Friday, December 27, 2024

৫৯৫ টাকা কেজি দরে দিনে ১ কোটি টাকার গরুর মাংস বিক্রি করেন খলিল


গো নিউজ২৪ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৪, ০৩:৩৫ পিএম আপডেট: মার্চ ৩০, ২০২৪, ০৯:৩৫ এএম

রমজানে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৯৫ টাকায় বিক্রির ঘোষণা দিয়েছিলেন উত্তর শাহজাহানপুরের মাংস ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান। খলিল গোস্ত বিতানে প্রথম রমজানেই শুরু হয় এই দামে মাংস বিক্রি। শুরুর দিনই ব্যাপক সাড়া পান তিনি; সেদিনই বিক্রির পরিমাণ ছাড়িয়ে যায় অর্ধকোটি টাকা। তবে সব রেকর্ড ভেঙেছে গতকাল শুক্রবার। ছুটির দিনে তাঁর বিক্রি ছাড়ায় কোটি টাকা, আর সে জন্য গরু জবাই করতে হয়েছে ৫০টি।

এ তথ্য নিশ্চিত করে আজ শনিবার খলিলুর রহমান বলেন, রোজায় মানুষ যাতে গরুর মাংস খেতে পারে, সে জন্য দামে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ছাড় দিয়ে মাংস তখনই বিক্রি সম্ভব হয়, যখন বেচাকেনা বেশি হয়। কারণ, ছাড়ে মাংস বিক্রি করলে লাভ কম হয়। তবে রমজানে মূল্যছাড় দেওয়ার পর মাংস কিনতে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে, ফলে বেড়েছে বেচাবিক্রিও।

খলিলুর রহমান বলেন, ‘বাজারের তুলনায় আগেও কম দামে গরুর মাংস বিক্রি করেছি। গতকাল বিক্রি বেশি হয়েছে। সব মিলিয়ে ৫০টি গরু জবাই দিয়েছিলাম। এক কোটি টাকার ওপর বেচাকেনা হয়েছে।’

তবে আজ ৩৫টির বেশি গরু জবাই দেবেন না জানিয়েছেন এই মাংস বিক্রেতা। তিনি বলেন, ‘রোজার দিনে স্টাফরা (কর্মী) সবাই ক্লান্ত হয়ে যান। ৪০ কর্মী একনাগাড়ে কাজ করছেন। অন্য সময়ে তাঁরা মোটামুটি ৫০ থেকে ৬০টি গরু কাটাকাটি করতে পারেন। কিন্তু রোজার কারণে তাঁদের ওপর চাপ হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য আজ থেকে বিক্রি কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একজন ক্রেতা একবারে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি মাংস কিনতে পারেন। লাইনে দাঁড়ানো সবাই যেন মাংস নিয়ে ফিরতে পারেন, সেই চেষ্টা করছি।’

সরেজমিনে উত্তর শাহজাহানপুর খলিল গোস্ত বিতানে দেখা গেছে, দুপুর ১২টার দিকে অন্তত শ দুয়েক মানুষ সারিতে দাঁড়ানো। দূরদূরান্ত থেকে অনেকে এসেছেন মাংস কিনতে। তবে মাংস পেতে তাঁদের কিছুটা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এর মধ্যে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়, গরুর সরবরাহ আসতে আরও আধা ঘণ্টা দেরি হবে। যাঁরা মাংস নিতে চান, তাঁদের কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। তবে এই ঘোষণার পরেও সারি থেকে কাউকে সরতে দেখা গেল না। সবাই অপেক্ষা করছিলেন কখন গরু আসবে।

সারিতে ছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী সুমন ইসলাম। এসেছেন রাজধানীর বাড্ডা থেকে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, লোকমুখে খলিল গোস্ত বিতানের কথা অনেক শুনেছি। তবে আগে আসা হয়নি। আজকেই প্রথম এসেছি। পাঁচ কেজি মাংস নেব। তাতে বাজারের চেয়ে এক হাজার টাকা কম পড়বে। সুমন ইসলাম জানান, কিছুটা কম দামে মাংস কেনার উদ্দেশ্যেই তিনি অফিস থেকে অল্প সময়ের জন্য ছুটি নিয়ে মাংস কিনতে এসেছেন।

খলিল গোস্ত বিতান থেকে আগেও মাংস কিনেছেন পারভেজ আলী। কাকরাইল থেকে আজ বেলা ১১টায় এসে দুই ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন, তবে তখনো মাংস কিনতে পারেননি। নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাস তিনেক আগে একবার এখান থেকে পাঁচ কেজি মাংস কিনেছিলাম। মাংসের মান বেশ ভালোই ছিল। আজকেও পাঁচ কেজি মাংস কিনতে এলাম। তবে আজকে মাংস পেতে সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে।’

খলিলুর রহমানের মাংসের দোকানে আগেও ভিড় দেখেছেন পারভেজ আলী। তবে এতটা ভিড় দেখেননি বলে জানান তিনি।

শাহজাহানপুরের খলিল গোস্ত বিতানে এতটা ভিড় হওয়ার কারণ ঢাকার বাজারে গরুর মাংসের বর্তমান দাম। গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর প্রতিবেদক রাজধানীর মগবাজার, পলাশী বাজার, হাতিরপুল বাজার ও নিউমার্কেট কাঁচাবাজার ঘুরে দেখেছেন, বিক্রেতারা প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি করছেন ৭২০ থেকে ৮০০ টাকায়। আবার মালিবাগ, রামপুরা ও শাহজাহানপুর বাজারের কিছু বিক্রেতা গরুর মাংসের দাম রাখছেন প্রতি কেজি ৬০০ টাকা। এ ছাড়া সরকারিভাবে রাজধানীর ৩০টি স্থানে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছিল ৬০০ টাকায়।

ঢাকার মাংসের বাজারে ইতিমধ্যেই আলোচিত হয়ে উঠেছেন খলিলুর রহমান। গত বছরের শেষ দিকে বাজারে যখন ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছিল, তখন তিনি কম দামে গরুর মাংস বিক্রি করে আলোচনায় আসেন। এবারের রোজায় এই ব্যবসায়ী ৫৯৫ টাকা কেজিতে গরুর মাংসের পাশাপাশি ৯০০ টাকা কেজিতে খাসির মাংসও বিক্রি করছেন৷ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর গতকাল বিশ্ব ভোক্তা দিবসের অনুষ্ঠানে এই ব্যবসায়ীকে ব্যবসায় উত্তম চর্চার স্বীকৃতি দিয়ে পুরস্কৃত করেছে।

পুরস্কারে ভূষিত হওয়ায় ভোক্তাদের প্রতি তাঁর দায়িত্ব আরও বেড়েছে বলে মনে করেন খলিলুর রহমান। সূত্র: প্রথম আলো



Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles