দূর থেকে দেখলে মনে হবে এ যেন জুরাইনের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রসারিত একটি খাল। কিন্তু আদতে তা নয়। জলাবদ্ধতার কারণে রাস্তার ওপর পানি উঠে এ দৃশ্য তৈরি হয়। ওই পানির ওপর দিয়ে নৌকার মতো বয়ে যায় ট্রাক, ছোট মিনিবাস, ইজিবাইক, রিকশার মনো নানা যান। তবে কিছু দূর যেতেই দেখা যায় ইঞ্জিন বিকল হয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে কোনও না কোনও যানবাহনের, অথবা যাত্রীসহ ডুবন্ত রাস্তার খাদে উল্টে পড়ে গেছে রিকশা বা মোটরসাইকেল।
এই দৃশ্যগুলো জুরাইন এলাকার নিত্যদিনের ঘটনা। ভাঙা সড়ক আর সামান্য বৃষ্টিতেই তৈরি জলাবদ্ধতায় নাকাল সেখানকার বাসিন্দারা। বছরের পর বছর এমন পরিস্থিতি চলছেঠ, কোনও উন্নতি নেই। বরং দিন দিন অবস্থার আরও অবনতি ঘটছে। প্রতিদিন ভাঙ সড়কে ছোট খাটো দুর্ঘটনা লেগেই আছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তারা একাধিকবার মানববন্ধন করেছেন, সিটি করপোরেশনের কাছে অনুনয় বিনয় করে দরখাস্ত দিয়েছেন। তবে কোনও কিছুই জনদুর্ভোগ কমাতে পারেনি।
এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জুরাইন ও দয়াগঞ্জের রেললাইন সংযুক্ত সড়কসহ জুরাইনের আশেপাশের বেশিরভাগ সড়ক চলাচলের অনুপযোগী। সড়ক জুড়ে বড় বড় গর্ত। বৃষ্টিতে এসব গর্তে পানি জমেছে। পুরো সড়কের ঢালাই ভেঙে উঠে গেছে। প্রতিনিয়ত রিকশা, ভ্যান, লেগুনা, বাস, ইজিবাইকসহ অন্য যানবাহন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হাসান মাহবুব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বছরের অধিকাংশ সময় জুরাইনের রাস্তাঘাটের চিত্র এমনই থাকে। বৃষ্টি হলে রাস্তাঘাট খালে পরিণত হয়। এলাকাবাসী অনেকবার মানববন্ধন করেছে, কাউন্সিলরের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে। কোনও লাভ হয়নি। মাঝেমধ্যে কোনোরকম ইট-বালু দিয়ে সংস্কার করে। কিন্তু কিছুদিন পর আবার আগের অবস্থা হয়ে যায়। আর বরাবরই বিশুদ্ধ পানির হাহাকার তো লেগেই থাকে। এই এলাকার বাসিন্দাদের দুঃখের অন্ত নেই। এসব সমস্যা সমাধানে কারও কোনও উদ্যোগ নেই।
জুরাইনের এই সড়ক ব্যবহার করে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকারি বাজারে চলাচল করে পণ্যবাহী অসংখ্য ট্রাক। তবে রাস্তার দুই পাশে গর্তের কারণে দ্রুতগতিতে চলতে পারে না কোনও যানবাহনই। ট্রাক চালকদের একজন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই রাস্তা যদি ভালো হতো তাহলে দয়াগঞ্জের জ্যাম লাগতো না। জ্যামে আটকে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা চলে যায়। মাঝেমধ্যে ছোট পিকআপ উল্টে এক্সিডেন্ট হয়।
শুধু জুরাইন নয়, যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জ সড়কটির চিত্রও একইরকম। ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত এই পথ পাড়ি দিতে হয় যাত্রী ও চালকদের। গত পাঁচ বছরেও এই রাস্তায় কোনও সংস্কার হয়নি বলে দাবি স্থানীয়দের।
ভাঙ্গা রাস্তার দুর্ভোগ সম্পর্কে লেগুনা চালক মো. আবুল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এ রাস্তাটি যেন দেখার কেউ নেই। প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে হাজার হাজার গাড়ি চলাচল করে। রাস্তার বেহাল দশায় গাড়ি প্রায়ই নষ্ট হয়। দেখা যাচ্ছে দিনভর গাড়ি চালিয়ে হাজার খানেক টাকা আয় করলেও ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে তার দ্বিগুণ টাকা খরচ হয়ে যায়। অনেকেই এই রুটে আসতে চায় না।
পথচারী শরিফ হাওলাদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এমন খারাপ রাস্তা গোটা দক্ষিণ সিটিতে আছে বলে মনে হয় না। রাস্তার এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসার জন্য বেশ ক্ষতি হচ্ছে। যানবাহন না চলায় ঘুরে বিকল্প পথে যেতে বাড়তি ভাড়া গুণতে হয়। জুরাইন থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে দয়াগঞ্জ মোড় যেতে হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায় যা আগের তুলনায় ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি। যাত্রীরাও নিরুপায় হয়ে দিচ্ছেন। রাস্তার এ বেহাল দশায় সন্ধার পর কোনও যান চলাচল করতে না চাওয়ায় বিপাকে চাকরিজীবী ও বিপদগ্রস্ত সাধারণ মানুষ।
জুরাইনের রাস্তাঘাটের এমন দুর্দশার কারণে জনসাধারণের পাশাপাশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আশেপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরও। ভাঙ্গা সড়কের ফলে বিকল্প রাস্তায় বাড়তি ভাড়া ও ধোলাইখালের দীর্ঘ জ্যামে বসে থেকে সময়মতো শিক্ষাঙ্গনে পৌঁছাতে পারে না তারা।
জুরাইনের বাসিন্দা মো. ইসমাইল মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সারা বছর ধরে শুনি এ মাসে কাজ হবে এ বছর কাজ হবে। এমন করে ১৫ বছর কাটলো, কোনও সংস্কার হয়নি। চলাফেরায় পায়ে ঘা হওয়ার উপক্রম। কোনও রাস্তা আর অক্ষত নেই। বলতে গেলে খাল হয়ে আছে। রাস্তায় পানি জমে, দুর্গন্ধ, মশার উপদ্রব। বৃষ্টি হলে বাসায় পানি ওঠে, পানি কমার কোনও নাম থাকে না। পানি নিষ্কাষনের সবগুলো ড্রেন এখন ময়লায় ভরাট হয়ে গেছে। কাউন্সিলররা কোনও কাজই করে না। বৃষ্টি হলেই ময়লা-আবর্জনায় পানি বাহিত নানান রোগে আক্রান্ত হয় শিশুসহ বয়োজ্যেষ্ঠরা। এলাকার পুরো বাজে অবস্থা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মীর হোসেন মীরু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জুরাইনে কিছু উন্নয়নকাজ চলমান আছে। রাস্তাঘাট সংস্কারের যে দাবি তা আমরা সিটি করপোরেশনকে জানিয়েছি। এখানকার জলাবদ্ধতার যে সমস্যা তা নিরসনে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা থাকলেও তৎকালীন দায়িত্বশীলরা তা আমলে নেননি। আর ঠিকাদারা যেসব কাজ করে তা খুবই নিম্নমানের। আমি এর আগেও সিটি করপোরেশনে ঠিকাদারের কাজ সম্পর্কে জানিয়েছি, কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
এদিকে বাজেট অনুযায়ী সঠিক পরিকল্পনার অভাব, নীতিমালা না মানা আর ঠিকাদাররা নিম্নমানের কাজ করার পরও তাদের দিয়েই দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করানোর কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন নগরবিদরা। নগরবিদ শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, উন্নয়নকাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে এমন অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দুর্বল, দুর্নীতিগ্রস্ত ঠিকাদারদের দিয়ে এই কাজগুলো দীর্ঘদিন করানোর ফলে রাস্তার এমন বেহাল দশা। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে উন্নয়ন প্রকল্প মানসম্মতভাবে করার পরামর্শ দেন এই নগরবিদ।
সড়ক মেরামতের বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ড. মহ. শের আলী বলেন, সড়ক মেরামতসহ জনগণের ভোগান্তি কমানোর জন্য যে কাজগুলো করা দরকার তা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দ্রুত করবে।
ছবি: প্রতিবেদক
👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com