Tuesday, October 14, 2025

মানবাধিকার সুরক্ষা: সতর্কবার্তায় কান দেননি নীতিনির্ধারকরা


বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নিকট অতীতে সোচ্চার ছিল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। বিভিন্ন দেশ, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘঠিত অপরাধ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে। তবে সরকারের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারকরা এ বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহী ছিলেন না। মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একাধিকবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও অন্যান্য মেকানিজমকে শক্তিশালী করার করার জন্য সতর্ক করা হলেও তাতে কর্ণপাত করা হয়নি। এ কারণেই অন্তর্বর্তী সরকার গুম সংক্রান্ত কমিশন গঠন, গুম সংক্রান্ত কনভেনশনে আ্যক্সেশনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে।

এ বিষয়ে জেনেভায় জাতিসংঘ সদর সফতরে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি মো. সুফিউর রহমান বলেন, ‘মানবাধিকার একটি সর্বজনীন বিষয়। অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা শক্তিশালী না হলে এবং দেশীয় সংস্থার গ্রহণযোগ্যতা কম হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সুযোগ পায়। এক্ষেত্রে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে সরব ভূমিকা পালন করে। এখানে ভূ-রাজনৈতিক কারণও ভূমিকা রাখে।’

মানবাধিকার সুরক্ষা নিয়ে জেনেভার মানবাধিকার কাউন্সিল বা মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের অফিস বা মানবাধিকার ম্যান্ডেট আছে এমন সংস্থাগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তারা তাদের উদ্বেগের বিষয়টি আমাদের জানাতো এবং আমরা নিয়মিত এ বিষয়ে সরকারকে অবহিত করে এর সুরাহা করার জন্য পরামর্শ দিয়েছি। তবে দুর্ভাগ্যবশত সর্ব্বোচ্চ নীতি-নির্ধারকরা এ বিষয়ে যথেষ্ঠ আগ্রহী ছিলেন না।’

অন্যান্য দেশের গুম পরিস্থিতি

বিভিন্ন দেশেই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অথবা ননস্টেট অ্যাকটরদের মাধ্যমে জোরপূর্বক অপহরণ হয়ে থাকে এবং এ সংক্রান্ত অভিযোগের একটি তালিকা সংরক্ষণ করে থাকে জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল। ২০২২ সালে হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের ৫১তম সভায় উপস্থাপিত গুম বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে গুম বিষয়ক অপরাধের সংখ্যা ছিল ৮১। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতে এর সংখ্যা ৪৪৩, পাকিস্তানে ৭৯৯, নেপালে ৪৮০ এবং শ্রীলঙ্কায় ৬২৬৪। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ফিলিপাইনে এর সংখ্যা ৫৯০ এবং থাইল্যান্ডে ৭৫। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও চারটি গুমের অভিযোগ আছে।

স্বজনরা বার বার গুম হওয়া ব্যক্তিদের খোঁজ চাইলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বছরের পর বছর তারা কোনও সহায়তা পাচ্ছেন না (ফাইল ছবি)

এ বিষয়ে সুফিউর রহমান বলেন, ‘অভিযোগের সংখ্যার তুলনায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা অনেক বেশি। কারণ হচ্ছে, দেশটির আভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা–যেমন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বা অন্য মেকানিজমের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিশ্বাস কম।’

আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক চর্চার ঘাটতির কারণে নেতিবাচক প্রচারণা আরও বেশি হয় বলে তিনি জানান।

এই কূটনীতিক বলেন, ‘পৃথিবীতে এমন কোনও দেশ নেই যেখানে অপরাধ হয় না। কিন্তু সেটির বিচার, অপরাধীদের দায়বদ্ধতা ও অপরাধ প্রতিরোধের জন্য অভ্যন্তরীণ মেকানিজম কাজ করে, যেসবের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নির্ভর করে। ফলে ওইসব দেশে অপরাধ বেশি হলেও তাদের নিয়ে কম কথা হয়।’

বাংলাদেশে মানবাধিকার অপরাধ

জাতিসংঘ চার্টার ও সর্বজনিন মানবাধিকার ঘোষণা (ইউনিভার্সাল ডিক্লেরেশন অফ হিউম্যান রাইটস) অনুযায়ী, একজন নাগরিক বা যেকোনও ব্যক্তির মৌলিক ও অন্যান্য অধিকার আছে। বাংলাদেশের সংবিধানেও মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে অভিযোগগুলো বেশি করে সেগুলো হচ্ছে– গুম, আইন-বহির্ভূত হত্যা, মত প্রকাশে স্বাধীনতা, সমাবেশ করার স্বাধীনতা, শ্রম অধিকারসহ আরও কয়েকটি বিষয়। এই অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হয়তো এত বেশি সরব হতো না যদি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ অন্যান্য অভ্যন্তরীণ মেকানিজম তাদের ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করতো এবং আইন-প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে জবাবদিহির আওতায় রাখা হতো।

কর্মপরিধি অনুযায়ী, অভিযোগের ভিত্তিতে বা স্বপ্রণোদিত হয়ে যেকোনও ধরনের তদন্ত করার এখতিয়ার আছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের। কিন্তু গুম বা আইন-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো বড় অপরাধের ক্ষেত্রে তারা নামমাত্র ভূমিকা রেখেছে বলে রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমান জানান।

জেনেভার স্থায়ী মিশন গত দুই বছরে লিখিতভাবে একাধিবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে গুম, আইনবহির্ভূত্ হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভূমিকা নেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং নীতি-নির্ধারকরা সেটি পালনে কার্যকর ভূমিকা নেয়নি বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অভ্যন্তরীণ সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করা এবং তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির কোনও বিকল্প নেই। এর জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন।’

আরও পড়ুন- গুম কনভেনশনের যথাযথ প্রয়োগের ওপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা




👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles