Thursday, June 26, 2025

‘শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে আমরা কেন ভুক্তভোগী’


উপাচার্য-শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্বের জেরে সংঘর্ষের পর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ও আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে দুটি হল খোলার রাখার ঘোষণা দিয়েছেন প্রভোস্টসহ দুজন শিক্ষক।

বুধবার (১ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরসংলগ্ন রাস্তায় মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা ক্লাস চালুর পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা হল খোলার দাবি জানান। মানববন্ধনে সংহতি জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রাধ্যক্ষ নাসির হোসাইন ও শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষক আল-আমিন হোসেন।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম আবর্তনের ফিন্যান্স আন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলাম পড়াশোনা করার জন্য, তবে কয়েক মাস যাবত বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি চলছে। কখনো শিক্ষক সমিতি ক্লাস বর্জন করছে, তো এখন আবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনিদির্ষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিচ্ছে, হল বন্ধ করার নির্দেশ দিচ্ছে। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমার প্রশ্ন শিক্ষকদের এই দ্বন্দ্বে আমরা শিক্ষার্থীরা কীভাবে দোষী? আমরা কেন ভুক্তভোগী? এখানে অনেক শিক্ষার্থী অর্থাভাবে হলে থাকে টিউশন করিয়ে নিজের আর পরিবারের ভরণপোষণ সামলায়, তারা কোথায় যাবে?

সাদিয়া আরও বলেন, ‘আমরা যে পড়াশোনায় পিছিয়ে যাচ্ছি, এর দায়ভার কে নেবে। আমি একটাই দাবি করতে চাই, আমাদের একাডেমিক কার্যক্রম চালু করা হোক, হলগুলো বন্ধ না করা হোক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫তম আবর্তনের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহমিদা সুলতানা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সার্কাস চলছে। প্রথমে প্রশাসন সিদ্ধান্ত দিল ২ মে পর্যন্ত সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে, অনলাইনে ক্লাস চলবে। প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শিক্ষক সমিতি আবার এই মগজগলা গরমে সিদ্ধান্ত দিল ২৮ এপ্রিল থেকে সশরীরে ক্লাসে ফিরবে, এর আগে তারা আবার ক্লাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বর্জন করেছিল। এখন আবার প্রশাসন আমাদের হল থেকে বের করে দিচ্ছে, অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করে দিচ্ছে। এমনিতে বেশ কিছু বিভাগ করোনার কারণে পিছিয়ে আছে, তার ওপর তাদের এ ধরনের সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষক সমিতি আর উপাচার্যের দ্বন্দ্বে আমরা বলির পাঁঠা হয়ে আছি। এ পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান আশা করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম আবর্তনের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আনাস আহমেদ বলেন, ’আজকে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা এখানে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি নিজেদের কিছু ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য। আমাদের ক্লাস, পরীক্ষা চালু করতে হবে, হলগুলো খোলা রাখতে হবে। শিক্ষকদের ওপর বহিরাগতদের হামলার তদন্ত করে সঠিক বিচার করতে হবে দোষীদের। চলমান পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান করতে হবে, অন্যথায় আমরা আমাদের কর্যক্রম চালিয়ে যাব।

শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে নাসির হোসাইন বলেন, ‘বর্তমানে চলমান সংকট সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। শিক্ষার্থীদের সংকটের মুখেই এ রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আমার মনে হয় না, এমন কিছু ঘটেছে। আর কাজী নজরুল হলে কোনো রকম অবৈধ অস্ত্র বা টাকা ঢোকেনি। আমার হল খোলা থাকবে। আমার হলের শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব আমি নিচ্ছি।

শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষক আল-আমিন বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আমার হলে কোনো প্রকার অবৈধ অস্ত্র নেই। আমার হল স্বাভাবিক আছে। আমি শিক্ষার্থীদের বলেছি, তারা তাদের মতো করে হলে থাকতে পারবে। শিক্ষার্থীদের কেউ জোরপূর্বক হল থেকে বের করতে পারবে না।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত একটি স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত। বিভিন্ন হল প্রভোস্টের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা বলেছে হল খুব সুন্দরভাবেই চলছে। আর একাডেমিক কার্যক্রম চলুক, সেটাও আমি চাই। আমি মনে করি, এই উপাচার্য একজন অদক্ষ প্রশাসক। তার পদত্যাগই সবকিছুর সমাধান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের পক্ষেই আছি। যখন কোনো একটা ছুটি হয়, তখন কিন্তু প্রতিবার একই নোটিশ যায় যে হল ছাড়তে হবে। অনেক সময় হল সিলগালা করে দেওয়া হয়; সে ক্ষেত্রে সবাইকে সেটা মানতে হবে। যেহেতু এই নোটিশে সিলগালার কথা বলা নাই, সে ক্ষেত্রে কেউ যদি বিকেল ৪টার মধ্যে হল ত্যাগ না করে—তাহলে নিশ্চয়ই হল প্রসাশন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত নেবে।

উল্লেখ্য, ২৮ এপ্রিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন নিজ কার্যালয়ে প্রবেশ করতে গেলে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠে শিক্ষক সমিতির বিরুদ্ধে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মী ও শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের মধ্যে মারামারি ও উপাচার্যের সঙ্গে শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় পরদিন ২৯ এপ্রিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে সব প্রকার প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।

এর আগে শিক্ষকদের ওপর হামলায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণ এবং হামলায় ‘মদদদানকারী’ ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীর অপসারণ, গেস্টহাউস শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য অবমুক্ত করা, পদোন্নতির জন্য আবেদন করা শিক্ষকদের অবিলম্বে পদোন্নতির ব্যবস্থা করাসহ কয়েক দফা দাবি জানিয়ে আসছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

উপাচার্য-শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্বের জেরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৩তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আজ বিকেল ৪টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছাড়ারও নির্দেশনা দেওয়া হয়।

হল ত্যাগের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের বাড়ী যাওয়ার সুবিধার্থে ঢাকা ও চট্টগ্রামের যাওয়ার জন্য বাসের ব্যবস্থা করার কথাও জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে বেলা আড়াইটায় ও সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে মোট ৪টি বাস ঢাকা ও চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়৷

বাংলাদেশ জার্নাল/টিআর




👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles