Friday, February 21, 2025

সংবিধিবদ্ধ সংস্থায় চাকরি করে বিদেশে ব্যবসা করার টাকা ইউনূস পেলেন কোথায়


ট্যাক্স ফাঁকি, শ্রমিকদের কল্যাণ ফান্ডের টাকা মেরে দেওয়াসহ সরকারি সংবিধিবদ্ধ সংস্থায় চাকরি করে বিদেশে ব্যবসা করার টাকা ইউনূস কোথায় পেলেন-সেই অনুসন্ধানে দৃষ্টি দিতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার (২৫ জুন) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে ভারত সফরের বিস্তারিত জানাতে সংবাদ সম্মেলনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ড. ইউনূসকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকা হোক, ইউরোপ হোক যেকোনো দেশে কেউ যদি বছরের পর বছর ট্যাক্স ফাঁকি দেয়, তার বিরুদ্ধে দেশের সরকার কি ব্যবস্থা নেয়? তার উত্তরটা কিন্তু দেয়নি। শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে এতো কথা হয়, কিন্তু শ্রমিকদের কল্যাণ ফান্ডের টাকা যদি মেরে খায়, তার বিরুদ্ধে এরা কি ব্যবস্থা নেবে, কি ব্যবস্থা নিয়ে থাকে?’

পড়ুন: শেখ হাসিনা দেশকে বিক্রি করে না

তিনি বলেন, ‘ইউনূসের বিরুদ্ধে আমরা বা আমাদের সরকার লাগেনি। গ্রামীণ ব্যাংকটা তৈরি করেছিলো জেনারেল এরশাদ সরকারের আমলে। তখন একজন এমডি খোঁজা হচ্ছিলো এবং ড. ইউনূসকে এনে ব্যাংকের এমডি করা হয়। এই ব্যাংক কিন্তু তার নিজের করা না। সে সেখানে এমডি হিসেবে চাকরি করতেন এবং বেতন তুলতেন। গ্রামীণ ব্যাংক হচ্ছে সরকারের সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। টাকা বেতন কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকেই দেওয়া হতো। তিনি এমনভাবে প্রচার করেছেন যেন, এটা তার নিজেরই করা।

‘ওই ব্যাংকের আইন ছিলো যে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত একজন এমডি হিসেবে থাকতে পারেন। এর ঊর্ধ্বে আরও দশ বছর তিনি আইন ভঙ্গ করে ছিলেন। যখন বাংলাদেশ ব্যাংক তার নজরে এনে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং উপদেষ্টা গওহর রিজভী সাহেব তাকে অনুরোধ করেছিলেন, বয়স হয়ে গেছে, তাছাড়া দশ বছর আইন ভঙ্গ করে আছেন, এখানে আপনি উপদেষ্টা হিসেবে থাকেন। কিন্তু তিনি এমডি পদ ছাড়বেন না। ড. ইউনূস কিন্তু সরকারের বিরুদ্ধে অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন। দুটি মামলাতেই তিনি হেরে যান। মামলা কিন্তু কখনো সরকার করেনি। এখনও তার বিরুদ্ধে যে মামলা এটা সরকার করেনি।’

গ্রামীণ ব্যাংক বাঁচাতে তার সরকারের সহযোগিতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রামীণ ফোনের ব্যবসাটা আমিই তাকে দিয়েছিলাম। এটাও মনে রাখা উচিত। কারণ গ্রামীণ ব্যাংক তার আমলে প্রায় ক্লপ্স (বন্ধ) করে যাচ্ছিল। তখন আমার সরকার প্রথমে একশ কোটি টাকা, পরে দুইশ কোটি টাকা, এরপর আরও একশ কোটি টাকা সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংকটি চালু রাখতে সহায়তা করি। তখন উনি প্রস্তাব দেন যে, ফোনের ব্যবসাটা পেলে এর যে মুনাফাটা হবে, সেটি গ্রামীণ ব্যাংকে জমা হবে এবং সেটা দিয়ে ব্যাংক চলবে। তাকে জিজ্ঞসা করা উচিত আজ পর্যন্ত ওই গ্রামীণ ফোনের একটি টাকা ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে কি না? গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে অনুদান এসেছে, তার কয়টি টাকা ব্যাংকে গিয়েছে? প্রতিটি সময় ওই টাকা দিয়ে নতুন ব্যবসা খুলে ব্যবসা করে গেছে। কোনো ট্যাক্স দেয়নি। যখনই মামলা হয়েছে তিনি কিছু টাকা শোধ দিয়েছে। তার মানে কি, প্রমাণ হয়ে গেলো যে সে ট্যাক্স ফাঁকি দেয়।’

ড. ইউনূস শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডে ২০০৬ সাল থেকে একটি টাকাও দেয়নি, উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সেজন্য শ্রমিকরা তার নামে শ্রমিকদের কোর্টে মামলা করেছে। সেই মামলায় সে শাস্তি পেয়েছে। এখানে আমার কি দোষ? তাকে তো সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা তো আমি করেছিলাম। তার মাইক্রোক্রেডিট আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ছিলো না। আমি কো-চেয়ার হিসেবে অংশগ্রহণ করি, জাতিসংঘে প্রস্তাব আনি। আমি সবাইকে বোঝাই…আমি ভাবতাম এটা বোধহয় ভালো মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করে। কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝলাম এটা দারিদ্র্যমুক্ত না দারিদ্র্য লালন-পালন করে। আর ওই গরীব মানুষগুলো দিনভর কষ্ট করে উচ্চ হারে সুদ দিতে হয়। যশোরে যে পরিবারগুলোকে হিলারি ক্লিনটনকে এনে লোন দিয়েছিলো, সেই পরিবারগুলো কোথায় এখন। জমিজমা সব বেঁচে দিয়ে পালিয়েছে এই সুদের চাপে, কেউ আত্মহত্যা করেছে।

‘আমি বলেছিলাম এতো সুদ না নিয়ে তার যেন সহনশীল করে দেয়, যাতে মানুষ দারিদ্র্যতা থেকে উঠে আসতে পারে। এতো যদি করে থাকে বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচন হলো না কেন। দারিদ্র্য বিমোচন করলাম তো আমি। আজকে ৪১.৬ ভাগ থেকে নামিয়ে আমি ১৮.৭ ভাগে নামিয়ে এনেছি সাত ১৫ বছরে। সেই ক্রেডিটও নেয়। সেটা কোনো কোনো আন্তর্জাতিক পত্রিকায় লিখে ফেলে এটা গ্রামীণ ব্যাংক, ওই ব্র্যাক, অমক করে ফেলেছে। আমার প্রশ্ন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে দারিদ্র্যের হার কতো ছিলো। আর শেখ হাসিনা আসার পর কতো কমেছে সেটা একটু হিসেব করে বলুক না। মাথাপিছু আগে কতো ছিলো এখন কতো কমেছে? ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের সংখ্যা আগে কতো ছিলো এখন কতো কমেছে, সেটা লিখুক।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবার লিখেছে, নোবেল পুরস্কারের জন্য নাকি তার সঙ্গে আমার দ্বন্দ্ব। তারা সঙ্গে আমার কোনো দ্বন্দ্ব নাই। আর নোবেল পুরস্কারের জন্যও আমার কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। কারণ আমার লবিস্ট রাখার মতো টাকা-পয়সাও নেই, আর আমি এটা কখনো চাই না। পার্বত্য শান্তি চুক্তি হওয়ার পর দেশ-বিদেশে অনেক লেখা হয়েছে আমি তো কখনো তদবির করতে যাইনি। কারো কাছে বলতেও যাইনি। কি পেলাম কি পেলাম না সেটা আমার মাথার মধ্যেও নেই। যিনি অর্থনীতি নিয়ে কাজ করলেন, ব্যাংকের একজন এমডি সে যখন নোবেল পুরস্কার পায়; তার সঙ্গে আমি কনটেস্ট করতে যাবো কেন।

পড়ুন: বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করবে: প্রধানমন্ত্রী

‘পৃথিবীতে যতো শান্তি চুক্তি হয়েছে খুঁজে বের করেন কয়টা চুক্তির পর অস্ত্রধারী আত্মসমর্পণ করেছে? আমি পার্বত্য শান্তি চুক্তিই শুধু করিনি তাদের ১ হাজার ৮০০ জন অস্ত্রধারী ক্যাডার আমার কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেছে। আমি তাদের সবাইকে সামাজিকভাবে ও অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসন করেছি। ৬৪ হাজার শরণার্থী ছিলো ভারতে আমি তাদের সকলকে ফিরিয়ে এনেছি। তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। পার্বত্য এলাকায় শান্তি চুক্তি করার ফলে সেখানে এখন অনেক উন্নতি হয়েছে। আগে কি অবস্থা ছিলো। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগে পার্বত্য এলাকায় কয়জন যেতে পারতেন। এখানে যদি কেউ বিদেশে আমার নামে প্রস্তাব দেয়। আমি তো ছুটে যাইনি। আমার কাছে অনেকে এসেছে আমি বলেছি আমার এসব পুরস্কার দরকার নাই। আন্তর্জাতিকভাবে এই পুরস্কার যারা পায় এখানে অবদান সেটা না, রাজনৈতিকভাবে একটা উদ্দেশ্য থাকে। কাজেই ওই পুরস্কারের মধ্যে আমার কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই।”

যারা শ্রমিক অধিকার নিয়ে কথা বলে তারা এখন চুপ কেন-সেই প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা কি শ্রমিকের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে? শ্রমিকদের ন্যায্য পাওয়া মেরে খাচ্ছে তারা তো কিছু বলেনি। আমেরিকা, ইউরোপে কেউ ট্যাক্স ফাঁকি দিলে সাথে সাথে তাকে গ্রেপ্তার করে তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে বিক্রি করে দেবে। এটাই তাদের নিয়ম। সেটা দেখে না কেন? যিনি ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে নিয়মিত। যার লিখেছেন তারা সেই অনুসন্ধানটা করুক।’

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল করতে গিয়েছে সেটাও লিখেছে। ২০০৭ সালে রাজনৈতিক দল করতে গিয়ে ব্যর্থ হলো কেন। যে যদি গ্রামের মানুষদের জন্য করে তাহলে সেই মানুষ তো তার জন্য ঝাঁপিয়ে আসার কথা। আসলো না কেন। কারণ সুদের চাপে তারা মৃতপ্রায় ছিলো। তাহলে সেই দায়িত্বও কি আমার। আমি তো তখন জেলে। সে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও প্রেসিডেন্টকে এ ডাবল প্লাস দিয়ে আসছে।

এ সময় ড. ইউনূসের বিদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসা করা টাকার উৎস কোথায়, প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে বিদেশে এতো বিনিয়োগ করেছে। কার টাকা? কিভাবে এতো টাকা আয় হলো? কিভাবে বিনিয়োগ করলো? এই প্রশ্ন কি কেউ কখনো করেছে। কাদের টাকা? সে জবাবটা দিক। একটা সরকারি চাকরি, সংবিধিবদ্ধ সংস্থায় চাকরি করে বিদেশে ব্যবসা করে..আমাদের আইন কি করে? তাকে আমরা সকলে মিলে তুলেছি এটা ঠিক। এখন সব দোষ আমার। কারণ সব থেকে বেশি যাকে আমি দিলাম সেটুকু কৃতজ্ঞতা তো থাকা উচিত। সে আসুক মাঠে। আমেরিকায় ডিবেট হয় না? চলুক কথা বলবো। সব সুযোগ তো পেয়েছে আমার হাত ধরে।

‘আমি তো তাকে প্রমোট করেছি। তার কথা হলো উপকারীকে বাঘে খাক। যাতে উপকারটা স্বীকার করতে না হয়। এখন ওনার পয়সা আছে উনি লেখাচ্ছে। নোবেলপ্রাপ্তদের যে বিবৃতিটা এটা কি। এটা তো বিজ্ঞাপন আকারে ছাপিয়েছে। উনি যদি এতোই জনপ্রিয় হবেন তাহলে বিজ্ঞাপন দিতে হবে। তার জন্য কেউ তো আমাকে কিছু বললো না।’

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা কারো সাথে জেলাসি করে না। শেখ হাসিনা জাতির পিতার মেয়ে। এখানে কেউ আসতে পারবে না। আর সেটাই আমার গর্ব। প্রধানমন্ত্রী এটা তো একটা সাময়িক ব্যাপার। আমি তো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। আমি তো দেশও বেচি না, দেশের স্বার্থও বেচি না। আমি সবসময় দেশের স্বার্থ রক্ষা করে চলি। দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং দেশের মানুষের মাথা যাতে উচু থাকে সেটাই আমার কাজ। আমি এর ওর কাছে ধর্না দিয়ে বেড়াই না।”

এ সময় ভারত সফরে তিস্তার পানি সংরক্ষণ বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, ‘তিস্তার পানি সংরক্ষণ সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিস্তা ও গঙ্গার জন্য…বিশেষ করে ২০২৬ সালে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। এটা নবায়ন না হলেও চুক্তি অব্যাহত থাকবে।’

তিস্তা চুক্তি নিয়ে মমতার সম্প্রতি দেওয়া বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, মমতা ব্যানার্জির যে চিঠি সেটা ওনার দেশের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন। এটা সম্পূর্ণ তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমার সাথে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ সব দলের সঙ্গেই আমার একটা সুসম্পর্ক আছে। তিস্তা প্রজেক্টটা কিন্ত আজকের না। যুক্তফ্রন্টের ২১ দফায় কিন্তু এটা ছিলো যে, তিস্তা প্রজেক্ট করতে হবে। এটাতে ভারত সহযোগিতা করবে। শুধু পানি ভাগাভাগির বিষয় না, পুরো তিস্তা নদীকে পুনর্জীবিত করে আমরা ওই অঞ্চলে সেচের ব্যবস্থা করা ফসল উৎপাদন করা সেটিই আমাদের লক্ষ্য।’




👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles