Monday, December 23, 2024

ডিএনএ টেস্টে বাবার পরিচয়, হাইকোর্টের সম্পত্তি লিখে দেওয়ার নির্দেশ


রংপুরের মিঠাপুকুরে ধর্ষণ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামির সন্তানকে তার অর্ধেক সম্পত্তি লিখে দেওয়ার নির্দেশ‌ দিলেন হাইকোর্ট। এই নির্দেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতির বিষয়ও জানাতে বলেছেন হাইকোর্ট।

বুধবার (২০ মার্চ) বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি একেএম জহুরুল হকের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
ওই ব্যক্তির নাম আসাদুল ইসলাম (৪৪)।  মিঠাপুকুর উপজেলার সালটি গোপালপুর ইউনিয়নের বাঁধের পাড় এলাকার আলেফ উদ্দিনের ছেলে আসাদুল। ধর্ষণের ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল। সে সময় ডিএনএ পরীক্ষায় ওই সন্তান তার বলে শনাক্ত হয়। এই অবস্থায় ছেলের নামে অর্ধেক সম্পত্তি লিখে দেওয়ার শর্তে তাকে উচ্চ আদালত দুই মাসের জন্য অস্থায়ী জামিন দিয়েছিলেন।

আগামী ২১ মে সম্পত্তি লিখে দেওয়ার আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতির বিষয়ে আসামির আইনজীবীকে আদালতে জানাতে বলা হয়েছে। এসময় আসাদুল ইসলাম ও ভিকটিম ওই নারী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

শুক্রবার (২২ মার্চ) সরেজমিনে মিঠাপুকুর উপজেলার সালটি গোপালপুর এলাকায় গিয়ে কথা হয় আসাদুল ইসলামের সাথে। আসাদুল ইসলাম বলেন, মামলা সত্য না মিথ্যা তা নিয়ে আর কথা বলে লাভ নেই। দীর্ঘ আট বছর জেল খেটেছি। এখন এসে আদালত যে রায় দিয়েছে তা মেনে নিয়েছি। পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে কথা হচ্ছে আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সব কার্যকর করা হবে।

এসময় ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে মামলার ঘানি টেনে আসছে ছেলের পিতৃপরিচয়ের জন্য। আরটিআরএস’র সহায়তায় হাইকোর্টের এমন রায়ে আমি খুশি।

সন্তান সিয়াম বাবুও চান পিতার স্নেহ মমতা। থাকতে চান বাবার পরিবারের সাথে।

এদিকে ন্যায়বিচার পেয়ে খুশি ভুক্তভোগীর আরটিআরএস’র সিনিয়র নারী কর্মকর্তা বিলকিস আক্তার। আর পরিবারটি ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত পাশে থাকার কথা জানান‌ তিনি।

নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ধর্ষণের দায়ে আসাদুল ইসলামকে ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে হাইকোর্টের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম বলেন, আসামি আসাদুল ইসলামের নিজের ও তার বাবার নামে অনেক জমি রয়েছে। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া আসাদুলের সম্পত্তির অর্ধেক লিখে দেওয়ার শর্তে হাইকোর্ট তার জামিন মঞ্জুর করেছিলেন। বিষয়টি সমাধানের জন্য আসামিপক্ষের আইনজীবী নূরুল ইসলাম সুজনকে আদালতের পক্ষ থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, আসাদুল ইসলামের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে গর্ভবতী হন এক নারী। কিন্তু আসাদুল তাকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান। এ ঘটনায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন ওই নারী। গ্রামে সালিস করেও বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় আদালতে গড়ায়। এরই মধ্যে ওই নারী ছেলেসন্তান প্রসব করেন। ছেলেটির বয়স এখন ১৫ বছর। ডিএনএ টেস্টে প্রমাণিত হয়েছে ছেলেটির বাবা আসাদুল ইসলাম। ছেলেটির ভরণপোষণ ও বাবার পরিচয় পেতে ওই নারী আইনি লড়াই শুরু করেন।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে মিঠাপুকুর উপজেলার একটি গ্রামে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীর সঙ্গে আসাদুল ইসলামের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আসাদুল বিয়ের কথা বলে মেয়েটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ান। মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পড়লে আসাদুলকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। বিয়েতে রাজি না হওয়ায় মেয়েটি বাদী হয়ে ২০০৭ সালের ৩ জুন আসাদুল ইসলাম ও তার বাবাকে আসামি করে মিঠাপুকুর থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে একই বছরের ২২ ডিসেম্বর আসাদুলের নামে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। পরে আসাদুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সাক্ষ্য প্রমাণ ও শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল আসাদুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক জাবিদ হোসাইন।

 



Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles