Tuesday, October 7, 2025

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে ‘গেম চেঞ্জার’ হবে জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে ‘জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি, ২০২৪’ গেম চেঞ্জার ও অব্যর্থ অনুঘটক হিসেবে মুখ্য ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।

বৃহস্পতিবার (২ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি সম্পর্কে অবহিতকরণ সভায় তিনি এ প্রত্যাশার কথা জানান। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

সভার মূল উদ্দেশ্য হলো—জাতীয় লজিস্টিক্স নীতিতে গৃহীত সংস্কার উদ্যোগগুলো সম্পর্কে অংশীজনদের সম্যক ধারণা প্রদান এবং সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে লজিস্টিক্স খাতের যথাযথ উন্নয়নে সার্বিক দিকনির্দেশনা প্রদান করা।

লজিস্টিক্সের মূল উপজীব্য হলো—ক্রেতার চাহিদা পূরণের জন্য ‘পয়েন্ট অব অরিজিন (প্রারম্ভিক স্থল)’ এবং ‘পয়েন্ট অব কনজাম্পসন (চূড়ান্ত গন্তব্য)’ এর মাঝে পণ্য ও সেবার সঞ্চালন। পণ্য ও সেবার এই সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় ভোক্তার কাছে সঠিক সময়ে সঠিক পণ্য গুণগত মান বজায় রেখে স্বল্পতম ব্যয়ে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে রপ্তানি সক্ষমতা বজায় রাখা, ক্রমবর্ধমান পণ্যমূল্যে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অর্জন, পরিবহন সময় হ্রাস, সার্বিক ব্যয় হ্রাস এবং সরবরাহ শিকল ব্যবস্থায় আস্থা অর্জনে লজিস্টিক্স খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লজিস্টিক্স খাত সেবা ও অবকাঠামো খাতের সমন্বয়ে গঠিত। ‘জাতীয় শিল্প নীতি ২০২২’ অনুসারে লজিস্টিক্স খাত রপ্তানি বহুমুখী ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসাবে বিবেচিত এবং উক্ত নীতিতে বাংলাদেশে প্রচলিত ২১টি খাতকে লজিস্টিক্স খাতের উপখাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১-এর অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সার্বিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, দক্ষ জনবল তৈরিসহ এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সক্ষমতা ধরে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ‘জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি, ২০২৪’ প্রণয়ন করে।

এ নীতি প্রণয়নকালে সরকারি/বেসরকারি বিভিন্ন অংশীজনের সমন্বয়ে ‘জাতীয় লজিস্টিক্স উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটি’র ৩টি সভা, উপ-কমিটিসমূহের সভাসহ প্রায় ৭৫টি সভা/সেমিনার/কর্মশালা/স্টেকহোল্ডার কনসালটেশন/ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন ইত্যাদি আয়োজনের পাশাপাশি ১৩টি দেশের লজিস্টিক্স নীতি, কৌশল, পরিকল্পনা পর্যালোচনাসহ বিশদ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। গত ৮এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ সভায় বাংলাদেশের ‘জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি, ২০২৪’ চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়।

‘জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি, ২০২৪’-এর উল্লেখযোগ্য দিকগুলো হলো:  
• এ নীতির অভীষ্ট লক্ষ্য হচ্ছে—বিশ্বমানের প্রযুক্তিভিত্তিক, সময় ও ব্যয়সাশ্রয়ী, সুদক্ষ ও পরিবেশবান্ধব লজিস্টিক্স ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধি করে টেকসই ও অভীষ্ট অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন।

• নীতির উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে—আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে লজিস্টিক্স সেবায় দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনে সময় ও ব্যয় হ্রাস, প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় সাধন, বিশ্বমানের ট্র্যাকিং ও ট্রেসিং ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা, দক্ষ জনশক্তি তৈরি এবং পরিবেশবান্ধব লজিস্টিক্স প্রতিবেশ তৈরি করা।

• লজিস্টিক্স খাতের সমন্বিত ও টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে ‘জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি, ২০২৪’ বাংলাদেশের সার্বিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিল্প ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি অর্জন, দক্ষ জনশক্তি তৈরিসহ লজিস্টিক্স খাতের সেফটি, সিকিউরিটি ও কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

• এই নীতির মাধ্যমে লজিস্টিক্স অবকাঠামো ও সেবামানের নিশ্চয়তার ফলে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিবেশের ওপর ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাগণ আরো আস্থাশীল হয়ে উঠবেন।

সভায় জানানো হয়, জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি, ২০২৪-এ ১৪টি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ১ম অধ্যায়ে প্রেক্ষাপট ও পথপরিক্রমা; ২য় অধ্যায়ে সংজ্ঞা; ৩য় অধ্যায়ে জাতীয় লজিস্টিক্স নীতির অভীষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য; ৪র্থ অধ্যায়ে জাতীয় লজিস্টিক্স নীতির পরিধি, প্রয়োগ, বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ; ৫ম অধ্যায়ে লজিস্টিক্স খাতের অবকাঠামো উন্নয়ন; ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে লজিস্টিক্স খাত ও ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন; ৭ম অধ্যায়ে লজিস্টিক্স খাতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার; ৮ম অধ্যায়ে লজিস্টিক্স খাতে মানবসম্পদ ও দক্ষতা উন্নয়ন; ৯ম অধ্যায়ে লজিস্টিক্স খাতে বিনিয়োগ; ১০ম অধ্যায়ে পরিবেশবান্ধব লজিস্টিক্স খাত ব্যবস্থাপনা; ১১তম অধ্যায়ে লজিস্টিক্স খাতে সেফটি, সিকিউরিটি এবং কমপ্লায়েন্স; ১২তম অধ্যায়ে নীতি বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ, পর্যালোচনা ও মূল্যায়নে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা; ১৩ তম অধ্যায়ে মূল কর্মসম্পাদন নির্দেশক (কি পারফরম্যান্স ইন্ডিকেটর) এবং ১৪ তম অধ্যায়ে উপসংহার। 

প্রস্তাবিত ‘জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি, ২০২৪’-এ মোট ৭টি পরিশিষ্ট সংযোজিত হয়েছে। পরিশিষ্ট ০১ এ লজিস্টিক্স খাত সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞাসমূহ; পরিশিষ্ট ০২ এ লজিস্টিক্স খাত সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নীতি, আইন ও বিধি-বিধানের তালিকা; পরিশিষ্ট ০৩ এ লজিস্টিক্স খাতের বিস্তারিত নীতি সংস্কার প্রস্তাবনা; পরিশিষ্ট ০৪ এ লজিস্টিক্স খাতে জনশক্তির চাহিদা, দক্ষতা ঘাটতি ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা; পরিশিষ্ট ০৫ এ লজিস্টিক্স উপখাতসমূহে বিনিয়োগ সম্ভাবনা; পরিশিষ্ট ০৬ এ লজিস্টিক্স খাতের উন্নয়নে গবেষণালব্ধ সুপারিশমালা এবং পরিশিষ্ট ০৭ এ জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি বাস্তবায়নের নমুনা কর্মপরিকল্পনা সন্নিবেশিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি, ২০২৪ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কার্যাবলির মধ্যে রয়েছে— বহুমাধ্যমভিত্তিক লজিস্টিক্স হাব তৈরি; সকল অর্থনৈতিক অঞ্চল, আন্তঃদেশীয় অর্থনৈতিক করিডোর, শিল্পাঞ্চল, বিমানবন্দর, নৌবন্দর, সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর এবং আইসিডির সঙ্গে বহুমাধ্যমভিত্তিক যোগাযোগ স্থাপন; দেশব্যাপী টেম্পারেচার কন্ট্রোল্ড লজিস্টিক্স সুবিধা তৈরি; পণ্য পরিবহনে পরিবেশবান্ধব যানবাহন চালুকরণ; কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিংসহ আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সমন্বিত লজিস্টিক্স ব্যবস্থার উন্নয়ন; সাশ্রয়ী ও নিরাপদ কন্টেইনার টার্মিনাল এবং বন্ডেড ও নন-বন্ডেড ওয়্যারহাউজ নির্মাণ; দেশের সকল আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে পৃথকভাবে আধুনিক কার্গো সার্ভিস প্রচলন; দেশের রেল নেটওয়ার্কে আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ আধুনিক সিগন্যাল ব্যবস্থা, বৈদ্যুতিক ট্র্যাকশন, আধুনিক যন্ত্রনির্ভর পণ্য হ্যান্ডলিং, কুলিং কার সংযোজন ব্যবস্থার প্রবর্তন ইত্যাদি। 

এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নে লজিস্টিক্স খাতের সকল উপখাতে ব্যাপকভাবে দেশি-বিদেশি বেসরকারি ও সরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণ অন্যতম। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সার্বিক নির্দেশনা ও নেতৃত্বে জাতীয় লজিস্টিক্স উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির (NLDCC) সচিবালয়ের সমন্বয়ে এ কার্যক্রমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাণিজ্য, শিল্প, নৌ- পরিবহন, সড়ক ও মহাসড়ক, রেলপথ, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ/মন্ত্রণালয়, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সিনিয়র সচিব/সচিব/নির্বাহী চেয়ারম্যানগণ বিশেষভাবে অবদান রেখেছেন। জাতীয় লজিস্টিক্স উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটি, উপকমিটিসমূহ ও টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপের সকল সরকারি ও বেসরকারি খাতের সদস্য, বিশ্বব্যাংক, ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্স কর্পোরেশনসহ উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, বিভিন্ন পর্যায়ের বেসরকারি চেম্বার, অ্যাসোসিয়েশন ও ব্যবসায়ী সংগঠন এবং লজিস্টিক্স খাত ও নীতি সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ এ নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় ব্যাপকভাবে সহায়তা করেছেন।

সভায় অতিথি হিসেবে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এমপি, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এমপি, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) এবং বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) সভাপতি মাহবুবুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক, ডিপি ওয়ার্ল্ডের কান্ট্রি ডিরেক্টর শামীম উল হক, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রাক্তন সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির এবং পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ।




👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles