Monday, June 30, 2025

‘বাংলাদেশের হয়ে অলিম্পিকে প্রথম পদকটা জিততে চাই’


১৭ বছর বয়সী সাগর ইসলামের যেন ঘোর কাটছিল না।  সোমবার দিনের আলোতে তুরস্কের আনতালিয়ায় অলিম্পিক কোটা প্লেস টুর্নামেন্টে  সেমিফাইনালে উঠে প্যারিস অলিম্পিকে সরাসরি খেলা নিশ্চিত করে চমক দেখিয়েছেন। শুধু তাই নয় রিকার্ভ ব্যক্তিগত ইভেন্টে অলিম্পিকে কোটা প্লেসের পাশাপাশি দেশের হয়ে রূপার পদক জিতে ঈদের দিন বড় উপহার বয়ে এনেছেন।

বিকেএসপিতে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ুয়া আর্চারের এমন কীর্তির পর রাতেই হোটেলে ফোনে ধরা হয়। ক্লান্ত শরীরে সাগর অলিম্পিকে সরাসরি খেলার অনুভূতি ছাড়াও নিজের অনেক অজানা কথাও অকপটে বাংলা ট্রিবিউনের কাছে বলতে দ্বিধা করেননি।

বাংলা ট্রিবিউন: শুরুতে অভিনন্দন আপনাকেঅলিম্পিকে তৃতীয় ক্রীড়াবিদ হয়ে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেননিশ্চয়ই এই আনন্দ বাধভাঙ্গা।

সাগর ইসলাম: তা তো অবশ্যই। সব ক্রীড়াবিদই স্বপ্ন দেখে অলিম্পিকে সরাসরি খেলার। আমিও তাদের মধ্যে একজন ছিলাম। এবার তুরস্কে সেই স্বপ্নপূরণ হওয়াতে আমি আসলেই অনেক খুশি। যা বলে বোঝাতে পারবো না। রাতেই বিকেএসপির মহাপরিচালক স্যারসহ অনেকেই অভিনন্দন জানিয়েছেন।

বাংলা ট্রিবিউন: শুধু তো সরাসরি অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেননিপরবর্তীতে রূপার পদকও জিতেছেন!

সাগর ইসলাম: হ্যাঁ, এটা বাড়তি পাওয়া বলতে পারেন। সেমিফাইনালে ভালো খেলে ফাইনালে জায়গা করে নিয়ে পদক নিশ্চিত হয়। তবে সেখানে ধারাবাহিকতা থাকেনি। তারপরও আমি খুশি। একই দিনে দুটি সাফল্য এসেছে।

তীর-ধনুক হাতে সাগর বাংলা ট্রিবিউন: সরাসরি অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জনের পর তখন কার কথা বেশি মনে পড়েছিল?

সাগর ইসলাম: অবশ্যই আমার মায়ের কথা। আমার মা সেলিনা অনেক কষ্ট করে আমাদের বড় করছেন। তার অনুপ্রেরণায় ও চেষ্টায় আমি এই পর্যন্ত এসেছি। খুশির সংবাদের সময় মায়ের চেহারাই প্রথম আমার মানসপটে ভেসে ওঠে।

বাংলা ট্রিবিউন: মাকে খুশির খবর শোনাতে পেরেছিলেন নাকি..

সাগর ইসলাম: নাহ। সেই সুযোগ পাইনি। খেলার পর হোটেলে আসতে আসতে রাত হয়ে যায়। মা হয়তো তখন ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। দিনের আলোতে তার সঙ্গে কথা বলে খুশির সংবাদটি নিজেই জানাবো। যদিও এরই মধ্যে মিডিয়া কিংবা অন্য যে কোনও মাধ্যমে ছেলের সুসংবাদের খবরটি জেনে যাওয়ার কথা মায়ের।

বাংলা ট্রিবিউন: শুনেছি বাবা প্রয়াত শাহ আলম আপনার তিন বছর বয়সে স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করেছিলেনএরপর আপনাদের দুই  ভাই ও দুই বোনের সংসার মা সেলিনা একাই লড়াই-সংগ্রাম করে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন

সাগর ইসলাম: হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন। ছোটবেলাতে বাবা মারা যাওয়ার পর মা একাই আমাদের সংসার এগিয়ে নিচ্ছেন। আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। বাবার স্মৃতি আমার মনে নেই। বাবার মৃত্যুর পর মা রাজশাহীতে নিউ টাউনে একটি টি স্টল চালান। অনেক কষ্ট করে যাচ্ছেন। সংসার চালানোর পাশাপাশি আমাকে এই পর্যন্ত আনার পেছনে তার অবদান অনেক।

বাংলা ট্রিবিউন: সেটা কেমনবিস্তারিত যদি বলতেন

সাগর ইসলাম: রাজশাহীতে আমাদের বাসার পাশে এসবি আর্চারি ক্লাব রয়েছে। সেখানে দেখতাম ছেলেরা তীর-ধনুক নিয়ে চর্চা করছে। মা আমার আগ্রহ দেখে সেই ক্লাবে ভর্তি করে দেন। ২০১৭ সালে তখন আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি। এর এক বছর পর বিকেএসপিতে ট্রায়াল দিয়ে ভর্তি হই। ২০১৯ সালে আর্চারিতে সেই যে আনুষ্ঠানিক যাত্রা এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তাই বলবো মা-ই আমার জীবনে সবকিছু।

বাংলা ট্রিবিউন: রাজশাহীতে ক্রিকেট-ফুটবল কিংবা  হকির চর্চাও আছেআছে অন্য খেলাওএতো খেলা রেখে আর্চারিতে আগ্রহ কেন হলো?

