Friday, June 27, 2025

আগুনে পুড়েছে কারখানা, গাজী টায়ার্সের ২৩০০ শ্রমিককে কে চাকরি দেবে?


নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ার কারখানায় আগুন লাগার ঘটনায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। কয়েক দফায় নিখোঁজের তালিকা হলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করতে পারেনি জেলা প্রশাসনের তদন্ত টিম। এদিকে কারখানাটিতে অগ্নিকাণ্ড ও লুটপাটের ঘটনায় প্রায় এক হাজার ৫০ কোটি টাকার অধিক লোকসান হয়েছে বলে মালিকপক্ষ দাবি করছেন। এই ক্ষতি পুষিয়ে ও ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে কারখানাটি সহসাই চালু করতে পারবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন শ্রমিকরা। এতে চাকরি নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন তারা। অন্য চাকরির জন্য ঘোরাঘুরি করলেও পাচ্ছেন না। এখন এত শ্রমিকের কোথায় চাকরি হবে এবং তাদের সংসার কীভাবে চলবে এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত রবিবার (২৫ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টায় রূপগঞ্জের রূপসীতে গাজী টায়ার কারখানায় আগুন লাগে। দীর্ঘ ৩২ ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট আগুন নেভানোর কথা জানালেও ফের দফায় দফায় ভবনটিতে আগুন জ্বলে ওঠে। এই অবস্থায় কারখানাটিতে চলে লুটপাট। মূলত কারখানার মালামাল লুটপাটকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ থেকে ভবনে আগুন দেওয়া হয় বলে স্থানীয়রা দাবি করেছেন। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে ড্রোন ক্যামেরা ও মই ব্যবহার করে কোন লাশের আলামত পায়নি বলে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে। পরে ভবনের নিচের বেসমেন্টে তল্লাশি চালিয়ে কিছু পাওয়া যায়নি বলেও জানায় ফায়ার সার্ভিস। আর ভবনের চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার ফ্লোর ধসে পড়ায় তা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে উদ্ধার কাজ শুরু করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) টিম।

এদিকে রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকালে গণশুনানি শেষে নিখোঁজ ব্যক্তিদের ৭৮ জনের তালিকা সংগ্রহ করেছে জেলা প্রশাসনের তদন্ত টিম। ওই দিন বিকালে নিখোঁজদের স্বজনরা আগুনে পুড়ে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে প্রবেশ করে মাথার খুলি ও হাড়ের টুকরো পেয়েছে বলে দাবি করেন। উদ্ধার হওয়া হাড়গুলো পুলিশের কাছে জমা দেওয়া হয়।

আগুনে পুড়েছে কারখানা, গাজী টায়ার্সের ২৩০০ শ্রমিককে কে চাকরি দেবে?

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় স্বজনদের দাবি অনুযায়ী ১৭৪ জন নিখোঁজের তালিকা করে ফায়ার সার্ভিস। পরে নিখোঁজের তালিকা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হলে শিক্ষার্থীরা ফের নতুন করে ১২১ জনের তালিকা করেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম করা হয়। সেখানে নামের তালিকা যাচাই-বাছাই করে একটি তালিকা করা হবে বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি। এই ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১০ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেবেন তদন্ত কমিটি।

নানান কারণে গাজী টায়ার কারখানার ভেতরে প্রশাসনের অনুমতি ব্যতীত কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না জানিয়েছেন কারখানার গেটে অবস্থান করা নিরাপত্তাকর্মীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নিরাপত্তাকর্মী জানান, নিখোঁজদের স্বজনরা সুযোগ পেলেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে উঠে যাচ্ছে। এতে বিপদ আরও বাড়তে পারে। তাছাড়া এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক দল লুটপাটকারী সুযোগ বুঝে লুটপাট করে। এ কারণে কারখানার এরিয়ার সবার প্রবেশ নিষেধ করেছে জেলা প্রশাসন। ফলে জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

ওই নিরাপত্তাকর্মী আরও জানান, নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে এখন অনেক কম লোকজন কারখানার সামনে আসতে দেখা যায়। তবে কারখানার কিছু শ্রমিক এসে ঘুরে যাচ্ছে।

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি প্রসঙ্গে গাজী টায়ার্সের নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত ৫ তারিখ সরকার পতনের পর এই কারখানায় আগুন দেওয়া হয় ও লুটপাট করা হয়। একইভাবে গত ২৫ আগস্ট কারখানায় আগুন দেওয়া হয়। কারখানার বড় বড় মেশিন অল্প সময়ের মধ্যে লুট করে নিয়ে গেছে। এটা একটা পরিকল্পিত ক্রাইম। তাছাড়া যেই ভবনটি আগুন লেগে পুড়ে গেছে, সেই ভবনে সমস্ত কেমিক্যাল, কাঁচা রাবার ও সালফার ছিল। এতে প্রায় এক হাজার ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই কারখানায় প্রায় ২৩০০ কর্মকর্তা ও শ্রমিক-কর্মচারী এই কারখানায় কাজ করতো।

আগুনে পুড়েছে কারখানা, গাজী টায়ার্সের ২৩০০ শ্রমিককে কে চাকরি দেবে?

শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানাটির এক কর্মকর্তা জানান, কারখানা শ্রমিকদের সবাইকে জুলাই মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে। আগস্ট মাসের বেতন দেওয়া হবে বলে ইতিমধ্যে সবাইকে জানানো হয়েছে। আর শ্রমিকদের কাউকে এখনও ছাঁটাই করা হয়নি।

তবে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাটি শিগগিরই চালু না হলে শ্রমিকরা বেকার হয়ে যাবে। এই শঙ্কায় শ্রমিকরা নতুন চাকরির খোঁজে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। মেশিন সেক্টরে রোলার ম্যান হিসেবে দীর্ঘ সাত বছর ধরে কাজ করতেন জাকারিয়া। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট কারখানায় সর্বপ্রথম আগুন দেওয়াসহ লুটপাট করা হয়। এর কিছুদিন পর ফের কারখানা চালু করা হয়। তবে সর্বশেষ গত ২৫ আগস্ট আগুন দেওয়ার পর শ্রমিকরা সবাই বেকার হয়ে পড়েছে। জুলাই মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে। আর আগস্ট মাসের বেতন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।

চাকরিচ্যুত করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের চাকরি থেকে ছাঁটাই করেনি। তবে মালিকপক্ষ বলেছে, কারখানা চালু হলে কাজ শুরু হবে। কিন্তু এখন কারখানার যেই জরাজীর্ণ অবস্থা তাতে করে কারখানা চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারখানায় প্রায় তিন হাজার শ্রমিক কাজ করতো।

কেমিক্যাল মিশ্রণের কাজ করতেন শ্রমিক আনোয়ার হোসেন। তিনি বলছেন, কারখানায় আগুন লাগার পর থেকে চাকরি নেই। চাকরির জন্য দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছি। কোথাও চাকরি পাচ্ছি না। এখন কে দেবে চাকরি? আমার মতো হাজার হাজার শ্রমিকের চাকরি নেই। জুলাই মাসের বেতন পেয়েছি। আর আগস্ট মাসের বেতন দেবে বলে জানিয়েছে। এরপর কীভাবে সংসার চালবো সেই দুঃশ্চিন্তায় ঘুম আসছে না।

তদন্ত কমিটির সদস্য ও সদ্য আগত রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পুড়ে যাওয়া ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেটি আপাতত ফ্রিজ করে রাখা হয়েছে। কেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না।

ভবনে উদ্ধার অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আগামী রবিবার বিকালে মিটিং হবে। সেখানে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে ভবনটি যেহেতু ঝুঁকিপূর্ণ এই অবস্থায় উদ্ধার করতে গিয়ে কেউ যেন দুর্ঘটনার শিকার হয়। সেই বিষয়টি সবার আগে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, যতগুলো হাড় সেখান থেকে পাওয়া যাবে সেগুলো ডিএনএ টেস্ট করে আমরা জানতে পারবো, সেখানে কতগুলো মানুষ মারা গেছে। এ ছাড়া নিখোঁজ ব্যক্তিদের ও অগ্নিকাণ্ডের সময়ে ওই স্থানের ফোন ট্র্যাকিং করেও এ বিষয়ে ধারণা পাওয়া যাবে।




👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles