Sunday, June 29, 2025

ছেলে যাচ্ছে প্যারিস অলিম্পিকে, দোকান হারানোর ভয় চা বিক্রেতা মায়ের


আসন্ন প্যারিস অলিম্পিকে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন সাগর ইসলাম। অলিম্পিকে বাংলাদেশকে প্রতিধিনিত্ব করবেন তিনি। তুরস্কে অনুষ্ঠিত ২০২৪ ফাইনাল ওয়ার্ল্ড কোয়ালিফিকেশন টুর্নামেন্টে রিকার্ভ এককের সেমিফাইনালে উঠে এ কীর্তি গড়েন ১৮ বছর বয়সী এই আর্চার। যদিও বাংলাদেশের বেশিরভাগ অ্যাথলেটকে অলিম্পিকে খেলার জন্য ওয়াইল্ড কার্ডের আবেদন করতে হয়। আর সেখানে তীর-ধনুকের খেল দেখিয়ে সাগর সুযোগ পেয়েছেন সরাসরি। তার আগে এমন নজির গড়েন কেবল দুজন- গলফার সিদ্দিকুর রহমান ও আর্চার রোমান সানা।

এই খবরে দেশবাসীর সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের আনন্দে-উচ্ছ্বাসে কাটানোর কথা কিন্তু ছেলে যাচ্ছেন অলিম্পিকে খেলতে, আর দোকান হারানোর ভয় পেয়ে বসেছে চা বিক্রেতা মায়ের। ‘তোমার মা এলে বলবে, এক সপ্তাহের মধ্যে যেন চায়ের দোকান এখান থেকে সরিয়ে নেয়। নাহলে, ভেঙে ফেলা হবে’ বড় ছেলের কাছ থেকে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) এমন কথা শুনে ঘাবড়ে যান মা সেলিনা। সম্প্রতি গণমাধ্যমকে এই দুঃচিন্তার কথা জানান তিনি। তবে এসব ঝামেলা থেকে অবশ্য সাগরকে দূরেই রাখতে চায় তার পরিবার।

ছেলের এমন সাফল্যের পেছনে মাকে সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব দেন সাগর। কেননা তাকে আজকের অবস্থানে নিয়ে আসার নেপথ্যে কাজ করেছে মায়ের ছোট্ট একটি চায়ের দোকান। ১৫ বছর আগে স্বামীকে হারিয়ে অকূল পাথারে পড়েন সেলিনা। কিন্তু তবুও হাল ছাড়েননি। চায়ের দোকানকে পুঁজি করেই মিটিয়েছেন ছেলে-মেয়েদের সকল আবদার!

সম্প্রতি গণমাধ্যমকে সেলিনা বলেন, আমার বাচ্চার যখন তিন বছর বয়স। তখন ওর বাবা মারা যায়, রাস্তার ওপাশে পলিথিন দিয়ে ছোট্ট একটি চায়ের দোকান খুললাম। আমার চারটা ছেলে-মেয়ে। সাগর আমার সবচেয়ে ছোট সন্তান। তো এই ছেলেকে কোলে করে নিয়ে এসে মাচাংয়ের ওপর বসিয়ে রেখে আমি দোকান চালাতাম। আমি তখন অসহায়, আমার তো কেউ নেই। ভোর ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চায়ের দোকান চালিয়ে আমি সংসারও চালাতাম ছেলেকে স্কুলেও পাঠাতাম। আমি কোথাও থেকে সাহস পাইনি। আমি নিজে ত্যাগী। আমি এখানেই দাঁড়িয়ে বলেছিলাম যে, আমার চারটি সন্তানকে প্রতিষ্ঠিত করে দেখাব মানুষকে।

তিনি আরও বলেন, স্কুলের পাশেই একটি মাঠে আর্চারি অনুশীলন করাতেন কোচ সাইফুউদ্দীন বাচ্চু। এখনো তা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তা দেখে আর্চারির প্রতি ঝোঁক বেড়ে যায় সাগরের। তার আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়ে মা নিয়ে যান কোচের কাছে। বাচ্চুর ওখানে অনুশীলন হতো। আমার ছেলে দৌড়ে যেয়ে সেখানে বসে থাকত, দেখত, খেলত। দেখতে দেখতে যখন একটু বড় হলো। তখন বাচ্চুর সঙ্গে কথা বললাম আমি। তারপর আমার ছেলেকে তার কাছে ভর্তি করে দিলাম। অনুশীলন করতে করতে বিকেএসপিতে সুযোগ পায়।

ছেলের সাফলে গর্ব বোধ করছেন জানিয়ে সেলিনা বলেন, আনন্দ মানে, আমি এখন গর্বিত মা। আমার এতো পরিশ্রম বিফলে যায়নি, কাজে লেগেছে। আমার সন্তানের সুখবর পেয়ে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেছি, আল্লাহ আমার সন্তানকে আরও বড় করুক, সফল করুক। দেশের জন্য কিছু বয়ে নিয়ে আসুক। ‘মা ঈদ অনেক আসবে, কিন্তু আমার সামনে যে খেলা সেটা তো আর আসবে না’, এভাবেই সাগর আমাকে সান্ত্বনা দিয়েছে।

গর্বিত সন্তানের মা সেলিনার মনে এখন আনন্দের পাশাপাশি ভয়ও কাজ করছে। অবশ্য তার পুরো জীবনটাই সংগ্রামের। কখনো কারও কাছে কিছু চাননি। চাওয়ার ইচ্ছাও নেই। ছেলেরা কারি কারি টাকা নিয়ে আসবে, তেমনটাও প্রত্যাশা নেই তার। শুধু চান, সন্তানদের ভবিষ্যৎ যেন উজ্জ্বল হোক। কিন্তু দোকানের ভবিষ্যৎ নিয়ে সেলিনা আছেন বড় বিপদে। উচ্ছেদ করলে কোথায় যাবেন?

রাজশাহী মহানগরীতে আগের দোকানটি বারবার উচ্ছ্বেদের শিকার হওয়ায় রাজ্জাক মোড়ের পাশে আরডিএর জমিতে নতুন করে দোকান খোলেন সেলিনা। সেখানেও প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন তিনি ও তার পরিবার। এলাকার কাউন্সিলর তৌহিদুল হককে বলেও কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছেন না। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামানের (লিটন) কাছে বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ করেছেন তিনি।

সাগরের বড় ভাই বলেন, এটা এখন সরকারি জায়গা। নগর পিতা বা প্রধানমন্ত্রী যদি কিছু করে দিতে পারেন তাহলে আমাদের জন্য ভালো হবে। আরডিএ এখনো কাউকে জায়গাটা বুঝিয়ে দেয়নি। তারা তো বিক্রিই করবে। অন্যদের যদি ৫ বছর সময় দেয়, আমাদের না হয় একটু বেশিই সময় দিক। আমাদের তো এটা ছাড়া কিছু নেই। আমরা বলছি না যে, বিনামূল্যেই দিয়ে দিতে হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/কেএইচ




👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles