Monday, June 30, 2025

সুরমা-কুশিয়ারার পানি এখনো বিপৎসীমায়, সাড়ে ৯ লাখ মানুষ পানিবন্দি


সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ৬ টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কেবল সারি গোয়াইন নদীর গোয়াইনঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচে নেমেছে।

বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার (২১ জুন) সকাল পর্যন্ত কোন বৃষ্টিপাত হয়নি। ফলে সবকটা পয়েন্টে পানি কমতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও বৃষ্টিপাতের হার কমে এসেছে। 

অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, এখনো জেলার ১৩টি উপজেলাসহ সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৩ টি ওয়ার্ডের ৯ লাখ ৫৭ হাজার মানুষ পানিবন্দি। পুরো সিলেট বিভাগের ২৬ হাজার ৪শ ৪ হেক্টর আউশ ধান ও বীজতলা, সবজি ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ৬৯৮ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ২১ হাজার ৭৮৬ জন মানুষ।সিলেট নগরীতে ৩ হাজার বন্যার্ত বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। জেলার সিলেট সদর, বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর, কোম্পানীগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জে বন্যার পানির বিস্তৃতি ঘটেছে।

সিলেট জেলার ৪৬৭টি স্কুল ও মাদ্রাসায় পানি ঢুকে পড়েছে। এতে বিদ্যালয়ের মেঝে ও আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র অনুযায়ী, আজ (শুক্রবার) সকাল ৯টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে ৬১ সেন্টিমিটার, নদীর সিলেট পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদীর আমলশীদ পয়েন্টে ৫৫ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ০৫ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১০৩ সেন্টিমিটার ও শেরপুর পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সবগুলো পয়েন্টে গত দিনের তুলনায় পানি কমেছে। কেবল কুশিয়ারার ফেঞ্চুগঞ্জ ও শেরপুর পয়েন্টে অল্প বেড়েছে।

সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর, ঘাসিটুলা, মাছিমপুর, ছড়ারপার, তালতলা, কুয়ারপার, মেন্দিবাগ, কামালগড়, চালিবন্দর, যতরপুর, সোবহানীঘাট, কালীঘাট, শেখঘাট, তালতলা, জামতলা ঘুরে দেখা যায়, বাসা—বাড়িতে হাঁটু সমান পানি। এসব এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, রিজার্ভ ট্যাংকে নর্দমার পানি প্রবেশ করায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক সজিব হোসাইন জানান, বৃহস্পতিবার ২৪ ঘন্টায় সিলেটে বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ২০মিলিমিটার। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টার মধ্যে  বৃষ্টিপাত হয়নি। চেরাপুঞ্জিতেও বৃষ্টিপাত এর হার কমে এসেছে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ভারতের চেরাপুঞ্জির বৃষ্টির ওপর সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির বিষয়টি অনেকটা নির্ভর করছে। কারণ, ভারতের পাহাড়ি ঢলেই সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। এ জন্য চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি কম হলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হবে। পানি সবকটা পয়েন্টে কমছে।
 
অন্যদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট অঞ্চল কার্যালয় সূত্র জানায়, বন্যার পানিতে সিলেট অঞ্চলের ২৬ হাজার ৪শ ৪ হেক্টর ফসল পানিতে নিমজি¦ত রয়েছে। যার মধ্যে আউশ ধানের ফসল, বিজতলা, বোনা আমন ও সবজি রয়েছে। সিলেট বিভাগে সর্বমোট ১৭ হাজার ৪শ ৬০ হেক্টর জমির আউশ ধানের ফসল নিমজি¦ত হয়েছে। জেলাওয়ারি পরিসংখ্যানে আউশ ধান ফসল সিলেটে ১০ হাজার ১শ ৮৬, মৌলভীবাজারে ৪ হাজার ৮শ ৮৪, হবিগঞ্জে ৬৬৩ ও সুনামগঞ্জে ১ হাজার ৭শ ২৭ হেক্টর জমির ফসল নিমজি¦ত হয়েছে। সিলেট ও মৌলভীবাজারের আউশ ধানের বীজতলা নষ্ট হয়েছে ১ হাজার ১শ ২৩ হেক্টর। শুধু সিলেটে বোনা আমন ধানের ফসল নিমজি¦ত হয়েছে ১শ৬৭ হেক্টর। পুরো বিভাগে ৭ হাজার ৬শ ৫৪ হেক্টর চাষকৃত সবজি নিমজ্জিত হয়েছে বন্যার পানিতে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মতিউজ্জামান জানান, কৃষি সেক্টরের ক্ষয়ক্ষতি এখনো নিরুপন হয়নি, বন্যার পানি নেমে গেলে তা নিরুপণ করা হবে।

অন্যদিকে সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১ হাজার ৪৭৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়গুলোয় এখন পবিত্র ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন বন্ধ চলছে। এর মধ্যে ৪১৭টি বিদ্যালয়ে পানি ঢুকেছে। আশ্রয় কেন্দ্র চালু করা হয়েছে ১৫৪টি বিদ্যালয়ে।
সিলেটের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাখাওয়াত এরশেদ জানান, বিদ্যালয়গুলোয় এখন ছুটি চলছে। তবে যেসব বিদ্যালয়ে বন্যার পানি ঢুকেছে, সেগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
 
সিলেটের জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব হবে না। আনুমানিক জেলায় ৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা প্লাবিত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে তথ্য এসেছে। তবে এ সংখ্যা বাড়বে।’

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, জেলার ১৫৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৩০টি ইউনিয়নের ১ হাজার ৬০২ টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত। আর সিটি করপোরেশনের ২৩ টি ওয়ার্ডের বন্যা কবলিত মানুষের সংখ্যা ৫৫ হাজার। তিনি জানান, এরইমধ্যে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের জন্য ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এবং ৬০০ মেট্রিক টন চাল দেওয়া হয়েছে। একই সাথে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে। বরাদ্দ আরো বাড়বে।

উল্লেখ্য, গত ২৯ মে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটে বন্যা দেখা দেয়। ৮ জুনের পর থেকে বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। সর্বশেষ গত সোমবার (১৭ জুন) থেকে শুরু হওয়া অবিরাম বৃষ্টিতে ফের জেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।




👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles