Saturday, February 22, 2025

রাজনৈতিক ‘দুধ মা’ 


‘দুধ মা’ আমাদের গল্প-সাহিত্যে এমনকি ধর্মেও একটি আলোচিত চরিত্র। দুধ মা হলেন এমন একজন মা, যিনি অন্যের শিশুকে নিজের স্তন্যপানের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত লালন-পালন করে থাকেন। বিশ্বের অনেক দেশে, অনেক জাতি গোষ্ঠীতে এর প্রচলন সুপ্রাচীন কাল থেকেই দেখা যায়। গ্রিক পুরাণ এমনকি ধর্মগ্রন্থ বাইবেল, তওরাতেও এই দুধ মায়ের কথা উল্লেখ আছে, আর ইসলাম এবং আরবের সংস্কৃতিতে এই দুধ মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। সাধারণত পারিবারিক বা সামাজিক প্রথা কিংবা শিশুর প্রয়োজনে পরিবার ‘দুধ মা’ নিযুক্ত করে থাকেন। ‘দুধ মা’ অনেক সমাজে ঐতিহ্য, আভিজাত্য ও বিত্ত বৈভবের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

ইউরোপের অনেক রাজা বাদশাহরাও ‘ওয়েট নার্স’ বা দুধ মা’র কাছে বেড়ে উঠে রাজ্য শাসন করেছে। এবার ইতিহাসের পাতা থেকে এই চরিত্রটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে হঠাৎ করেই প্রকাশ্যে এসেছে সম্পূর্ণ এক নতুন রূপে।  যার নাম ‘রাজনৈতিক দুধ মা’। 

এখানে রাজনৈতিক শিশুরা মানে কর্মীরা জন্ম নেয় এক আদর্শের ঘরে কিন্তু রাজনৈতিক প্রয়োজনে দুধ খেয়ে বেড়ে উঠে অন্য এক আদর্শের কোলে। তবে একটা পার্থক্য সুস্পষ্ট; এই ‘রাজনৈতিক দুধ মা’ নিযুক্ত হয় অনেকটা গোপনে কোনও এক রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্তে আর অন্য রাজনৈতিক দলটি  ‘দুধ মা’ হয়ে উঠে নিজের অজান্তে। বিশেষ করে গত ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পরে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধসে পড়া আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে কিছু নেতা যখন দাবি করে বসে আসলে তারা জামায়াত কিংবা শিবিরের কর্মী, তখনই আলোচনাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে কি বিগত ১৭ বছর আওয়ামী লীগ ছিল তাদের  ‘রাজনৈতিক দুধ মা’? আওয়ামী লীগ কি নিজের বুকের দুধ খাইয়ে, নিজের অজান্তেই বড় করেছে জামাতের ঔরসে জন্ম নেওয়া এই শিশুদের?   

 

শুধু যে আওয়ামী লীগই রাজনৈতিক ‘দুধ মা’ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে তা নয়, বিএনপিও যে রাজনৈতিক ‘দুধ মা’ হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, তা সহজেই অনুমেয়। অনেক গুপ্ত বাহিনী এখনও সুপ্ত অবস্থায় দুধ পান করে চলছে সুসময়ের অপেক্ষায়। এই গুপ্ত বাহিনী যে শুধুমাত্র জামায়াত শিবির তা নয়, এখানে আমরা অতীতে সুলতান মনসুরের মতো অনেক শিশুদের পেয়েছি যারা বিএনপির দুধ খেয়ে একটা নির্দিষ্ট সময়ে নিজগৃহে প্রত্যাবর্তন করেছে। তার মানে আওয়ামী লীগ কিংবা জামায়েতও অনেক সময় বিএনপিকে ‘রাজনৈতিক দুধ মা’ হিসাবে ব্যবহার করছে কিংবা করছে। 

গত ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর বিশেষ করে জামায়াত হয়ে উঠে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ‘দুধ মা’।  বিএনপিও তাদের টার্গেটে পরিণত হয়, দলটিতে কিছু নেতার ছত্রছায়ায় ঢুকে পড় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা। ওরা এখন দুধ খেয়ে বড় হবে বিএনপির কোলে। এভাবেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে গড়ে উঠেছে এক নতুন রাজনৈতিক দুধ মা’র সংস্কৃতি।  

তবে বিষয়টি যে একদম নতুন তা নয়, ১৯৭১ সালের পর জামায়াতে ইসলামীর অনেক কর্মীদের জাসদের রাজনীতিতে ঢোকে পড়ার ঘটনা তো আমাদের অনেকের জানা। ১৯৮৯ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ঐক্য ও ছাত্রশিবির সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা কবির নিহত হন এবং কবির হত্যার ঘটনায় ২২টি ছাত্র ছাত্রসংগঠন মিলে ইসলামী ছাত্র-শিবিরের রাজনীতিকে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সেই ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি অনেকটা কঠিন হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে ছাত্র শিবিরের কর্মীরা ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত ছাত্র সংঙ্গঠনগুলোকে তাদের রাজনৈতিক ‘দুধ মা’ হিসাবে ব্যবহার করে।

বিশেষ করে ছাত্রদল এবং ছাত্রলীগকে (বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত) টার্গেট করে তারা। তাছাড়া বাম সংগঠনগুলোও বাদ যায়নি তাদের নজর থেকে।  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯০ দশকে দুইবার ছাত্র শিবির দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পর যখন আক্রমণকারীদের অনেককেই ছাত্রদল, ছাত্রলীগ এমনকি ছাত্র ইউনিয়ন কিংবা মৈত্রীর কর্মী হিসাবে শনাক্ত করে, তখন থেকেই বিষয়টির গুরুত্ব আঁচ করা গিয়েছিলো। সেই সময় থেকেই ছাত্র রাজনীতিতে রাজনৈতিক দুধ মা’র প্রচলন শুরু হয়ে যায় যা এখন জাতীয় পর্যায়ে দৃশ্যমান।

প্রথাগত ‘দুধ মা’ যেমন কখনোই প্রকৃত মায়ের সম্মান অর্জন করে না, রাজনৈতিক দুধ মা’র ক্ষেত্রেও তাই। আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির দুধ খেয়ে বড় হবে, কিন্তু সেই দল প্রকৃত দলের সম্মান কখনোই অর্জন করতে পারবে না। মায়ের মতো দুধ মায়ের প্রতি রাজনৈতিক শিষ্টাচার, সৌজন্যতা, রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা আবশ্যিক নয়, অনেকটা ইসলামে ‘দুধ মা’ এর অধিকার ‘মুস্তাহাব’ মানে অতিরিক্ত ইবাদত এর মতো। মানলে মানতে পারে, না মানলেও সমস্যা নাই। সেই সব কর্মীদের কাছে পালনকারী রাজনৈতিক দল বা আদর্শগুলো মানা বাধ্যতামূলক নয়। তবে ধর্মীয় দৃষ্টির মতোই রাজনৈতিক মাতৃগৃহে প্রত্যাবর্তনের পর  রাজনৈতিক দুধ মা’র সাথে সম্পর্ক রাখাটা হলো ‘মাহরাম’ অর্থাৎ বিয়ে বা সংসার করা হারাম বা অবৈধ কিন্তু দেখা করা বা দেখা দেওয়া জায়েজ বা বৈধ। সুতরাং রাজনৈতিক আলাপচারিতা, মিটিং-মিছিল চলতেই পারে কিন্তু প্রেম-ভালোবাসা? না, একদম নিষিদ্ধ। 

লেখক: নির্মাতা ও ব্রডকাস্টার, লন্ডন 

 




👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultractivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 bdphoneonline.com
👉 dailyadvice.us

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles