তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করে আনা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন (রিভিউ) করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঁচ ব্যক্তির পক্ষে ৮০৮ পৃষ্ঠার রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেন আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া।
রিভিউকারীরা হলেন— সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।
আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া জানান, রিভিউ আবেদনটিতে নতুন করে পাঁচ জন অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এ বিষয়ে আমরা আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত থেকে অনুমতি নিয়েছি। রিভিউ আবেদনে প্রাথমিকভাবে মোট ১৪টি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। শুনানিকালে আমরা আরও কিছু যুক্তি সংযুক্ত করে আদালতে শুনানি করবো। আশা করছি, শুনানি হবে এবং শুনানি শেষে আদালত ওই রায়টি পুনর্বিবেচনা করে ত্রয়োদশ সংশোধনীকে সাংবিধানিকভাবে ঘোষণা করবেন।
সংবিধানের একটি মূল কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচন। আমাদের দেশের বিভিন্ন কোর্টের রায়ে বলা আছে— গণতন্ত্র সংবিধানের মূল কাঠামো, সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচনও গণতন্ত্রের মূল কাঠামো। সেসব কারণে, আমাদের (রিভিউকারীদের) যুক্তি হচ্ছে— ত্রয়োদশ সংশোধনী সংবিধানের মূল কাঠামোর সঙ্গে সম্পৃক্ত। কারণ মূল কাঠামো হলো গণতন্ত্র। সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে— জনগণ রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার মালিক। ফলে জনগণ যদি ভোট দিতে না পারে, তার প্রতিনিধি নির্বাচন না করতে পারে, তাহলে তো তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত হচ্ছে না। কাজেই এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করে এবং তারা তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে। তাই এই অধিকার সুপ্রিম কোর্ট বাদ দিতে পারে না বলেও রিভিউ আবেদনে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে বলে আইনজীবী জানান।
এর আগে ২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনে করা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে তা বাতিল করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তবে পরে দশম ও এগারোতম জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে বলে মত দেন আদালত। আর এক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনে সংসদে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যেকোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে বলেও জানিয়েছিলেন আদালত।
তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালত তার রায়ে বলেন, আপিল বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতেই আবেদনটি গৃহীত হয়েছে। এর মাধ্যমে ‘সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধনী) আইন ১৯৯৬’ এই নির্দেশের পর থেকে অবৈধ ও সংবিধান-বহির্ভূত ঘোষণা করা হলো। তবে আইনসম্মত না হলেও (প্রয়োজনের কারণে আইনসম্মত এবং জনগণের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইন—সুপ্রাচীনকাল ধরে চলে আসা নীতিমালার ভিত্তিতে) আগামী দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল করা ত্রয়োদশ সংশোধনীর আওতায়ই হতে পারে।
এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতিদের মধ্য থেকে অথবা আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে একজনকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিধানটি বাতিল করার পূর্ণ স্বাধীনতাও সংসদের থাকবে। একইসঙ্গে ২০০৫ সালে এ প্রসঙ্গে দায়ের করা লিভ টু আপিলটিও খারিজ করা হলো বলে জানান আদালত।
২০১১ সালের ৬ এপ্রিল এ আপিলের ওপর শুনানি গ্রহণ শেষে বিষয়টি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন আপিল বিভাগ।
রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মামলার অন্যতম পিটিশনার আবদুল মান্নান খান বলেন, ‘আপিল বিভাগের এই আদেশের ফলে দেশের গণতন্ত্রের ভিত আরও সুদৃঢ় হবে এবং বিচার বিভাগ আরও বেশি প্রভাবমুক্ত থাকতে পারবে।’
আপিলকারীর আইনজীবী এমআই ফারুকী বলেন, ‘আপিল বিভাগে এ রায়ের ফলে আমরা সংবিধান রক্ষা করতে পেরেছি। এটি সংবিধান, গণতন্ত্র ও জাতির জন্য খুবই ভালো হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা হলো সামরিক শাসনের আরেকটি রূপ। সামরিক শাসন আমলে যেমন সংবিধানের কিছু ধারা রহিত ও অকার্যকর রাখা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও তা করা হয়।’
বিশিষ্ট আইনজীবী ও এ মামলার আমিকাস কিউরি ড. এম জহির বলেছিলেন, ‘সুন্দর রায় হয়েছে, আমি দীর্ঘদিন বলেছি, বিচারকদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখতে। এ রায়ে আমার কথাই অনেকটা প্রতিফলিত হয়েছে। এ রায় অনুযায়ী আগামী দশম ও একাদশ নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায়। কিন্তু বিচারকদের না জড়ানোর জন্য সংসদ সংশোধনী আনতে পারবে বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিন জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ওই বছরের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ এ রিট খারিজ করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করা হয়।
এরপর ২০০৫ সালে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন অ্যাডভোকেট সলিম উল্লাহ। দীর্ঘ বিরতির পর গত ১ মার্চ শুনানি শুরু হয়। আদালত এ মামলায় আট জন আমিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) নিয়োগ করে তাদের মতামত শোনেন।
এদের মধ্যে পাঁচ জন সরাসরি তত্ত্বাবধায়ক সরকার-ব্যবস্থার পক্ষে মত দিয়েছেন। এরা হলেন— ড. কামাল হোসেন, টিএইচ খান, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম ও ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ।
অপর আমিকাস কিউরি ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পক্ষে মত দেন।
ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক ও ড. এম জহির তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের পক্ষে মত দিয়ে তাদের প্রস্তাব আদালতে তুলে ধরেন।
এছাড়া তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার পক্ষে মত দেন।
👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com