Sunday, February 23, 2025

মাদক নিয়ে বিবাদে প্রাণ যায় ফয়সালের, দুই গ্যাংয়ের ১০ সদস্য গ্রেফতার


রাজধানীর মিরপুর পল্লবী থানাধীন সাড়ে ১১ নম্বর এলাকায় আধিপত্যের দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষ গ্যাং গ্রুপের হামলায় প্রাণ যায় কারচুপির (জামার ডিজাইন) কারিগর ফয়সালের। একই ঘটনায় ছুরিকাঘাতে রানা ওরফে রানু নামের অপর এক তরুণ চিকিৎসাধীন। 

এ ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও পটুয়াখালী, নেত্রকোনা জেলায় অভিযান চালিয়ে ‘কিশোর গ্যাং’ গ্রুপের ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মিরপুর বিভাগ।

গ্রেফতারকৃতরা হলো, শাহিন ওরফে নাডা শাহিন (২৪), মো. মুরাদ হোসেন (২৪), পারভেজ আহম্মেদ (২২), মো. ইয়াসিন (২০), মো. সাইফুল ইসলাম সাইমন (৩০), মো. নাসির উদ্দিন (২০), মো. হৃদয় ওমর সাফি গন্ডার (২০), মো. রাজিব মিয়া (২৫), শাহনেওয়াজ ওরফে কাল্লু (২৮) ও তানজিলা (২৩)। এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত চাপাতি, রামদা ও  ছুরি উদ্ধার করা হয়। 

শুক্রবার (২২ মার্চ) রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, পল্লবীতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় ফয়সাল নামের একজন নিহতের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়। এই ঘটনার পর আসামিরা পালিয়ে যায়। আমরা মামলার তদন্তে নেমে জানতে পারি, প্রথমে একই গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। ‘পেপার সানী গ্রুপ’ সদস্য ছিল নিহত ফয়সালও। এই গ্রুপের সদস্য নাডা শাহিন ও তার বোন তানজিলার সঙ্গে গত ১৫ মার্চ বিকালে মাদকের টাকা ভাগাভাগি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ফয়সাল ও রানা ওরফে রানুর সঙ্গে মারামারির ঘটনা ঘটে। পরে শাহিন এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে ওই এলাকায় ‘সায়মুন গ্রুপের’ রাব্বী ওরফে গালকাটা রাব্বীর সহায়তা চায়।

তিনি জানান, পরের দিন ফয়সাল ও তার বন্ধু রানা আরও দুই বন্ধুসহ রিকশায় করে পল্লবী কমিউনিটি সেন্টারে ইফতার শেষে বাসায় ফিরছিল। এসময় ‘পেপার সানী গ্রুপ’ ও ‘সায়মুন গ্রুপের’ সদস্যরা সম্মিলিতভাবে পল্লবী থানার সেকশন-১২ এলাকায় চাপাতি, তলোয়ার, রামদা, সুইস গিয়ার চাকু নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায় এবং এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে।

পরে স্বজনরা ফয়সালকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। তার বন্ধু রানা ওরফে রানু আশঙ্কাজনক অবস্থায় এখনও চিকিৎসাধীন। 

এ ঘটনায় নিহত ফয়সালের বাবা শাহাদাত হোসেন পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মহানগর ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, ‘এই ঘটনায় আমরা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যায় জড়িত ১০ জনকে গ্রেফতার করেছি। জড়িত অন্যদের গ্রেফতারেও অভিযান চলছে।’

তিনি আরও জানান, মিরপুর এলাকায় কিশোর গ্যাং সদস্যরা প্রায়ই মাদক ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটায়। একই ঘটনা উত্তরাতেও ঘটেছে। উত্তরা এলাকায় বেশ কিছু ‘বড় ভাইদের’ নাম পেয়েছে ডিবি পুলিশ, যারা কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এছাড়া মিরপুর ও উত্তরার পাশাপাশি মোহাম্মদপুরেও বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে উল্লেখ করে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘রাজধানীর কোনও এলাকায় বড় ভাইদের বিস্তার করতে দেওয়া হবে না। কোনও বড় ভাইয়ের নামে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হবে না। আমাদের গোয়েন্দা পুলিশের প্রত্যেকটি টিম রাজধানীর প্রত্যেক এলাকায় কাজ করছে।’

ফয়সাল হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযানে নেতৃত্ব দেন ডিবির মিরপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) রাশেদ হাসান। তিনি বলেন, ‘পল্লবী এলাকায় একাধিক কিশোর গ্যাং সক্রিয় আছে। এই ঘটনা ছাড়া অতীতেও কিশোর গ্যাং সদস্যরা বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়েছে। জড়িতদের ধরতে আমাদের ধারাবাহিক অভিযান চলছে।’



Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles