বর্ষার শুরুর আগেই ভারী বৃষ্টি ও উজানের পানিতে প্লাবিত হয় দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বেশ কিছু জেলা। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সারা দেশেই বৃষ্টি শুরু হলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। এখন দেশের ৯টি জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা প্লাবিত। বর্ষার আরও এক মাস বাকি আছে, ভারী বৃষ্টিতে এই পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নিতে বেসামরিক প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরে অনেকটাই নড়েচড়ে বসেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনকে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে সমন্বিতভাবে আগাম বন্যা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২ জুলাই) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সভায় প্রধানমন্ত্রী বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুতির নির্দেশ দেন।
আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, টানা বৃষ্টিপাতের কারণে আগস্টে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে কিছু এলাকায়। ইতোমধ্যেই সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, জামালপুরসহ হাওর এলাকায় বন্যার পানি বাড়ছে। এসব এলাকার নদনদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতি বেশ অনেকদিন থাকবে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, এ মুহূর্তে দেশের ৯টি জেলা বন্যাকবলিত। সপ্তাহের শুরুতে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার, শেরপুর – এই পাঁচটি জেলা বানের পানিতে প্লাবিত হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হবিগঞ্জ ও ফেনী জেলা। এ দুটি জেলার নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে বন্যায় আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে শেরপুর, হবিগঞ্জ ও ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বন্যার নতুন তালিকায় যুক্ত হয়েছে উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও জামালপুর। এগুলো মূলত ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা অববাহিকার জনপদ।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর মোট আটটি স্থানে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়সহ তিস্তার ক্যাচমেন্ট এরিয়ায় (অববাহিকা) ব্যাপক বৃষ্টি হবে যা অস্থায়ীভাবে তৈরি হওয়া জলাবদ্ধতার মেয়াদ বাড়িয়ে দিতে পারে। এর ফলে সৃষ্টি হবে বন্যার।
এদিকে বন্যা মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যেই যেসব জেলা বন্যাকবলিত রয়েছে এবং যেসব এলাকায় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে এমন জেলাগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেসব জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে দেওয়া নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- জেলা প্রশাসকদের স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিদেরকে সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে; উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরও সংযুক্ত করতে হবে; বন্যার্ত মানুষের কাছে দ্রুত জরুরি খাদ্য সংকট মোকাবিলায় শুকনো খাবারের প্যাকেট পৌঁছে দিতে হবে।
এছাড়া জরুরি কাজ সামাল দিতে নগদ টাকা (জিআর) বরাদ্দ বাড়িয়ে ডিসিদের কাছে রাখা হয়েছে। জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রগুলো (সাইক্লোন সেল্টার) সংস্কারসহ পরিষ্কার করে রাখতে বলা হয়েছে। অনেকেই নিজেদের গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি রেখে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চায় না, সে কারণে গবাদিপশু রাখার জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরপরই আমরা সব জেলা প্রশাসকদের এ বিষয়ে অবগত করেছি। আমি নিজে ডিসিদের সঙ্গে কথা বলছি। খোঁজখবর রাখছি। প্রতিদিন তাদের কাজের মনিটর করছি। এ সপ্তাহেই পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে একটি সমন্বয় সভা করবো। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে থাকা বেড়িবাঁধগুলোর সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হয়ে যদি কোনও বাঁধ নতুন করে নির্মাণ, পুনঃনির্মাণ বা সংস্কার করতে হয় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি জানিয়েছেন, দেশের অধিকাংশ সাইক্লোন শেল্টার হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে এগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কাজে ব্যবহার করা হয়। দুর্যোগের সময় সেগুলো আবার আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। এ ছাড়াও সচিবালয়ে স্থাপিত বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র ২৪ ঘণ্টাই খোলা রয়েছে।
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. নূর কুতুবুল আলম বাংলা ট্রিবিউনে জানিয়েছেন, সাগরবেষ্টিত এ জেলায় সব সময়ই আগাম বন্যা-জলোচ্ছ্বাস মেকাবিলার প্রস্ততি থাকে। এবারও এর ব্যাতিক্রম নয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশমতো পরিকল্পনা গ্রহণ করছি। আমরা সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, এমনিতেই সিলেট জেলা এখন বন্যাকবলিত। আমরা সেই বন্যা মোকাবিলায় কাজ করছি। আগামীতে যে কোনও পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলার সবাইকে নিয়ে কাজ করব। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেয়েছি। সেভাবেই এগুচ্ছি।
রংপুরের জেল প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে সবাইকে নিয়ে সমন্বয় সভা করে পরবর্তী করণীয় চূড়ান্ত করা হবে। টাকা, শুকনো খাবার প্যাকেটসহ অন্যান্য সরঞ্জাম রেডি রাখা আছে। সাইক্লোন শেল্টারগুলো তৈরি আছে। চরাঞ্চলের জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় মানুষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com