সাগর ইসলাম: আসলে বাসার পাশে আর্চারি ক্লাব হওয়াতে সেখানেই তীর-ধনুকের প্রতি আগ্রহ জন্মে। তাই অন্য খেলার প্রতি মনোযোগ সেভাবে দেওয়া হয়নি। এই খেলাটি বেশ ভালো লেগে যায়।

কোচ ফ্রেডরিকের সঙ্গে সাগর বাংলা ট্রিবিউন: আপনি অলিম্পিকে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেনএর আগে গলফার সিদ্দিকুর রহমান ও আর্চার রোমান সানা সরাসরি দেশের হয়ে অলিম্পিকে প্রতিনিধিত্ব করেছেননিশ্চয়ই তা ভালো জানা আছে

সাগর ইসলাম: জানা তো আছেই। সিদ্দিকুর রহমান ভাই গলফ থেকে সবার আগে সরাসরি খেলেছেন। এরপর রোমান সানা ভাই। রোমান ভাই তো আমাদের অনুপ্রেরণা। আমি যখন বিকেএসপিতে ভর্তি হই সেই বছর রোমান ভাই অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন। তাকে আইডল মেনেই তো পথচলা।

বাংলা ট্রিবিউন: তুরস্কে তো আপনারা দলীয় ইভেন্টে কিছু করে দেখাতে পারেননিব্যক্তিগত ইভেন্টে রামকৃষ্ণ সাহা ও হাকিম আহমেদ রুবেলও ব্যর্থ হলেনতখন কি চ্যালেঞ্জটা বেশি অনুভব করেছিলেন?

সাগর ইসলাম: আসলে আমি কখনও আত্মবিশ্বাস হারাইনি। আমাদের সবাই প্রত্যাশা করেছিল যেন কেউ না কেউ সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করুক। আমি তা পেরেছি। অন্যরা চেষ্টা করেছে, তবে হয়নি। কঠোর পরিশ্রম আমাকে এই জায়গাতে এনেছে।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনারা অধিকাংশ সময় জাতীয় দলে মার্টিন ফ্রেডরিকের অধীনে সময় কাটানক্যারিয়ারে জার্মান কোচের অবদান কেমন?

বাংলা ট্রিবিউন: এখানে সবার কৃতিত্ব আছে। বিকেএসপিতে নূরে আলম স্যার কিংবা কোরিয়ান কোচের যেমন অবদান আছে, পাশাপাশি ফ্রেডরিকের অবদানও কম নয়। সবার কাছ থেকে শিখেই এই পর্যন্ত এসেছি, কিংবা এখনও শিখছি। বিকেএসপি কিংবা ফেডারেশনের সহযোগিতা না থাকলেও হয়তো সাফল্য পাওয়া কঠিন ছিল।

বাংলা ট্রিবিউন: এ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আপনার পঞ্চম পদকএখন অলিম্পিকে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করে দায়িত্ব কি বেড়ে গেলো? পরিষ্কার করে জানতে চাইলে প্যারিসে আপনার লক্ষ্য কী?

সাগর ইসলাম: আমি আগে সলিডারিটি গেমস, এশিয়ান আর্চারিতে পদক জিতেছিলাম। এবার তুরস্কে পদক জিতলাম। আমার কাছে মনে হয়– শুধু অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে এখানেই থেমে থাকলে হবে না। আমি মনে করি, প্যারিসে আমার পদক পাওয়ার যোগ্যতাও আছে। আমার মায়ের অনুপ্রেরণা ও সবার সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশের হয়ে অলিম্পিকে প্রথম পদকটা আমিই জিততে চাই। এটা সম্ভবও। পরিশ্রমের পাশাপাশি ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে তা হতেও পারে। কেননা যারা ওখানে খেলবে তাদের সঙ্গে তো নানান সময় খেলে থাকি। তাই পদক জেতা অসম্ভব কিছু নয়।

বাংলা ট্রিবিউন: শেষের দিকে চলে এসেছিআপনি কি মনে করেন আর্চারি খেলে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব?

সাগর ইসলাম: আমার মনে হয় সম্ভব। এখানে ভালো করলে চাকরি পাওয়া যায়। আর্থিক পুরস্কারও। তবে খেলোয়াড়রা যেন আরও ভালোভাবে চলতে পারে, আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে তার দিকে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি দেওয়া উচিত।

বাংলা ট্রিবিউন: পরিশ্রান্ত শরীরে সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

সাগর ইসলাম: আসলে এই মুহূর্তে অনেক ঘুম পাচ্ছে। তা নাহলে আরও কথা চালিয়ে যেতে পারতাম। আপনাকেও ধন্যবাদ। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আজ থেকে বিশ্বকাপ আর্চারি শুরু হচ্ছে। যেন সেখানেও ভালো কিছু করতে পারি।




👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles