচাকেনা জমে ওঠেনি।
শিরোইল এলাকার ফুটপাতের কাপড়ের দোকানি জনি কুমার সাহা বলেন, ‘আমাদের এখানকার জামা-কাপড়ের দাম কম। গরিব মানুষরাই এখানে আসেন। আগে এই সময়ে দিনে হাজার দশেক টাকার বিক্রি হতো। এখন ২ হাজার টাকার কাপড়ও বিক্রি হচ্ছে না। আরও এক সপ্তাহ পর হয়তো কিছু বিক্রি হবে। আসলে গরিব মানুষের হাতে টাকা নাই। কেনাকাটায় আগ্রহও নাই।’
ফুটপাতের কাপড়ের দোকানগুলো ক্রেতা সংকটে ভুগলেও বিভিন্ন বিপনিবিতানে অবশ্য ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়ে গেছে। রাজশাহীর মধ্যবিত্তরা সাধারণত সাহেববাজার আরডিএ মার্কেট ও হড়গ্রাম নিউমার্কেটে কেনাকাটা করে। গতকাল শনিবার সকালে মার্কেট দুটিতে গিয়ে দেখা গেছে, মানুষের উপচেপড়া ভিড়। ঈদের কোনাকাটা জমে উঠেছে।
আরডিএ মার্কেটের কাপড়ের দোকানি আনিসুর রহমান বলেন, ‘১০ রোজার পর থেকেই আমাদের এখানে ঈদের কোনাকাটা জমে উঠেছে। এবার পোশাকের দাম একটু বেশি হলেও বিক্রিও ভাল।’
রাজশাহীর উচ্চবিত্তরা নগরীর বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাকের শোরুম এবং সপুরা বিসিক এলাকার কয়েকটি সিল্কের শোরুমে কেনাকাটা করেন। বেশি দরে তারা পোশাক কেনেন। সপুরা সিল্কের শোরুম ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান বলেন, ‘এবার রোজার শুরুতেই তিনটি সরকারি ছুটি ছিল। ছুটিতেই আমাদের ঈদবাজার শুরু হয়ে গেছে। এবার অন্য বছরের তুলনায় বিক্রি বেশ জমে উঠেছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ঈদের কেনাকাটা চলছে।’