Monday, July 1, 2024

যুদ্ধাপরাধী মুঈন উদ্দিনের পক্ষে ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টের অবস্থানের নিন্দা আইসিএসএফ-এর


বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে ভূমিকার জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সন্দেহাতীতভাবে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন চৌধুরী মুঈন উদ্দিন। এক দশক আগে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডপ্রাপ্ত এই মানবতাবিরোধী অপরাধী ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দফতরের বিরুদ্ধে একটি মানহানির মামলা দায়ের করেছিলেন। সম্প্রতি সেই মামলায় তার পক্ষে রায় দিয়েছে যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত। এই রায়কে ‘বিস্ময়কর ও হতাশাজনক’ বলে মন্তব্য করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ)। সংস্থাটি গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এই মামলার রায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে কিছু একতরফা ও অমূলক সমালোচনা এবং অমিমাংসিত আইনি দাবিকে ভিত্তি ধরে যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত কিছু ‘অযাচিত’ মন্তব্য করেছে এবং সাম্প্রতিক রায়টি ‘ক্ষমতাবহির্ভূতভাবে’ দেওয়া হয়েছে বলে মনে করে আইসিএসএফ।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইসিএসএফ জানিয়েছে, মানহানি মামলার মতো নিছক এক দেওয়ানি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া যুক্তরাজ্য আদালতের এই সিদ্ধান্তের কোনো ধরনেরই আইনি বাধ্যবাধকতা নেই চৌধুরী মুঈন উদ্দিনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ইতোমধ্যে দেওয়া ফৌজদারি রায়ের উপর। যুক্তরাজ্যের আদালতের এই রায়েও কোনোভাবেই তার অপরাধ থেকে অব্যাহতি পাওয়া বোঝায় না। গণহত্যাসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারহীনতার নিরসনে বাংলাদেশ ও তার নাগরিক সমাজের কয়েক দশকব্যাপী প্রচেষ্টার কেবল অবমূল্যায়নই হয়নি যুক্তরাজ্য আদালতের এই রায়ে, এসব অপরাধে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথেও একধরনের বিশ্বাসঘাতকতা হয়েছে তাদের এই রায়ের মাধ্যমে। পাশাপাশি, বিশ্বময় সংঘটিত আন্তর্জাতিক অপরাধের বিপরীতে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং ভিকটিমদের মানবাধিকার নিশ্চিতকরণে যুক্তরাজ্য বিচারবিভাগের সদিচ্ছার বিষয়েও গুরুতর সন্দেহের জন্ম দিয়েছে যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্ত।

আইসিটি-বিডি’র আইন, নিয়ম এবং বাংলাদেশে অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মুঈন উদ্দিনের বিচার পরিচালনার প্রক্রিয়া সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান ও অনুধাবন ক্ষমতা—যা যুক্তরাজ্যের আদালতগুলো বর্তমানের এই মানহানির মামলার বিচারপ্রক্রিয়ায় আয়ত্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও মনে করে আইসিএসএফ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মুঈন উদ্দিনের আইনি পক্ষ দ্বারা করা দা‌বিগুলোর সত্যতা মূল্যায়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যুক্তরাজ্যে মুঈন উদ্দিনের মামলাটি শুরু থেকেই নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে আইসিএসএফ। ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের অপরাধের বিচার প্রক্রিয়ায় সহায়তাকারী সংগঠন হিসেবে আইসিএসএফ-এর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা ও সংগঠনটির সম্মিলিত আইনি দক্ষতার নিরিখে আইসিএসএফ মনে করে—যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালতের এই একতরফা সিদ্ধান্তটি মূলত পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্তিকর, এবং বাংলাদেশে পরিচালিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মুঈন উদ্দিনের বিরুদ্ধে মূল মামলাটির আইন ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্পর্কে স্পষ্টতই অনব‌হিত। অবিশ্বাস্য যে, যেসব সুস্পষ্ট ভুলের ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেসব ভুল শনাক্তকরণ ও সংশোধন নিশ্চিত করতে এমনকি ন্যূনতম পর্যালোচনা ক্ষমতা প্রদর্শনেও উভয় পক্ষের আইনজীবী ও যুক্তরাজ্যের তিনটি স্তরের আদালতের বিচারকরা ব্যর্থ হয়েছেন।

চৌধুরী মুঈন উদ্দিন

বিশ্বজুড়ে সংঘটিত আন্তর্জাতিক অপরাধের জন্য দায়ী হাজার হাজার ব্যক্তিকে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের নিন্দনীয় ইতিহাস নিয়ে অতীতে যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বলে জানায় আইসিএসএফ। তারা বলছে, এই সাম্প্রতিক রায়ের ফলে শুধু যে এই ধরনের অপরাধীদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে যুক্তরাজ্যের নেতিবাচক ভাবমূর্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা-ই নয়, সেই উদ্বেগের কারণগুলোও নতুন করে প্রমাণিত হয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধে অভিযুক্ত ও দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি সংক্রান্ত দেশটির অভিবাসী যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াকেও এই রায়টি বিপন্ন করতে পারে বলেও আইসিএসএফ মনে করে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশি বিচারব্যবস্থায় সাজাপ্রাপ্ত সুযোগসন্ধানী ‘ফোরামসন্ধানী‌’ (ফোরাম শপার) আসামিরা, যারা – যুক্তরাজ্যের “গুটিকয়” বিচারকের অজ্ঞতা (ভিনদেশি আইন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের স্বীকৃত চর্চা উভয় ক্ষেত্র সম্পর্কে), শ্রেষ্ঠম্মন্যতা (ভিনদেশি আইন সম্পর্কে), এবং পক্ষপাতদুষ্টতা (স্বার্থসংশ্লিষ্ট ভিনদেশিদের বিরুদ্ধে) কাজে লাগিয়ে নিজেদের অপরাধ চাপা দিতে সচেষ্ট – তাদের জন্য যুক্তরাজ্যের বিচারব্যবস্থা একটি লোভনীয় ক্ষেত্র হয়ে উঠতে যাচ্ছে এই রায়ের সুদূরপ্রসারী ফলাফল হিসেবে। ‘রায় মুক্তির’ (কনভিকশন লন্ডারিং) এক উদ্বেগজনক নজির প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্যের এই রায়। 

গণহত্যা কনভেনশন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য সুপ্রিমকোর্টের এই সিদ্ধান্ত গণহত্যা ও অন্যান্য নৃশংস আন্তর্জাতিক অপরাধের প্রতিরোধ ও বিচার এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের অধিকার রক্ষার প্রতি যুক্তরাজ্যের সদিচ্ছার অভাবকে নির্দেশ করে উল্লেখ করে আইসিএসএফ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মুঈন উদ্দিনের কথিত মানবাধিকারের বিপরীতে তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগীদেরও ছিল ন্যায়বিচার লাভের অধিকার আছে। অথচ, যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্টে ভুক্তভোগীদের অধিকারের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। আইসিএসএফ মনে করে, যুক্তরাজ্যের বিচারকদের সর্বোচ্চ ব্যর্থতা এটাই। জনস্বার্থে আইসিএসএফ শিগগিরই যুক্তরাজ্য আদালতগুলোর দ্বারা উপেক্ষিত এসব ব্যর্থতা ও ত্রুটি, এবং স্বয়ং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপ্রক্রিয়ার ত্রুটিগুলোর বিশদ ব্যাখ্যাসহ এই মামলার বিস্তারিত বিশ্লেষণ প্রকাশ করতে যাচ্ছে বলেও জানানো হয়।

এই বিষয়ে শুরু থেকেই বাংলাদেশ সরকারেরও সম্পৃক্ততার অভাব ছিল অভিযোগ করে আইসিএসএফ। এটাকে ‘বিস্ময়কর’ উল্লেখ করে বলা হয়, কমনওয়েলথের সদস্য হিসেবে, প্রত্যর্পণ (এক্সট্র্যাডিশন) প্রচেষ্টাসহ কূটনৈতিক সম্পৃক্ততার সুযোগগুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো হয়নি বলে আইসিএসএফ মনে করে। ২০১৯ সালে যখন প্রথম যুক্তরাজ্যে মামলাটি উত্থাপিত হয়েছিল, তখন থেকেই কোনোপ্রকার পদক্ষেপ গ্রহণের অভাবসহ, মুঈন উদ্দিনের ওপর জারিকৃত ইন্টারপোলের রেড নোটিশটির ক্ষেত্রেও সরকারের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে।

১৯৭১ সালের গণহত্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সকল পক্ষের জন্যই বাংলাদেশ সরকারের এমন নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা হতাশা প্রকাশ করে আইসিএসএফ। ফোরামটি বলছে, বস্তুত ১৯৭১ সালের গণহত্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো, এবং নিজ দেশের গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়াকে সমুন্নত রাখা বাংলাদেশ সরকারেরই দায়িত্ব ছিল, কারণ আইসিটি-বিডি কর্তৃক প্রদত্ত রায়গুলো মূলত ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর চূড়ান্ত বিচারিক নিরূপণ নির্দেশ করে। অতএব এই বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের ধারাবাহিক ব্যর্থতাগুলো তদন্ত করা এখন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এই ব্যর্থতার স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবগুলো মূল্যায়ন করে সেসব প্রশমনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, এবং এই ধরনের ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি রোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আইসিএসএফ আহ্বান জানাচ্ছে। এই তদন্তের ফলাফল এবং গৃহীত পদক্ষেপগুলো জনসমক্ষে অবহিত করারও আহ্বান জানায় ফোরামটি।

যুক্তরাজ্য সুপ্রিম কোর্টের উল্লিখিত রায়টি উদ্বেগজনক, কারণ এর মাধ্যমে কোনও সার্বভৌম রাষ্ট্রের নিজস্ব ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধের বিষয়ে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোকে হেয় প্রতিপন্ন করার একটি ‘ন্যাক্কারজনক’ নজির স্থাপিত হয়েছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গণহত্যা ও অন্যান্য নৃশংস অপরাধে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার অস্বীকার করার পাশাপাশি, এ ধরনের রায় দণ্ডিত আসামিদের তাদের প্রতিষ্ঠিত দণ্ডগুলোকে মানহানি মামলার ছদ্মবেশে পুনরায় তুলে ধরতে উৎসাহিত করবে। এছা‍ড়াও, অন্য দেশের আইনি প্রক্রিয়ার অপব্যবহার করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ১৯৭১ বিষয়ে যারা লেখেন এবং গবেষণা করেন তাদের উপর মানহানি মামলার ভীতিসঞ্চারের মাধ্যমে প্রকাশ্য সংলাপ রোধের পাশাপাশি মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর এক অমোঘ আঘাতের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে এই রায়টি।

একাত্তরের গণহত্যা ইতিহাসের অন্ধকারতম অধ্যায়গুলোর একটি উল্লেখ করে বলা হয়, এই গণহত্যার ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে ন্যায়বিচার আদায়ের জন্য আইসিএসএফ তাদের নিরন্তর প্রচেষ্টায় অটল থাকার সদিচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করছে। যুক্তরাজ্য কর্তৃক গৃহীত এই রায়টি যত নতুন প্রতিবন্ধকতাই সৃষ্টি করুক, ন্যায়বিচার নিশ্চিতের এ লড়াইয়ের ময়দান থেকে আইসিএসএফ কখনোই সরে যাবে না। 

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ) আন্তর্জাতিক অপরাধের ভিকটিমদের পক্ষে কর্মরত বিশেষজ্ঞ এবং কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত স্বাধীন বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক, যা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে সংগঠিত জেনোসাইডের স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।




👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles