বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) স্থায়ী আয়ের উৎস সৃষ্টি এবং চলচ্চিত্র শিল্পকে গতিশীল করতে বিএফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণে ২০১৮ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটি তিন বছর তিন মাসের মধ্যে শেষ করার কথা। নির্দিষ্ট মেয়াদে কাজ শেষ না হওয়ায় এক দফায় আরও আড়াই বছর সময় বাড়িয়ে প্রকল্পটির মাত্র এক-তৃতীংশের মতো কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফলে নতুন করে আবারও সময় বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ৩৯ মাসের প্রকল্পটি ৯৩ মাসে গিয়ে গড়াচ্ছে। সময় বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়ছে।
প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিএফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণে ২০১৮ সালে প্রকল্পটি গ্রহণ করে সরকার। ৩২২ কোটি ৭৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি শেষ করার কথা ছিল। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হচ্ছে— চলচ্চিত্র শিল্পকে সম্প্রসারণ, সুদৃঢ় করাসহ বিএফএডিসিকে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করা ও প্রবৃদ্ধি অর্জন, বিএফডিসির ভেতরে ৯৪ কাঠার জমির ওপর ১২তলা বিশিষ্ট বহুমুখী ভবন নির্মাণের মাধ্যমে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা, ভবনের মধ্যে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও কারিগরি সুবিধা সংযোজনপূর্বক বিনোদনের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করা ও নতুন আয়ের উৎস সৃষ্টির মাধ্যমে বিএফডিসি তথা চলচ্চিত্র শিল্পের ভিত্তি মজবুত করা।
আইএমইডি নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ প্রকল্পটি নিবিড় পরিবীক্ষণ করা হয়েছে। ওই পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রকল্প পরিচালক, পরামর্শক, ঠিকাদার নিয়োগে বিলম্ব, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায়, ব্যয় না বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। তবে এই মেয়াদেও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় আরও দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত করতে ডিপিপি সংশোধন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে করে প্রকল্পটি শুরু থেকে শেষ হতে ৯৩ মাস লেগে যাচ্ছে। অবশ্য নতুন করে দুই বছর বাড়ানো হলেও তা যথাসময়ে শেষ হবে কিনা তা আগাম বলা যাচ্ছে না।
এদিকে প্রথম দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর সময়ে ব্যয় বাড়ানো না হলেও এবার ব্যয় বাড়ছে ৫০ কোটি টাকা। মূল ডিপিপি’র বাইরে অতিরিক্ত কিছু পণ্য কেনার প্রস্তাব সংযোজনের ফলে প্রস্তাবিত মোট প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৭২ কোটি ২৬ লাখ ৫৭ হাজার টাকা।
প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কার্যক্রম পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কাজ অত্যন্ত ধীর গতিতে চলছে। সরেজমিন পরিদর্শনের সময় (এপ্রিল ২০২৪) ১২ তলা ভবনের মধ্যে মাত্র দ্বিতীয় তলার ছাদের ঢালাই কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে কোনও ফিনিশিং কাজ হয়নি। একটি ‘অসম’ শর্তের সুযোগ নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃতভাবে কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছে বলে আইএমইডির প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৪৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৩৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ, ভবন নির্মাণের কাজ হয়েছে ৩১ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
প্রকল্প কাজ দেরি হওয়ায় কেনাকাটাগুলো পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়নি। ভবন নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়ায় প্রধান কোনও পণ্য কেনা সম্ভব হয়নি। কেনাকাটায় পিপিআর ২০০৮ বিধি প্রতিপালনে কিছুটা ব্যত্যয় হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। এদিকে ভবন নির্মাণ শেষ না হলে মূল পণ্যগুলো কেনা যাচ্ছে না। ওই পণ্যগুলো কবে কেনা হবে, তার সঠিক সময়ও নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। এর ফলে বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনাও তৈরি করা হচ্ছে না।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিজিপি) অনুমতি ছাড়াই ঠিকাদারের সঙ্গে মূল্য সমন্বয় সম্পর্কিত একটি অতিরিক্ত ক্লজ সংযোজন করা হয়েছে। এই শর্তের সুযোগ নিয়ে ঠিকাদার মূল্য সমন্বয়ের দাবি করে সরকারের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে। এছাড়া ভবন নির্মাণ কাজে বিভিন্ন গ্রেডের রডের মিশ্রণ ঘটানো হয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। ভবনের কিছু কাজ বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড অনুযায়ী হয়নি বলেও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
প্রকল্পে ডিপিপিতে বর্ণিত যোগ্যতা অনুযায়ী প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করা হয়নি। প্রথম বছর কোনও প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ ছাড়াই চলেছে প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পের জন্য একজন স্থায়ী প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের কথা থাকলেও সেটা হয়নি। বর্তমানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এ প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। এই কর্মকর্তা মন্ত্রণালয়ের আরও তিনটি উইংয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। এর আগে যে প্রকল্প পরিচালক ছিলেন—তিনিও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। ওই কর্মকর্তার বদলিজনিত কারণে এ প্রকল্পে নতুন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মাহফুজা আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রকল্পটি ২০১৮ সালে গ্রহণ করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু কাজ শুরু করতে চার বছর লেগে গেছে, যার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন পিছিয়ে পড়েছে। তবে বর্তমানে কাজ স্বাভাবিক গতিতে চলছে। নতুন করে আমরা আরও দুই বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে এই সময়টা বাড়িয়ে দেওয়া হলে আশা করছি, সেই অনুযায়ী কাজটি শেষ করতে সক্ষম হবো।’
চুক্তির সময় অসম শর্ত ও মামলা প্রশ্নে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘চুক্তির সময় এ ধরনের একটা ঘটনা ঘটেছে, যার সুযোগে ঠিকাদার মামলা করেছিলেন। প্রথমে তার পক্ষে রায় হলেও আপিলের রায় সরকার পক্ষে এসেছে। যার কারণে ঠিকাদার আগে কিছুটা ধীরগতিতে কাজ করলেও এখন গতি বেড়েছে।’
স্থায়ী প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ প্রশ্নে তিনি বলেন, স্থায়ী প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের কথা থাকলেও তিনিও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবের দায়িত্বে থাকায় বর্তমানে প্রকল্পের কাজে সমন্বয় ভালো হচ্ছে বলে দাবি করেন।
👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com