দেশে সংগীতের অনেক সংগঠন আছে বটে, কিন্তু প্রয়াত শিল্পীর স্মরণে কিছু একটা করার প্রবণতা নেই বললেই চলে। যেমন আজম খান। মুক্তিযুদ্ধ বাদ দিন, বাংলা পপ গানের সর্বোচ্চ বিলবোর্ড তিনি। অথচ তার জন্ম আর মৃত্যুদিনগুলো বেশিরভাগই কাটে সংগীত কর্তা ও সংগঠনের উদাসীনতায়। যেটুকু মনে রাখার, সেটুকু ওই ফেসবুকেই ভাসে আমজনতার সুবাদে।
আজম খান প্রস্থানের ১৩ বছর হলো। ২০১১ সালের এই দিনটাতে (৫ জুন) ক্যানসারে কাটা পড়ে পপসম্রাটের জীবন। আশার কথা ১৩ বছর পর হলেও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজম খান স্মরণে দারুণ একটি কনসার্টের আয়োজন হচ্ছে। যাতে অন্য অনেকের পাশাপাশি মূলত গাইবেন আজম খানের ভাতিজা সংগীতশিল্পী আরমান খান।
এ প্রজন্মের শ্রোতাদের অবগতির খাতিরে এখানেই বলে রাখা ভালো, আজম খানের বড় ভাই কিংবদন্তি সংগীত পরিচালক আলম খান। তারই সুযোগ্য পুত্র সংগীত পরিচালক ও কণ্ঠশিল্পী আরমান খান।
আজম খানের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী (৫ জুন) উপলক্ষে ৬ জুন আয়োজিত এই কনসার্টের নাম ‘গুরু অব রক: অ্যা ট্রিবিউট টু আজম খান’। কনসার্টটি অনুষ্ঠিত হবে কারওয়ান বাজারের ঢাকা ট্রেড সেন্টার অডিটোরিয়ামে। আয়োজন করেছে দ্য অ্যাটেনশন নেটওয়ার্ক। এই আয়োজনে আরমান খান ছাড়াও আজম খানের গান গেয়ে শোনাবেন উদীয়মান বেশ কজন শিল্পী।
আয়োজকরা জানান, ৬ জুন কনসার্ট শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়। টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০০ টাকা। টিকিট পাওয়া যাচ্ছে এই লিংক-এ।
আজম খান স্মরণে এমন কনসার্ট আয়োজন প্রসঙ্গে ভাতিজা আরমান খানের প্রতিক্রিয়া এমন, ‘আজম খানের মতো কিংবদন্তিকে ট্রিবিউট করে এখন আর কোনও শো হয় না। সেই অভিমান বুকে চেপে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমাদের এই আয়োজন। এই অনুষ্ঠানে আমার তিন কাজিন, মানে চাচার দুই মেয়ে ইমা ও অরনী এবং ছেলে হৃদয় খান উপস্থিত থাকবে। এতে আমি ও আমার ব্যান্ড কোনও পারিশ্রমিক নিচ্ছি না। বরং, অনুষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটা অংশ আমরা চাচাতো ভাই-বোনদের হাতে তুলে দিতে চাই।’
কনসার্টে চাচার কোন কোন গান পরিবেশন করবেন ভাতিজা, জানতে চাইলে আরমান খান বলেন, ‘‘চাচার জনপ্রিয় গানের তো শেষ নাই। এরমধ্যে আসি আসি বলে, পাপড়ি কেন বোঝে না, সালেকা-মালেকা, আলাল ও দুলাল, বাংলাদেশ, অভিমানীসহ ১২ থেকে ১৫টি গান করার পরিকল্পনা আছে। আমার লেখা ও সুরে আজম চাচা গান করেছেন। সেখান থেকেও গাওয়ার ইচ্ছা আছে। এ ছাড়া কয়েক দিন আগে চাচাকে ট্রিবিউট করে ‘গুরুরে’ নামের একটি গান প্রকাশ করেছি। সেটিও গাইবো।’’
ফিরে দেখা
রাজধানীর মূল জৌলুস তখন পুরান ঢাকায়। সেই পুরান ঢাকার আজিমপুরে ১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তার জন্ম। অবশ্য ছয় বছর বয়সে চলে যেতে হয় কমলাপুরে। ফলে সেখানেই বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা। পারিবারিক আবহে গানের চর্চাটা ছিল। তাই তিনিও টুকটাক গান করতেন। কিন্তু তখনও সংগীত নিয়ে ভাবেননি কিংবা ভাবার বয়সও ছিল না। তবে গণসংগীত তাকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করতো। তাই স্কুল জীবনেই প্রতিবাদের সুর কণ্ঠে তুলে নেন।
দেশে তখন স্বাধীনতা যুদ্ধের অঙ্কুরোদগম হচ্ছে ধীরে ধীরে। পাকিস্তানি শাসকেরা যে দেশের মানুষকে ঠকাচ্ছে, নানা দিক থেকে বঞ্চিত করছে, এসব বুঝতে পারেন তিনি। সেই সূত্রেই মনের ভেতর বিপ্লবী সত্তার জন্ম হয়। গণসংগীতের দল ‘ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীর কথা শুনতে পান। এরপর তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গাইতে থাকেন গণসংগীত। প্রথমে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা, অতঃপর ঢাকার আশপাশেও প্রতিবাদ আর অধিকারের সুর নিয়ে ছুটে যান।
তখন তিনি একুশের টগবগে তরুণ। নানা ধাপ পেরিয়ে শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। দেশ স্বাধীনের এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইলেন না। অদম্য সাহস বুকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন, যুদ্ধে যাবেন। ভয়ে ভয়ে বাবাকে কথাটা জানালেন। বাবা তাকে আদেশ দেন, ‘যুদ্ধে যাবি যা, কিন্তু দেশ স্বাধীন করে তবে ঘরে ফিরবি’। বাবার সেই কথা অক্ষুণ্ণ রেখেছিলেন তিনি। ট্রেনিং নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। সেকশন কমান্ডার হয়ে সম্মুখ যুদ্ধে যেমন ছিলেন, তেমনি গেরিলা যুদ্ধেও বীরের ভূমিকা পালন করেছেন। এর ফাঁকে ক্যাম্পে ক্যাম্পে গান গেয়ে সহযোদ্ধা ও মানুষকে উৎসাহ দেয়ার কাজটিও বাদ রাখেননি।
দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হলো। চারদিকে বয়ে এলো স্বস্তির বাতাস। তখন তার মনে প্রশ্ন এলো, এবার কী করবেন? ভেবেচিন্তে দেখলেন, গানটাই তার আয়ত্তে আছে। এদিকেই মনোযোগ দেওয়া যাক।
গানের চর্চা থাকায় আন্তর্জাতিক ব্যান্ড মিউজিকের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে ছোটবেলাতেই। ‘বিটলস’, ‘দ্য শ্যাডোজ’ কিংবা ‘রোলিং স্টোন’র গান শুনে পশ্চিমা মিউজিকে আগ্রহ জন্মায়। তবে নিজেকে ঠিক পশ্চিমাদের অনুকরণ করলেন না। সেই আবহে একটা দেশী রূপ দেওয়ার চেষ্টা করলেন। সরল কথা-সুরে বাঁধতে শুরু করলেন গান। পপ ঘরানার সেসব গান তখন এই তল্লাটে একেবারে অচেনা। তিনি পথিকৃৎ হয়ে চেনালেন, জনপ্রিয় করে তুললেন। এ জন্য সবাই তাকে ‘পপগুরু’ বলে অভিহিত করেন।
১৯৭২ সালে বন্ধুদের নিয়ে ‘উচ্চারণ’ নামে একটি ব্যান্ড গঠন করেন তিনি। একই বছর বিটিভিতে গান গাওয়ার সুযোগ পান। সেখানে ‘এত সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ ও ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দুটি গেয়ে দেশজুড়ে তুমুল জনপ্রিয়তা পান। ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষ নিয়ে তিনি সৃষ্টি করলেন কালজয়ী গান ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’। যা এখনও মানুষের মুখে মুখে।
পরবর্তী সময়ে আরও বহু গানে শ্রোতাদের মনে ঝড় তুলেছিলেন তিনি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- ‘আমি যারে চাই রে’, ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘একসিডেন্ট’, ‘অনামিকা’, ‘অভিমানী’, ‘আসি আসি বলে’, ‘হাইকোর্টের মাজারে’, ‘পাপড়ি’, ‘বাধা দিও না’, ‘যে মেয়ে চোখে দেখে না’ ইত্যাদি।
শুধু গান নয়, তিনি অভিনয় ও মডেলিংও করেছেন। ১৯৮৬ সালে ‘কালা বাউল’ নামে হিরামনের একটি নাটকে কালা বাউলের চরিত্রে এবং ২০০৩ সালে শাহীন-সুমন পরিচালিত ‘গডফাদার’ চলচ্চিত্রের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। এছাড়া কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হিসেবেও তাকে দেখা গেছে।
সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক দেওয়া হয়। যদিও এর ৭ বছর আগেই, ২০১১ সালের ৫ জুন তিনি চলে যান না ফেরার দেশে।
আজম খানের আসল নাম মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান। সংগীতের চিরোজ্জ্বল ও রঙিন ইতিহাস সৃষ্টি করে সাদামাটা সরল এক জীবন কাটিয়ে যাওয়া এই কিংবদন্তির প্রতি শ্রদ্ধা।
👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com